স্কুলে যায়নি ছাত্র। স্কুল শেষ হওয়ার পরে শিক্ষকেরাই চলে এলেন তাঁর বাড়ি। শুধু সেই ছাত্রই নয়, তার বাবা-মা’কেও দেখালেন একটা মুক্তির স্বপ্ন।
মুর্শিদাবাদের সাদিখাঁড়দিয়াড় বিদ্যানিকেতনের এক ছাত্রের বাবা সালাউদ্দিন মোল্লা বললেন, “পড়াশোনা শিখলে দারিদ্র, অশিক্ষা থেকে মুক্তি মিলবে। এই কথাটাই ওই স্কুলের শিক্ষকেরা আমাকে বাড়িতে এসে বলে গিয়েছেন। ছেলেকে নিয়ে সেই স্বপ্নই তো আমি দেখি। এই জীবন থেকে মুক্তির স্বপ্ন।” সালাউদ্দিন তাই এখন প্রতিদিন নজর রাখেন, ছেলে মহিউদ্দিন যেন রোজ স্কুল যায়।
জলঙ্গির প্রায় কুড়িটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা যায় ওই স্কুলে পড়তে। শিক্ষকেরা রোজ নজর রাখেন, কে কামাই করছে, কার পড়াশোনায় মন নেই, কে ভাল করছে। সেই মতো স্কুলের পরে তাঁরা নিজেরাই এক এক দিন এক এক দিকে যান। ছাত্রছাত্রীর বাবা-মা’র সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। মাসখানেক ধরে নিয়মিত এই কাজের পরে এখন তাঁরা গ্রামের কোনও পাড়ায় এসেছেন খবর পেলেই অভিভাবকেরা নিজেরা দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন। |
গ্রামে শিক্ষকদের ঘিরে অভিভাবকদের সভা। ছবি-বিশ্বজিৎ রাউত |
কখনও শিক্ষকেরা গ্রামে গেলে তাঁদের ঘিরে সভাই বসে যায়। স্কুলের শিক্ষক সন্দীপ পাল বলেন, “প্রথম প্রথম অভিভাবকেরা বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের মা’রা কথাই বলতে চাইতেন না। এখন তাঁরাই আমাদের সঙ্গে বেশি কথা বলেন।” আর এক শিক্ষক নবেন্দু সরকার বলেন, “গ্রামের মানুষ বুঝতে পেরেছেন, আমরা তাঁদের ভালই চাই। তাঁরাও তাই সহযোগিতা করছেন।” স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক আনোয়ার কবির বলেন, “এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে। তবে সব থেকে আনন্দের কথা হল, শিক্ষকদের এই উদ্যোগে অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের উপরে এখন অনেক বেশি করে নজর রাখছেন। আগে ছেলে স্কুলে না গিয়ে খেলতে চলে গেলে বাড়িতে কিছু বলা হত না। এখন নজর রাখা হয়, সে সত্যি স্কুলে যাচ্ছে কি না।”
কিন্তু কেন ছুটির পরেও ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন এই শিক্ষকেরা? আনোয়ার কবিরের কথায়, “এই শিক্ষকেরা একেবারেই নবীন প্রজন্ম। স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা দিয়ে সদ্য সদ্য স্কুলে এসেছেন। তাঁরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করতে।” এই শিক্ষকদের অনেকেরই বাড়ি দূরে। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি বহরমপুরে, সন্দীপবাবু করিমপুরের ছেলে। কিন্তু রোজ গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফিরতে দেরি হচ্ছিল বলে তাঁরা এখন থাকছেন স্কুলের আবাসনেই। সঞ্জীববাবুর কথায়, “এক সময়ের ঐতিহ্যশালী স্কুল সাদিখাঁরদিয়াড় বিদ্যানিকেতন। জেলার প্রথম সারির স্কুলগুলির মধ্যে জায়গা ছিল তার। সেই স্কুল নানা কারণে গৌরব হারিয়েছে। আমরা চাইছি সেই পুরানো গৌরবকে কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে।”
তাই স্কুলের পাশের গ্রাম নওদাপাড়ার বধূ কল্পনা বিবি নিজেই এখন ঘোমটা টেনে শিক্ষকদের কাছে চলে যান। তাঁর ছেলে দেলওয়ার হোসেন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। শিক্ষকদের বলেন, “ছেলেকে রোজ স্কুলে পাঠাচ্ছি, কিন্তু তার পড়াশোনা তো কিছুই বুঝি না। কী করব?” সঞ্জীববাবু তাঁকে পরামর্শ দেন, “পড়াশোনা ঠিক করছে কি না, তা আমরাই পরীক্ষা করে দেখে নেব। আপনি দেখবেন, যাতে ও বাড়িতেও ঠিক সময়ে পড়তে বসে।” অভিভাবক আমজাদ হোসেন প্রস্তাব দিয়েছেন, সব ছাত্রছাত্রীর জন্য আলাদা আলাদা নোটবুক করা হোক। খরচ অভিভাবকেরাই দেবে। শিক্ষকেরা তাতে প্রতিদিন লিখে দেবেন ছেলেমেয়েদের ত্রুটি কোথায় এবং অভিভাবকদেরই বা কী করণীয়? ডোমকল ও জলঙ্গিতে খাতায়-কলমে সাক্ষরতার হার প্রায় ৬০%। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াকে পড়াতে পারবেন, এমন অভিভাবকের সংখ্যা মাত্রই ৩০%। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র কুপিলার সামসুদ্দিন বিশ্বাসের কথায়, “এলাকার লোকজনই এক কালে চাঁদা তুলে স্কুল তৈরি করেন। স্কুল ছিল তাঁদের স্বপ্ন। নতুন শিক্ষকদের উদ্যোগে সেই স্কুল পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পেলে মানুষ কৃতজ্ঞ থাকবেন তাঁদের কাছে।” |
ফরাক্কার সব গেট বদলের সিদ্ধান্ত
নিজস্ব সংবাদদাতা • রঘুনাথগঞ্জ
|
ফরাক্কা ব্যারেজে স্লুইস গেট সরেজমিনে দেখতে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী পবন বনশলের সঙ্গে রাজ্যের
বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনীশ গুপ্ত ও সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। শনিবার ছবিটি তুলেছেন অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়। |
পাঁচ বছরের মধ্যে ফরাক্কা ব্যারেজের সমস্ত স্লুইস গেট বদলের কথা জানালেন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী পবন বনশল। শনিবার রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনীশ গুপ্ত ও সেচ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে নিয়ে ব্যারেজের ভেঙে যাওয়া গেটগুলির মেরামতির কাজ পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা জানান। তিনি বলেন, “ব্যারেজের দু’টি গেট ভেঙে যাওয়ার ঘটনা নেহাতই দুর্ঘটনা বলেই মনে হয়। ঘটনাটির বিষয়ে জল কমিশনের কাছে রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তবে ১৯৭৫ সালে ফরাক্কা ব্যারেজটি তৈরি হয়েছে। গেটগুলির অবস্থাও খুব ভালো নয়। তাই ঠিক হয়েছে সমস্ত গেটই নতুন ভাবে বদলে দেওয়া হবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে।” বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনীশ গুপ্ত অবশ্য তাঁর সামনেই ফিডার ক্যানেলে জলস্তর নেমে যাওয়ায় ফরাক্কা ও সাগরদিঘিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার অভিযোগ জানান। ফরাক্কার ১৩ ও ১৬ নম্বর গেট দুটির একটি গত জুন মাসে অন্যটি ডিসেম্বর মাসে ভেঙে যায়। |