বস্তি উন্নয়নের টাকা নিয়ম বহির্ভূত ভাবে পার্ক তৈরিতে খরচ করার অভিযোগ উঠেছে আসানসোল পুরসভার বিরুদ্ধে। রাজ্য সরকারের লোকাল অডিট দফতরের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের একটি রিপোর্টে এমনই জানা গিয়েছে। পুরসভার মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বেনিয়মের অভিযোগ মানতে চাননি।
রাজ্য সরকারের লোকাল অডিট দফতরের সহকারি অডিট অফিসার তপন মারিক একটি রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, শহর এলাকায় দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী বাসিন্দাদের উন্নতির জন্য বিএসইউপি প্রকল্পের টাকা খরচ করার কথা। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, এই সব অঞ্চলে গরিবদের জন্য বাড়ি নির্মাণ ও ন্যূনতম পরিষেবা সংক্রান্ত অন্য খাতে এই টাকা খরচ করার কথা। কিন্তু গত ১২ ডিসেম্বর বিএসইউপি প্রকল্পে বিভিন্ন কাজ ও হিসেবপত্র পরীক্ষা করে দেখা দেখা গিয়েছে, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের টাকা থেকে প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা নিয়ম বহির্ভূত ভাবে এই সবের বাইরে অন্য খাতে খরচ করা হয়েছে। বস্তি অঞ্চলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, এমন কিছু ওয়ার্ডে এই টাকায় পাঁচটি পার্ক গড়া হয়েছে। এমনকী পার্কগুলি গড়ার কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারদের বিলও মেটানো হয়ে গিয়েছে। |
বস্তি উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বিএসইউপি প্রকল্পের টাকায় এ ভাবে পার্ক গড়ার জন্য পুর কর্তৃপক্ষের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিরোধী বামফ্রন্ট কাউন্সিলররা। বিরোধী নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায়ের দাবি, “আমরা আগেই বলেছিলাম, এ রকম সব বেনিয়ম হবে। গরিব মানুষের টাকা নিয়ে ওঁরা ছেলেখেলা করছেন।” বিএসইউপি-র টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান। সেই টাকা নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বিরক্ত কংগ্রেস। কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম বলেন, “আমরা অনেক বার বলেছি, বস্তি উন্নয়নের টাকা অন্য খাতে খরচ করা যাবে না। অডিটে এমন বেনিয়ম ধরা পড়ায় আমরাও বিস্মিত।” বিরোধী নেতা তাপসবাবুর দাবি, তাঁরা এ বিষয়ে পুরসভার অধিবেশনে জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যাখা দেননি।
আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বস্তি উন্নয়নের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা দাবি, “ওই টাকা বস্তি এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্যই খরচ করা হয়েছে।” তা হলে অডিট রিপোর্টে পার্কগুলির উল্লেখ করে অভিযোগ করা হয়েছে কেন? তাপসবাবু বলেন, “বেনিয়ম হয়নি। এলাকায় গেলেই বোঝা যাবে।”
মেয়রের পরামর্শ মতো এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তাল পুকুড়িয়া এলাকায় একটি ব্যক্তিগত জায়গায় পার্ক হয়েছে। অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, এর জন্য খরচ হয়েছে ১৭ লক্ষ টাকা। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে জি টি রোডের সরকারি জায়গায় প্রায় দেড় লক্ষ টাকায় পার্ক হয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চেলিডাঙায় শিব মন্দির ট্রাস্ট কমিটির জমিতে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকায় পার্ক গড়া হয়েছে। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ডিপোপাড়ায় একটি বিতর্কিত জমিতে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি পার্ক অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। মহিশীলা কলোনির এক জমিতে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকায় পার্ক তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই অঞ্চলগুলির কোনওটিই বস্তি এলাকা নয়। বিরোধী দলনেতা তাপস রায়ের মন্তব্য, “আশা করি সাধারণ মানুষ এ বার বিচার করবেন।” |