বিচ্ছিন্ন গোলমালে ধৃত ১৩২৪
কোথাও রাতে অফিস ও লাগোয়া এলাকায় থেকেছেন কর্মীরা। আবার কোথাও অফিসার-কর্মীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে যানবাহনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। তাই মঙ্গলবার ১১টি ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা সাধারণ ধর্মঘট সত্ত্বেও উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার সরকারি অফিসে হাজিরার উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার সামান্য হলেও খুলেছে বহু স্কুল-কলেজ। তবে সরকারি তরফে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার জন্য ‘সব রকম’ সাহায্যের ব্যবস্থা হলেও শেষ পর্যন্ত উত্তরের ছয় জেলার সিংহভাগ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলেনি। সকাল থেকে রাস্তায় সরকারি-বেসরকারি যানবাহন চললেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। তার উপরে দার্জিলিং জেলা ছাড়া উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলাতেই ‘বিচ্ছিন্ন’ গোলমালের ঘটনা ঘটেছে। এ দিন সব মিলিয়ে ২১টি সরকারি বাস ভাঙচুর হয়েছে।
রায়গঞ্জে গোলমালে জখম তৃণমূল ও সিপিএমের দুই নেতা। ছবি দু’টি তুলেছেন তরুণ দেবনাথ।
কোচবিহারে বাস ভাঙচুরের জেরে ২ চালক জখম হন। জলপাইগুড়িতে জখম হন এক মহিলা স্বাস্থ্য কর্মী-সহ ৩ জন। তাঁদের কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গ জুড়ে গ্রেফতার হন ১৩২৪ জন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “গত তিন মাস ধরে বামেরা সাধারণ ধর্মঘটের পক্ষে প্রচার চালায়। তার পরেও মানুষ সাড়া না-দেওয়ায় প্ররোচনা ছড়ানো হয়। পুলিশ সংবেদনশীল ভাবেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। মানুষই ধমর্ঘট ব্যর্থ করে দিয়েছেন।” মালদহে নিগৃহীত হন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকেরা তাঁর উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে ধর্মঘটীদের হাতে নিগৃহীত হন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ দাস। সিপিএম সমর্থক এক হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকও জখম হন। জেলার ইটাহার থানার গুলন্দর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সামনে সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দু’পক্ষের ৬ জন জখম হন। জোর করে ধর্মঘটের চেষ্টার অভিযোগে রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রী সিপিএমের নারায়ণ বিশ্বাস গঙ্গারামপুরে গ্রেফতার হন। কোচবিহারে গ্রেফতার হন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন বিধায়ক দীপক সরকার। দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “চা বাগানে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সমর্থকেরাও ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। জোর করে ধর্মঘটে সামিল করানোর চেষ্টা হয়নি।”
সুনসান কোচবিহার শহর। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
এদিন রায়গঞ্জ শহরের ফোয়ারা মোড়ে জেলার প্রধান ডাকঘর বেলা ১১টার পরেও না-খোলায় কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকেরা তালা ভেঙে ফেলেন বলে অভিযোগ। সেই সময়ে শ্রীকুমারবাবু ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রাক্তন ওই মন্ত্রী বলেন, “পোস্ট অফিস মোড়ের কাছে হঠাৎ কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ধাক্কা দেওয়ার পাশাপাশি পেটে কনুই দিয়ে মারে। পাঁচ হাত দূরে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও আমায় বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।” ধর্মঘটীরা এদিন বিবেকানন্দ বিদ্যালয় জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। মালদহ কলেজেও এসএফআইয়ের সমর্থকরা জোর করে তাদের ঘর থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ। ধর্মঘটীরা এদিন রায়গঞ্জ শহরের বিবিডি মোড়ে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ দাসের গাড়ি আটকে চাবি কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। গাড়িতে সে সময়ে দিলীপবাবু ছিলেন না। দলবল নিয়ে তিনি সেখানে হাজির হতেই দু’পক্ষে সংঘর্ষ হয়। দিলীপবাবুর অভিযোগ, “অসুস্থ আত্মীয়ের বাড়িতে গাড়িটি যাচ্ছিল। তাঁকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। বনধ সমর্থনকারী সিপিএম কর্মী সমর্থকরা গাড়ি আটকে চালকের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নেয়। আমি ঘটনাস্থলে গেলে রাস্তায় ফেলে আমায় পেটানো হয়।” ওই ঘটনায় হাতিয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিপিএমের অনিরুদ্ধ সিংহও নিগৃহীত হন। তৃণমূল সমর্থকেরা তাঁকে বাঁশ দিয়ে পেটায় বলে অভিযোগ। ধর্মঘটীরা এদিন জেলার বিভিন্ন সরকারি ডিপোয় অবরোধের চেষ্টা করেন। বাসের চাকার হাওয়া খুলে দেন। ভাঙচুর করা হয় ৯টি বাসে। জলপাইগুড়িতে এদিন ৬টি বাস ভাঙচুর হয়। একটি সরকারি বাসের কন্ডাক্টর এবং মহিলা যাত্রী জখম হন। পিকেটিং করতে গিয়ে জেলাশাসকের দফতরের সামনে গ্রেফতার হন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মানিক সান্যাল। জেলা জুড়ে গ্রেফতার করা হয় ২০০ সমর্থককে।
প্রাক্তন বাম মন্ত্রীকে নিগ্রহে বিক্ষোভ মালদহে। ছবিটি তুলেছেন মনোজ মুখোপাধ্যায়।
জলপাইগুড়ি পুরসভায় এদিন সব দফতর খোলা ছিল। কর্মী হাজিরা ছিল ৮৩ শতাংশ। জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী বলেন, “বনধ বিফল হয়েছে। ৭৫ শতাংশ চা বাগানে কাজ হয়েছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মানিক সান্যালের দাবি, “অভূতপূর্ব ধর্মঘট হয়েছে। মানুষ স্বতস্ফূর্ত ভাবে সামিল হয়েছেন। পুলিশ নিজে পতাকা খুলে ধর্মঘট ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।” অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে কোচবিহারে প্রাক্তন বিধায়ক দীপক সরকার, দেবাশিস বণিক-সহ ৩৬ জন বনধ সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। দুপুর পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি বনধ সমর্থক গ্রেফতার হন। কোচবিহার সর্বশিক্ষা মিশনের আধিকারিক অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়কে ধর্মঘট বিরোধীরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। একটি মোটর সাইকেল ভাঙচুর হয়। সিতাইয়ে বনধ সমর্থক ও বিরোধীদের গোলমাল হয়। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের অভিযোগ, পরিকল্পিত ভাবে সিতাইয়ে আমাদের অফিসের সামনে হামলা চালিয়ে বেশ কিছু মোটর সাইকেল ও সাইকেল বিরোধীরা ভেঙে দেন। দীপকবাবুদেরও ভিত্তিহীন অভিযোগে ধরা হয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তারিণী রায়ের দাবি, ভাঙচুরে তাঁদের সমর্থক যুক্ত নন।

রাস্তায় বাড়তি ৫০টি বাস
আগে থেকেই ময়দানে নেমে পড়েছিলেন। কোচবিহার থেকে শিলিগুড়ি টার্মিনাস, মাল্লাগুড়ি ডিপো নিজে চষে বেড়িয়েছেন। কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। তাঁর নির্দেশেই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিভিন্ন কর্মী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে কাজে যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে কোচবিহারের বিভিন্ন ডিপো ঘুরে কর্মীদের সাহস যোগানোর পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিলেন তিনি। বহরমপুর থেকে কোচবিহার সমস্ত ডিভিশনের আধিকারিকদের থেকে পরিস্থিতির রিপোর্ট নিয়েছেন। যার নিট ফল বামেদের ডাকা বন্ধে সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক বাস চালাল উত্তরবঙ্গ রাস্ট্রীয় পরিবহণ নিগম কর্তৃপক্ষ। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে তো বটেই, নিগমের ইতিহাসেও বামেদের ডাকা কোনও বন্ধের কর্মী হাজিরার পরিসংখ্যানে নজির গড়ল নিগম। এ দিন নিগমের ৮৫ শতাংশ কর্মী কাজে যোগ দেন। দিনের শেষে ক্লান্তি ভুলে ওই তথ্য দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন এদিন উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের একনম্বর ‘লাইফ লাইন’’ হয়ে ওঠা নিগমের কান্ডারি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। যিনি সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। উত্তরবঙ্গ রাস্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সব মিলিয়ে এ দিন পাঁচ শতাধিক বাস রাস্তায় নামানো হয়। কয়েকটি রুটে যাত্রীরা সরাসরি যোগাযোগ করায় বাস দেওয়া হয়েছে। সবটাই সম্ভব হয়েছে ৮৫ শতাংশ কর্মীর উপস্থিতির জন্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.