চিনের সঙ্গে সমুদ্র-বিবাদ এবং সীমান্ত উত্তেজনা কমাতে আরও সক্রিয় হল নয়াদিল্লি। আজ দু’দেশের বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে স্থির হয়েছে, সমুদ্রের অধিকার, সীমানা সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত এবং চিন এ বার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করবে। গত ছ’মাস ধরে দক্ষিণ চিন সাগরে ভারতের তেল উত্তোলনের ঘটনা নিয়ে চূড়ান্ত দ্বিপাক্ষিক তিক্ততা তৈরি হয়েছে। বেজিঙের বরাবরের দাবি, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ গোটা দক্ষিণ চিন সাগরই তাদের সম্পত্তি। ফলে তাদের অনুমতি ছাড়া এখানে কোনও কাজ করা যাবে না। দু’দেশের আলোচনা শুরু হলে চিন যে রাতারাতি এই দাবি থেকে সরে আসবে, এমনটা আশা করেছে না সাউথ ব্লক। কিন্তু তাদের আশা, এক বার আলোচনার টেবিলে বিষয়টিকে রাখা গেলে, চিনকে প্রশমিত করে রাখার কাজ কিছুটা অন্তত সহজ হবে।
এ মাসের শেষে নয়াদিল্লিতে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে আসবেন চিনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও। সে সময় তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের শীর্ষ বৈঠক হবে বলে স্থির হয়েছে। কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত কারণেই দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে চিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাটা ভারতের দায়। অরুণাচল প্রদেশ থেকে দলাই লামা বিভিন্ন বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে আস্থার অভাব রয়েছে। কিন্তু দিল্লি বরাবরই চায়, চিনের সঙ্গে মতপার্থক্যের বিষয়গুলিকে সরিয়ে রেখে মতৈক্যের জায়গাগুলিকে দৃঢ় করতে। একই সঙ্গে চিনের বিশাল বাজারকে কাজে লাগিয়ে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতেও মরিয়া সাউথ ব্লক।
আজকের বৈঠকের পরে বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব (চিন) গৌতম বাম্বেওয়ালা জানিয়েছেন, জল, স্থল দুই সীমান্তেই যাতে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় থাকে, সে ব্যাপারে বিশদে আলোচনা হয়েছে। স্থলসীমান্ত নিয়ে দু’দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা ছিলই। সেই অনুযায়ী ভারত এবং চিনের বিশেষ প্রতিনিধিরা সম্প্রতি বৈঠকে বসে একটি নতুন মেকানিজম গড়ার কথা ভেবেছিলেন। তার মূল কথা ছিল, সীমান্তে কোনও অশান্তি হলে শুধু সেনা নয়, দু’দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধি, কূটনীতিকদের নিয়ে তৈরি হওয়া নতুন প্রতিনিধি দল সমস্যার সমাধানসূত্র খুঁজবে। আজকের বৈঠকের পর স্থির হয়েছে, আগামী সপ্তাহে বেজিংয়ে এ নিয়ে বৈঠক হবে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ দিন দু’দেশের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সমুদ্রবিজ্ঞান সংক্রান্ত আদানপ্রদান থেকে শুরু করে জলদস্যু গ্রেফতারের মতো বিষয়ে তথ্য বিনিময় করা হবে। |