দুই গোষ্ঠীর মারপিটে পণ্ড তৃণমূলের সভা
লেরই দুই গোষ্ঠীর মারপিটে শেষ পর্যন্ত পণ্ড হয়ে গেল মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভা।
শুক্রবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে জেলার ব্লক স্তরের তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে ‘বর্ধিত সভা’ শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সাগির হোসেনকে কেন মঞ্চে ডাকা হয়নি, তাই নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। মঞ্চে তখন বক্তৃতা করছিলেন জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা। হট্টগোল বাড়তে থাকায় তিনি চুপ করে যান। সেই সুযোগে তাঁর জায়গায় বক্তৃতা শুরু করে দেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। পরিস্থিতি তখনকার মতো স্বাভাবিক হয়।
কিন্তু শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বক্তৃতা দিতে উঠলে ফের শুরু হয়ে যায় গণ্ডগোল। দর্শকাসন থেকে এক দল নেতা কর্মী তখনও চেঁচিয়ে চলেছেন, “সাগির হোসেনকে কেন ডাকা হল না তার জবাবদিহি দাবি করতে হবে।” মঞ্চ থেকে আর এক পক্ষ তাঁদের উদ্দেশে শুরু করেন কটূক্তি। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
দলেই ধুন্ধুমার: মুর্শিদাবাদের রবীন্দ্র সদন চত্বরে দলের
ঝান্ডা নিয়েই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মারামারি।
শুক্রবার । ছবি: গৌতম প্রামাণিক
বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে তৃণমূলের সভায়
হঠাৎ শুরু গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। ছবিটি
তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই দুই গোষ্ঠীর লোকজন লাঠি-সোটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারপিটে জড়িয়ে পড়েন। সারা রবীন্দ্রসদন চত্বর জুড়ে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। গণ্ডগোলের জের ছড়ায় প্রেক্ষাগৃহের বাইরেও। সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রসদনের দিকে ইট ছুড়তে থাকেন কেউ কেউ। খবর পেয়ে বহরমপুর থানা থেকে পুলিশ বাহিনী আসে। প্রায় ৪০ মিনিট পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে ফের সভা শুরু হয়। তবে তখন সেই সভার হাল ছিল ভাঙা হাটের মতো। পূর্ণেন্দুবাবু, সুব্রতবাবু, শঙ্কুদেববাবু সহ অনেক নেতা এবং তাঁদের অনুগামীরা ততক্ষণে সভাস্থল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “গণ্ডগোল হয়েছে তবে কেউ আহত হননি। কোনও অভিযোগও দায়ের হয়নি।”
পূর্ণেন্দুবাবু অবশ্য বলছেন, “ওই সভায় কোনও মারামারি হয়নি। কে আগে বলবে, তা-ই নিয়ে সামান্য চেঁচামেচি হয়েছিল। বেশিরভাগ মানুষই অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে বলতে চাইছিলেন। কিন্তু এত চেঁচামেচি হচ্ছিল যে আমি তাড়াতাড়িই সভা শেষ করে বেরিয়ে যাই।”
মারমুখী। বহরমপুর রবীন্দ্রসদন চত্বরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
তবে তৃণমূলের জেলা নেতা নিয়ামত শেখ বলেন, “সাগির হোসেনকে কেন মঞ্চে ডাকা হয়নি বিবাদের সূত্রপাত তা নিয়েই। মুর্শিদাবাদে তৃণমূল বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এ দিন সভা চলাকালীন যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হল, তাতে দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে।” এ ব্যাপারে দলের জেলা সভাপতি সুব্রতবাবুর দাবি, “এই অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করতে সাগির হোসেনকে আমি আগেই ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তখন আসেননি। এই দিন মঞ্চেও আলাদা করে কাউকে ডাকার কথা ছিল না। বরং সাগির হোসেনের নিজেরই উচিত ছিল প্রবীণ নেতা হিসেবে মঞ্চে উঠে আসা।” তবে মঞ্চ থেকে কাউকে কটূক্তি করা হয়নি বলে তিনি জানান।
পাশাপাশি, গণ্ডগোলের দায় ‘সিপিএম-কংগ্রেস এবং দুষ্কৃতীদের’ উপরে চাপিয়ে তিনি বলছেন, “কংগ্রেসের মদত এবং সিপিএমের সুড়সুড়ি না পেলে দুষ্কৃতীরা এই গণ্ডগোল করার সাহস পেত না। জেলা জুড়ে তৃণমূলের যে ভাবে সাংগঠনিক ক্ষমতা বেড়েছে, তাতে ভয় পেয়ে সিপিএম এবং কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা সভা বানচালের চেষ্টা করেছিল।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেন, “তৃণমূল আগে নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাক। তার পরে কংগ্রেসের সঙ্গে লড়ার কথা ভাববে।” জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাসের কথায়, “জেলা তৃণমূলে সাগির হোসেন গোষ্ঠীর সঙ্গে সুব্রতবাবুর অনুগামীদের লড়াই দীর্ঘ দিনের। এই দিন ফের তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে।” আর, সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের দাবি, “এটাই চেনা তৃণমূল, যারা নিজেদের গোষ্ঠীবিবাদের দায়ও সিপিএমের উপরে চাপায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.