সিপিএম কর্মী সাগর মেটে (৩৬) খুনের ঘটনায় শনিবার তৃণমূলের সাত জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করলেন নিহতের বাবা চরণ মেটে। শুক্রবার বীরভূমের নানুরের বঙ্গছত্র এলাকায় বাজার থেকে ফেরার পথে ওই সিপিএম কর্মীকে বাস থেকে নামিয়ে পিটিয়ে মারা হয়। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। জেলার পুুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “দু’জনকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের সন্ধানে তল্লাশি চলছে। খুনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
|
সাগর মেটে |
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ, রবিবার ১২ ঘণ্টা নানুর বন্ধের ডাক দিয়েছে সিপিএম। এ দিন সন্ধ্যায় ওই বন্ধের সমর্থনে এলাকায় মিছিলও করে তারা। পক্ষান্তরে বন্ধের বিরোধিতায় পাল্টা মিছিল করে তৃণমূলও। সব মিলিয়ে এলাকা থমথমে।
২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই নানুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘর্ষ শুরু হয়। সিপিএমের অভিযোগ, ওই সময় থেকেই তাঁদের অনেক দলীয় কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া রয়েছেন। পরিবার সূত্রের খবর, জলুন্দি গ্রামের সাগর মেটেও লোকসভা নির্বাচনের পরেই সপরিবারে গ্রাম ছাড়েন। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে তিনি নানুরেরই কুলে গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে ঠাঁই নেন। তাঁর বাবা-মা চলে যান দুর্গাপুরে।
সাগরবাবু পেশায় দিনমজুর। এ দিন সকালে কুলে গ্রামে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সাগরবাবুর বাবা-মা ফিরেছেন। নিহতের ছেলে সাহেব তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। ১৩ বছরের মেয়ে পূজা অবশ্য পড়াশোনা করে না। শুক্রবার বিকেল ৫টা নাগাদ ছেলের জন্য বই ও মেয়ের জামা কিনতে বাজারে গিয়েছিলেন সাগরবাবু। তাঁর শ্বশুর ভক্তি মাঝি বলেন, “লোকমুখে খবর পাই, বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় তিনটি মোটরবাইকে ছ’জন দুষ্কৃতী জামাইকে বাস থেকে নামিয়ে তুলে নিয়ে যায়। পড়শিদের সঙ্গে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। বঙ্গছত্র এবং জলুন্দি গ্রামের মাঝে কাঁদরের পাশে সাগর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল। বোলপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই ও মারা যায়।” কুলে গ্রামে সাগরবাবুর দেহ ফিরিয়ে আনা হয়। খবর পেয়ে রাতে পুলিশ এসে দেহটি নিয়ে যায়। পরে তা ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়। সাগরের বাবা চরণবাবু বলেন, “দুর্গাপুরে যাওয়ার আগে ছেলে-বৌমাকে সঙ্গে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু ছেলে এই এলাকার মায়া কাটাতে পারেনি।” তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ছেলেকে খুন করেছে।” পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের সারা দেহে অনেক ক্ষত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, লাঠি ও রডের আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। |
সিপিএমের নানুর জোনাল কমিটির সম্পাদক হাসিবুর রহমানের অভিযোগ, “তৃণমূলের সন্ত্রাসে জলুন্দি গ্রামের ৮০টি পরিবার ঘরছাড়া। সাগর আমাদের দলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। সংগঠন বাড়ানোর কাজ করার পাশাপাশি, বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশ নিতেন। গ্রামে ফেরার জন্য তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁর কাছে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা চেয়েছিল। সাগরের পক্ষে ওই টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই তাঁকে ওরা পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে।” তবে সাগরবাবুর পরিবারের কেউ অবশ্য ওই ‘জরিমানার’ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। দলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষ বলেন, “কোনও ঘরছাড়াকে গ্রামে ফিরতে দেওয়ার জন্য জরিমানা চাওয়ার প্রশ্ন নেই। ওই হত্যাকাণ্ডে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।”
নিহতের স্ত্রী উজ্জ্বলা মেটে এ দিন কোনও মতে বলেন, “স্বামীর কাছে ছেলেটা ছড়া-ছবির বই আর মেয়ে রঙিন জামা চেয়েছিল। বাবার বাড়ি ফেরার জন্য ওরা অপেক্ষা করছিল। কিন্তু ওদের সেই আবদার আর কেউ রাখবে না।” |