উন্নয়নশীল দেশগুলিকে পাশে নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বাড়াতে সক্রিয় হয়েছে নয়াদিল্লি। এক দিকে ‘ব্রিকস’ গোষ্ঠীর (ব্রাজিল, ভারত, রাশিয়া, চিন) নিজস্ব ব্যাঙ্ক গঠন, অন্য দিকে আমেরিকার ‘একাধিপত্যে’র অবসান ঘটিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদে উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতিনিধিত্ব--- এই সব দাবি নিয়ে বিভিন্ন স্তরে তৎপরতা শুরু হয়েছে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আন্তর্জাতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে চিন, রাশিয়া, ব্রাজিলের সঙ্গে ভারত একযোগে আমেরিকা-সহ অন্য উন্নত দেশগুলিকে নির্দিষ্ট বার্তা দিতে চাইছে। আগামী মাসের শেষে নয়াদিল্লিতে বসছে ‘ব্রিকস’ শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে এডিবি-র (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক) ধাঁচে ‘ব্রিকস’-এর ব্যাঙ্ক তৈরি করার জন্য খসড়া প্রস্তাব দেবে নয়াদিল্লি। |
আজ এখানে এসেছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ইয়াং জিয়েচি। আগামী কাল বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হবে। মার্চের শেষে ‘ব্রিকস’ বৈঠকের ক্ষেত্র প্রস্তুতির কাজটিও সারবেন দুই বিদেশমন্ত্রী। সূত্রের খবর, ওই ব্যাঙ্ক গঠনের প্রস্তাবটি নিয়েও আলোচনা হবে। উদ্দেশ্য, মার্চের শেষে চিনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও যখন ‘ব্রিকস’-এ যোগ দিতে নয়াদিল্লি আসবেন, তখন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা।
শুধুমাত্র উন্নয়নশীল দেশগুলির বিভিন্ন প্রকল্প এবং পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ করাই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি তুলে ধরার ক্ষেত্রেও ব্যাঙ্ক তৈরির উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছে কেন্দ্র। ব্রাজিল এবং রাশিয়া এই সিদ্ধান্তকে ইতিমধ্যেই স্বাগত জানিয়েছে। তবে এ কাজে ভারত সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা চাইছে বেজিং-এর। ইউরো সঙ্কটের ধাক্কা যাতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলিতে না লাগে সে জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এর আগেই বেজিংকে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেনি চিন।
ভারত, চিন, ব্রাজিল-এর বক্তব্য, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আমেরিকা বিশ্বব্যাঙ্কে আগের মতো পুঁজি ঢালতে পারছে না। আবার আন্তর্জাতিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির ভূমিকাও ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে দাবি উঠেছে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদে মার্কিন প্রাধান্য বহাল না রেখে ভারত, চিন বা রাশিয়ার মতো দেশগুলিকেও সুযোগ দেওয়া হোক। সংশ্লিষ্ট শিবিরের অভিযোগ, বিশ্বব্যাঙ্ক এবং আইএমএফ-এর গোপন বোঝাপড়া রয়েছে। যার ফলে প্রত্যেক বারই বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আমেরিকা থেকে এবং কোনও ইউরোপীয় আইএমএফ প্রধান নির্বাচিত হন। |