ভগ্ন দশায় মদনাবতীর নীলকুঠি
নীলকুঠি বলতেই মনে আসে ভারতীয় কৃষকদের প্রতি ইংরেজদের অন্যায় অত্যাচারের ছবি। কিন্তু মালদা জেলার মদনাবতীর নীলকুঠির ইতিহাস বলে অন্য কথা। ১৭৯৪-এর ১৫ জুন উইলিয়ম কেরি মদনাবতী নীলকুঠির ম্যানেজার হয়ে আসেন। ছিলেন ১৭৯৯-এর ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এখানে থাকার সময় উইলিয়ম কেরি দিনাজপুরকে নিয়েও যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। ১৮০৮-এ এশিয়াটিক রিসার্চের দশম খণ্ডে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে কেরি দিনাজপুর জেলার ভৌগলিক, সামাজিক অবস্থা, কৃষিকর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে প্রচুর তথ্য দিয়েছেন। বিস্তারিত ভাবে কৃষি সম্পর্কিত বিষয়গুলি তুলে ধরেছিলেন। কখন কী ভাবে কোন চাষ করলে কৃষকদের লাভ বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা, তা-ও ব্যাখ্যা করেছেন। উন্নত কৃষিকর্মের নিয়ম মানলে যে তৎকালীন ভারতে কৃষকদের উন্নতির সম্ভাবনা উজ্জ্বল, প্রবন্ধে তা-ও বলেছেন। কৃষকদের জন্য উন্নতমানের চাষের যন্ত্রপাতি এবং বিভিন্ন বীজ বিদেশ থেকে আনিয়েছিলেন।
এ সময়ই কেরি মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দানের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। বাইবেলের বাংলা অনুবাদের কাজ শুরু করেন। শিশুদের পাঠশালামুখী করার চেষ্টা করেছিলেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের মহীপালদীঘিতে বন্ধু টমাসের উদ্যোগে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র শুরু করেছিলেন। এই নীলকুঠির কাছেই রয়েছে কেরিসাহেবের ছোট ছেলে পিটারের সমাধিস্থল। ছেলের মৃত্যুর পর তিনি চলে যান শ্রীরামপুরে। সেখানে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কেরিসাহেব চলে যাওয়ার পরই মদনাবতীর নীলকুঠিটি বন্ধ হয়ে যায়। নীলকুঠিটির পাশেই রয়েছে একটি বন্ধ সুড়ঙ্গের মুখ। এই সুড়ঙ্গের পথ কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে জানা যায় না। কেরির উদ্যোগে উত্তরবঙ্গে সর্বপ্রথম এই নীলকুঠিতেই কাঠের তৈরি মুদ্রনযন্ত্র স্থাপিত হয়েছিল। সে দিক থেকেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁর স্মরণে মদনাবতীর মানুষ ‘কেরিমেলা’ নাম একটি মেলারও আয়োজন করত। বর্তমানে মেলার আয়োজনে ভাটা পড়েছে। সরকারি উদাসিনতায় হারিয়ে যাচ্ছে মদনাবতীর নীলকুঠি। অথচ আজও কৌতূহল জাগায় এই প্রচীন নীলকুঠিটির ইতিহাস। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে উইলিয়ম কেরির অনেক স্মৃতি।

লাইব্রেরি
সংগ্রহটা ব্যক্তিগত। সেই ব্যক্তিগত বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে জলপাইগুড়ির প্রত্যন্ত এলাকা উত্তর ধূপগোড়ায় বসতবাড়ির একটি ঘরে সাজিয়ে তোলা হয়েছে ছোট্ট গ্রন্থাগার। বইয়ের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। সংখ্যায় আহামরি কিছু হয়ত নয়। কিন্তু বিষয় বৈচিত্রে আকৃষ্ট করতে পারে সকলকেই। রয়েছে পুরাণ, ইতিহাস, থেকে শুরু করে চিকিৎসাবিদ্যা, বিজ্ঞান, নাটক, চিত্রকলার দুর্লভ সমাবেশ। হিন্দি, বাংলা, নেপালি, নানা ভাষার পড়া না পড়া বই। সংগ্রাহক মন্টু সাহা। রয়েছে স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যাকাউন্টস অব বেঙ্গল, সোর্স অব দ্য হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া, দ্য ট্রাইবস অ্যান্ড কাস্ট অব বেঙ্গল। আছে ইতিহাস অনুসন্ধানের চোদ্দটি খন্ড।
লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অব ইন্ডিয়া, হিস্ট্রি অব ফ্রিডম মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া’র সম্পূর্ণ খণ্ড, রিভার অব বেঙ্গল, ডকুমেন্টস অব দ্য কমিউনিস্ট মুভমেন্ট-এর ছাব্বিশটি খণ্ড। এ সবের সঙ্গেই আছে শিশু বিশ্বকোষ, এ হিস্ট্রি অব এগ্রিকালচার অব ইন্ডিয়া, দ্য ট্রাইবাল লাইফস অব ইন্ডিয়া, চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ, হিস্ট্রি অব দ্য মুসলিম অব বেঙ্গল। এমনকী আছে মেডিক্যাল ইন্ডিয়ান লিটারেচর, এ হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান লিটারেচর। রচনাবলির তালিকায় আছে অদ্বৈতমল্লবর্মণ, রবীন্দ্রনাথ, তারাশংকর থেকে শুরু করে শরৎচন্দ্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদ্যাসাগর। চোখে পড়বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ও দলিতপত্র, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, দুশো বছরের বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য। এমনকী ওয়াইল্ড লাইফের ওপর গুচ্ছের বই। জোগাড় করেছেন দু’হাজারের ওপর রেকর্ড। যার মধ্যে আছে নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, ও লেলিনের কন্ঠস্বর। সংগ্রহগুলির মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে ব্যক্তিসত্তার স্বাক্ষর। মানুষটি আর নেই। কিন্তু বইগুলি দেখতে চাইলে যে কেউ আসতে পারেন লাইব্রেরিতে।

ইতিহাস
কোনও রাজনৈতিক দলের ইতিহাস লেখা নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। তা-ও যেখানে দলটির বয়স ১২৫ বছরেরও বেশি। তবে যে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের পটভূমিতে এই ইতিহাস লেখার প্রচেষ্টা, সেই ভূখণ্ডে দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু ৬৩ বছর আগে। কারণ সেই ভূখণ্ডটি ছিল একটি ব্রিটিশ আশ্রিত করদ মিত্র রাজ্য অর্থাৎ দেশীয় রাজ্য। স্বভাবতই রাজার শাসনে রাজনৈতিক কার্যকলাপ সেখানে ছিল নিষিদ্ধ। বৃটিশ শাসনের অবসানে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে সেই সব দেশীয় রাজ্যেও রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়। যার ফলশ্রুতিতে বাংলার উত্তরপ্রান্তীয় ‘কোচবিহার’ রাজ্যেও শুরু হয় জাতীয় কংগ্রেস দলের সাংগঠনিক তৎপরতা। তা পূর্ণতা পায় ১৯৫০-এর ১ জানুয়ারি। পশ্চিমবঙ্গের জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর। কী ভাবে, কাদের উদ্যোগে ১৯৪৭-এর শেষ লগ্নে কোচবিহারে কংগ্রেস দল প্রতিষ্ঠিত হল এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ, দলের উত্থানপতন ইত্যাদি বিষয়কে লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন প্রবীণ সাংবাদিক শ্রী তরুণকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। সম্প্রতি তাঁর রচনাটি ক্রোড়পত্র হিসেবে আর্থ-সামাজিক বিশ্লেষণধর্মী জার্নাল ‘উত্তরপ্রসঙ্গ’র উৎসব সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। অনুষ্ঠানে ৮৬ বছরের প্রবীণ তরুণকৃষ্ণকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

রজতজয়ন্তী
আজ থেকে ২৫ বছর আগে স্বপ্নের বীজ পুঁতেছিলেন নৃত্যশিল্পী রীনা সিংহ রায়। আজ তা মহীরুহের আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি তাঁর নৃত্যপ্রতিষ্ঠান ‘আবীর নৃত্যালয়’ পালন করল পঁচিশ বছর পূর্তি উৎসব। বালুরঘাট রবীন্দ্রভবনে সেই অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ ছিল প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী কৌশিকী দেশিকানের সঙ্গীত। আলাপ, তান, খেয়াল, ঠুংরি, খাম্বাজে মোহিত হয় উপস্থিত দর্শকরা। তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে শেষ দুই দিন ছিল ভানুসিংহের পদাবলী, তাসের দেশ অবলম্বনে নৃত্যনাট্য ‘এলেম নতুন দেশে’। অনুষ্ঠানে আর এক আকর্ষণ ছিল ‘কোচবিহার আনন্দ্ম কালচারাল সেন্টার’-এর মুকাভিনয়। অভিনয় করে আনন্দম-এর খুদে শিক্ষার্থীরা।

ব্যতিক্রমী মাতৃস্নেহ
পৃথিবীতে মাতৃস্নেহের তুলনা নেই। শুধু মানুষ নয়, পশুপাখির মাতৃস্নেহও আমরা প্রত্যক্ষ করি বার বার। হঠাৎই পথ চলতে চলতে চোখে পড়ল এ রকমই এক দৃশ্য। একটি ছাগলছানা গোরুর দুধ পান করছে। গোরুটির বাছুর সদ্য মারা গেছে। তার শোক ভুলতেই বোধহয় ছাগলছানাটিকে স্তন্যপান করাচ্ছে শাবক হারা গোরুটি। দিনহাটার থানা পাড়ার মাঠে গোরুটির কাছে নিয়মিত এসে ছানাটি দুধ খেয়ে যায়।


উত্তরের কড়চা
এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.