ডাক্তারি পরীক্ষাই ‘সব নয়’
ধর্ষণে মিথ্যে বলেন না মেয়েরা, বলেছে সুপ্রিম কোর্ট
কোনও মহিলা ধর্ষণের অভিযোগ আনলে তিনি সত্যি বলছেন ধরে নিয়েই তদন্ত শুরু করা উচিত বলে মনে করেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়। কাটোয়ায় ধর্ষণের অভিযোগ সাজানো বলে মঙ্গলবারই অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণ প্রমাণিত হয়নি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সুনন্দাদেবীর এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাই বলেছেন, কোনও মহিলা যদি ধর্ষণের অভিযোগ আনেন, তা হলে তিনি সত্যি বলছেন ধরে নিয়েই তদন্ত শুরু করতে হবে। এটা আমাদেরও প্রতি পদক্ষেপে মনে রাখা দরকার।”
নারী আন্দোলনের কর্মীরা এ ব্যাপারে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের উল্লেখ করছেন। বিচারপতি জেএম পাঞ্চাল এবং দীপক বর্মার ডিভিশন বেঞ্চ একটি মামলায় বলেছিল, “ভারতীয় নারীরা ধর্ষণ নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেন না। এই অভিযোগের সঙ্গে এত ধরনের সামাজিক লজ্জা ও যন্ত্রণা লুকিয়ে থাকে যে এ বিষয়ে কোনও মহিলা মিথ্যা বয়ান দেন না।”
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আরও রায়ের প্রসঙ্গ উঠছে। ২০০৭ সালে বিসি দেবা বনাম কর্নাটক সরকারের এক মামলায় ধর্ষণের অভিযোগটি ‘সাজানো’ বলে সরকারপক্ষ সওয়াল করেছিল। সে ক্ষেত্রে সহবাসের কোনও প্রমাণ মেডিক্যাল পরীক্ষায় পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও অভিযুক্তের শাস্তি হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ডাক্তারি প্রমাণ না মিললেও অভিযোগকারিণীর বয়ানকে গুরুত্ব দিতে হবে। নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ জানান, ২০০৯ সালে ওয়াহিদ খান বনাম মধ্যপ্রদেশ সরকারের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ডাক্তারি পরীক্ষায় চিকিৎসক শুধু দেখবেন, ওই মহিলা শেষ কবে সহবাস করেছিলেন। ধর্ষণ হয়েছে কি না তা দেখার দায়িত্ব আইন এবং আদালতের। এর দু’বছর আগে, ২০০৫ সালের অক্টোবরে একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এ-ও বলেছিল, ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাক্ষ্য বা ডাক্তারের রিপোর্ট অপরিহার্য বলে গণ্য হবে না। বরং ধর্ষিতার বয়ান আদালতের কাছে যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য মনে হলে প্রয়োজনে ডাক্তারি রিপোর্ট ছাড়া এবং আদালতে ডাক্তারকে জেরা না করেও অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে।
ধর্ষণের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছে পুলিশও। রাজ্য পুলিশ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, যখন কোনও মহিলাকে অন্ধকারে ট্রেন থেকে কেউ জোর করে নামিয়ে নেয়, তা হলে তার উদ্দেশ্য কী হতে পারে সেটাই প্রাথমিক বিচার্য হওয়া উচিত। সেই অনুযায়ী তদন্তের অভিমুখ স্থির হওয়া উচিত। পুলিশ সূত্রের দাবি, মহিলার যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে মেডিক্যাল রিপোর্টে জানানো হয়েছে। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, ভয়ে কেউ ‘আত্মসমর্পণ’ করলে ধর্ষণ সত্ত্বেও তাঁর যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন না-ও থাকতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য প্রসঙ্গে ভাঙড়ে ১৯৯৮ সালে এক মহিলার ধর্ষিতা হওয়ার ঘটনাও উঠে এসেছে। ওই মহিলাকে যে ধর্ষণ করা হয়েছিল, ডাক্তারি পরীক্ষায় তার প্রমাণ মেলেনি। তখন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, “বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের চিহ্ন পাওয়া যায় না। তা থেকে প্রমাণিত হয় না যে ধর্ষণ হয়নি।” সেই মমতা কী ভাবে কাটোয়ার ক্ষেত্রে এমন মন্তব্য করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন বিভিন্ন মহলেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.