সরকারি দফতরে হাজিরা ‘স্বাভাবিক’
জনজীবন বিপর্যস্ত দুই জেলাতেই
রকারের আশ্বাস সত্ত্বেও আর পাঁচটা সাধারণ বনধ্রে চেনা চিত্রই চোখে পড়েছে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে। তবে দুই জেলা প্রশাসনেরই দাবি, সরকারি দফতরগুলিতে হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। যদিও এ দিন, দুই জেলাতেই পথে নামেনি সরকারি বাস। চলেনি অটো-ট্রেকার। বিক্ষিপ্ত ভাবে সরকারি বাস চলেছে। কিন্তু তাতেও যাত্রী তেমন ছিল না। প্রশাসনের দাবি, মঙ্গলবার, তুলনায় সরকারি দফতরে উপস্থিতির হার ছিল বেশি। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজীবকুমার বলেন, “জেলার কোনও কোনও ব্লকে একশো শতাংশ কর্মী হাজির ছিলেন। তবে বহরমপুর জেলা প্রশাসনিক ভবনে ৯৫% কর্মী উপস্থিত ছিলেন।” নদিয়ার জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রা বলেন, “এই দিন সরকারি কর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল ৮৫ শতাংশ।” বহু ক্ষেত্রেই যাঁদের দূরে বাড়ি, তাঁদের অনেকে অফিসে রাত কাটিয়েছেন। কেউ আবার সহকর্মী বা আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে গিয়েছিলেন সোমবার রাতে। রাজীবকুমার বলেন, “আর যাঁরা অনেক আগে থেকেই ছুটি নিয়েছিলেন, তাঁরাও ছুটি বাতিল করে এদিন অফিস করেছেন।” তবে নদিয়ার জেলা পরিষদ ভবন এই দিন সুনসান ছিল।
শিল্প ধর্মঘটে বহরমপুর প্রশাসনিক ভবন।
নদিয়ায় ৫৯টা রুটের মধ্যে ৫টি রুটের মাত্র ১৩টি বাস চলেছে। সকালের দিকে করিমপুর সহ কয়েকটি রুটে দু’একটি সরকারি বাস চলাচল করলেও বেসরকারি বাসের দেখা মেলেনি। দুপুর ২টোর পরে জেলাশাসকের নির্দেশ মতো বাস মালিকেরা কিছু রুটে বাস চালাতে শুরু করে। নদিয়া জেলা বাস মালিক সংগঠনের সহ সম্পাদক অসীম দত্ত বলেন, “আমরা সংগঠন গত ভাবে বাস চালানোর ব্যাপারে নিরপেক্ষ ছিলাম। তবে নিরাপত্তার কারণে শ্রমিকেরা বাস চালাননি।” মঙ্গলবার প্রায় সর্বত্র দোকানপাট ছিল বন্ধ। পরিবেশ ছিল থমথমে। সাধারণ মানুষও এদিন পথে নামেননি। অবশ্য সরকারি সমস্ত দফতর খোলা থাকলেও অধিকাংশ স্কুল-কলেজ ছিল বন্ধ। কোথাও আবার শিক্ষক-শিক্ষিকা হাজির থাকলেও দেখা মেলেনি ছাত্রছাত্রীদের। অভিনব চন্দ্রা বলেন, “কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার ৩টি, রানাঘাট মহকুমার ২টি ও তেহট্ট মহকুমার ৪টি পঞ্চায়েত ভবনে তালা ভেঙে কর্মীরা ভিতরে ঢোকেন।” সকালের দিকে পলাশি, শান্তিপুর ও গেদে রেলস্টেশনে কিছু সময় রেল অবরোধও করা হয়। গাছা ও বেথুয়াডহরিতে বেশ কিছু সময় পথ অবরোধ হয়েছে। পলাশিতে রেল অবরোধকারীদের মধ্যে সিপিএমের এক জেলা কমিটির সদস্য-সহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রেজিনগর রেলগেটের কাছে রেললাইনের মধ্যে সিপিএম কর্মীরা দলীয় পতাকা পুঁতে দেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কৃষ্ণনগরের জেলা পরিষদের দফতর।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “এদিন ডোমকল মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। তিন পুলিশ কর্মী জখম হন। এর পরেই পুলিশ ৫ জন বন্ধ সমর্থনকারীকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে এক জন ডোমকল হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত এক প্রধানশিক্ষকও রয়েছেন।” ওই শিক্ষক আতাউর রহমান রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। পুলিশ সুপার বলেন, “এদিন জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ১৪ জন বন্ধ সমর্থনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেছেন, “এই দিন জেলার মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” ডোমকল বাগডাঙা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কার্যালয়ে কর্মীদের ঢুকতে বাধা দেয় বন্ধ সমর্থনকারীরা। সেই সময়ে সরকারি এক কর্মীর মোটরবাইকে ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ। ইসলামপুরে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের উপরে পুলিশ মৃদু লাঠি চালায়। কান্দির শেরপুর-রামপুরহাট রাজ্য সড়কের উপরে বেঞ্চ পেতে অবরোধ করায় পুলিশ ঘটনাস্থলে ৪ জনকে গ্রেফতার করে। ঝিল্লি, ইন্দ্রাণী, বড়ঞা-১ ও ২ পঞ্চায়েত কার্যালয়ের সামনেও অবরোধ করা হয়। বড়ঞা থানার বাহাদুরপুর উচ্চবিদ্যালয়, নিমাবাহাদুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়েও বিডিও-পুলিশ যাওয়ার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ধর্মঘটকারীদের বাধায় খোলেনি কান্দি পুরসভার তালাও।
কৃষ্ণনগরের রাস্তাঘাট।
অন্য দিকে হরিহরপাড়ার স্বরূপপুরের একটি ইটভাটায় ট্রাক্টরে করে মাটি নিয়ে যাওয়ার সময়ে ধর্মঘটকারীরা চালকের উদ্দেশ্যে বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। বোমাটি অবশ্য ফাটেনি। পরে ট্রাক্টর থেকে নামিয়ে চালককে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। চাপড়ার হাটরায় করিমপুরগামী একটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। নদিয়ায় জেলা আদালত চত্বরে বেলা আড়াইটে নাগাদ সরকার পক্ষের আইনজীবী ও অন্য আইনজীবীরা জেলা জজের এজলাসের সামনে বিক্ষোভ দেখালে এজলাসের তালা খোলা হয়। তারপরে ভিতরে ঢোকেন বিচারক। সরকারি আইনজীবী কিশোর মুখোপাধ্যায় বলেন, “মাত্র তিনটি এজলাস এই দিন খোলা ছিল।”

ছবি: গৌতম প্রামাণিক ও সুদীপ ভট্টাচার্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.