উন্নয়নের অভাব ছিল চিরকালই। কিন্তু সুন্দরবনের সেই অভাবজনিত দুর্ভোগ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তন। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সাগরের জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে ঘনঘন, বৃষ্টিপাতের ধরন যাচ্ছে বদলে। এমনকী বদলে যাচ্ছে মাটির চরিত্রও। এ সবের সঙ্গেই রয়েছে অনুন্নয়ন। ফলে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই আরও কঠিন হচ্ছে বলে দিল্লির একটি পরিবেশ সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে।
সুন্দরবনে সমীক্ষা চালিয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন এবং অনুন্নয়নের মুখে স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগের কথা তাদের রিপোর্টে বিস্তারিত আলোচনা করেছে দিল্লির সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই)। সংস্থাটির বক্তব্য, সুন্দরবনের মানুষের প্রাত্যহিক দুর্ভোগে জলবায়ুর পরিবর্তনের ভূমিকা এবং তার জেরে পরিবেশ কতটা বদলাচ্ছে, তা ঠিক মতো না জেনে এই অঞ্চলের উন্নয়নের পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। এমনকী বাঁধ তৈরির প্রকল্প রূপায়নের সময়েও বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে বলে তাদের অভিমত।
বুধবার প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে: • সুন্দরবনে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রতি দশকে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বাড়ছে। অথচ এই বিষয়টির আন্তর্জাতিক গড় ০.০৬ ডিগ্রি। • গত ২৫ বছরে সুন্দরবনে জলস্তর বেড়েছে আন্তর্জাতিক গড়ের দ্বিগুণ। • এই অঞ্চলের বৃষ্টিপাতও এখন হয়ে পড়েছে ভীষণ রকম বিক্ষিপ্ত এবং তার তীব্রতাও অনেক বেড়েছে। • বঙ্গোপসাগরের ওপর ঘূর্ণাবর্ত ১২০ বছরে ২৬ শতাংশ বেড়েছে। |
সুন্দরবন যেমন দেশের সবচেয়ে অনুন্নত অঞ্চলগুলির অন্যতম, তেমনই সেখানকার জনসংখ্যার ঘনত্বও জাতীয় গড়ের চার গুণ বেশি। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় এক হাজার মানুষ বাস করেন। প্রতি দশকে সুন্দরবনের জনসংখ্যা বাড়ছে ১৮ শতাংশ করে।
সুন্দরবনের অর্থনীতির ৭৮ শতাংশ এবং স্থানীয় মানুষের ৬৫ শতাংশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। অথচ সেখানকার ৮৫ শতাংশ চাষি হয় ক্ষুদ্র অথবা প্রান্তিক। কৃষি-শ্রমিকদের মাথাপিছু চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে মাত্র ০.৫ হেক্টরে। ফলে যথেষ্ট আয়
হচ্ছে না তাঁদের। এ দিকে, সুন্দরবনে মাছ ধরা এবং মধু সংগ্রহও কমে গিয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য নদী ও খাঁড়ির জলে মাছের পরিমাণ কমেছে। এই সব কারণে সুন্দরবনের মানুষ দু’বেলার খাবারের সংস্থান করতে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
রিপোর্ট জানাচ্ছে, জলস্তর বৃদ্ধি এবং ভাঙনের জন্য গত ৮০ বছরে ২৫০ বর্গ কিলোমিটার জমি হারিয়েছে সুন্দরবন। গত এক দশকে ভূমিক্ষয়ের হার দ্বিগুণ হয়েছে। কেবল ভূমিক্ষয় নয়, অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যা এবং ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অসংখ্য
ইটভাটাকে জায়গা করে দিতে সুন্দরবনে কৃষিজমির পরিমাণ দ্রুত কমেছে। তা ছাড়া নদীর জলে লবণের ভাগ বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবনে জমির উর্বরতা কমেছে, কমেছে ফলনও।
এ হেন বেহাল দশা থেকে সুন্দরবনকে বার করে আনতে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা উন্নত দেশগুলিকেই দিতে হবে দাবি করা হয়েছে সিএসই-র রিপোর্টে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ওই দেশগুলির দায়ই সবচেয়ে বেশি।
কিন্তু সুন্দরবন উন্নয়নে রাজ্য সরকারের দায়িত্ব এবং ব্যর্থতার দিকগুলিকেও লঘু করে দেখার কারণ নেই বলেও মনে করে ওই রিপোর্ট। রিপোর্টটি প্রকাশের আগে সুন্দরবনের মানুষের প্রাত্যহিক সমস্যা এবং তার মোকাবিলা নিয়ে ‘সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট’ নির্মীত একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। পরে রিপোর্ট প্রকাশ করে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল বলেন, “দ্বীপের মানুষের উন্নয়নে আমাদের প্রকল্প এবং পরিকল্পনা তৈরির কাজে এই রিপোর্ট অবশ্যই প্রয়োজন হবে।”
|
জন্ম হস্তি-শাবকের
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালবাজার |
কালিম্পং বনবিভাগের নেওড়া রেঞ্জে বুড়িখোলা বিটের জঙ্গলে একটি হস্তি শাবকের জন্ম হয়েছে শুক্রবার। নেওড়ার রেঞ্জার নির্মল কুমার হুদাতি জানান, বুড়িখোলা বিটে মাললাইন-৪ কম্পার্টমেন্ট এলাকার গভীর জঙ্গলে একটি হাতি শাবকের জন্ম দিয়েছে। তবে মা এবং শাবকটি সু্স্থ রয়েছে। বুনো হাতির একটি দল তাদের ঘিরে রেখেছে বলে নির্মলবাবু জানান। |