হাওড়া ও ব্যারাকপুর
‘নিধিরাম সর্দার’ পুলিশেই চলছে দুই কমিশনারেট
রাজ্য পুলিশের দু’টি কমিশনারেটেই ছবিটা এক। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এলাকায় গভীর রাতে আইএসআই ক্যাম্পাসের সামনে থেকে ধর্ষণের মতলবে এক মহিলাকে গাড়িতে তোলার সময়ে ত্রিসীমানায় পুলিশের দেখা মেলেনি। আবার সকাল ন’টায় হাওড়ায় নিবেদিতা সেতুর সমান্তরাল রাস্তা থেকে ওই নির্যাতিতাকে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্যও গাড়ি দিতে পারেনি বালি থানা। বরাহনগরে গণধর্ষণের ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে উঠে আসা এই ছবিটাই যা বলার বলে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, ন্যূনতম সুরক্ষা বা নাগরিক পরিষেবার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে না-পারলে নতুন কমিশনারেট সাধারণ মানুষের কোন কাজে আসবে?
বরাহনগর এলাকার এই গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন দৃষ্টান্ত নয়। এক মাস আগে গত ২০ জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এলাকায় সাতটি খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ। একটি ঘটনারও কিনারা করতে পারেননি নতুন কমিশনারেটের গোয়েন্দারা। কমিশনারেট গঠনের আগে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির মধ্যে এক ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনাও ঘটেছিল। তার তদন্তও এক চুল এগোয়নি বলে মানছেন পুলিশকর্তারা। সেই সঙ্গে লেগে আছে নিত্যনতুন চুরির ঘটনা।
আর এলাকার পুরনো সমস্যাগুলি যে কমিশনারেট গঠনের পরেও রয়ে গিয়েছে, তা বলে দিচ্ছে আইএসআই ক্যাম্পাসের সামনের রাস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নৈশ চিত্রটাও। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই তল্লাটে এখনও রাত বাড়লেই জমে ওঠে ট্রাক-লরির খালাসি বা বহিরাগত যুবকদের পানভোজনের আসর। ডানলপ মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশি নজরদারি নিয়েও কমিশনারেট গঠনের ঢের আগে থেকে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছিল। কিন্তু কমিশনারেট গড়ার পরেও সেখানে সিসিটিভি-র বালাই নেই। বস্তুত বরাহনগরের গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ওই ডানলপ মোড় দিয়েই দুষ্কৃতীরা মহিলাকে ম্যাটাডর-ভ্যানে করে নিয়ে গিয়েছিল বলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানতে পারে। সিসিটিভি-র ফুটেজ থাকলে তদন্তে অনেকটাই এগোনো যেত বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা।
হাওড়ার ছবিটাও বড় একটা আলাদা নয়। নিবেদিতা সেতুর টোলপ্লাজায় সিসিটিভি থাকলেও তার নজরদারি শুধু টোলবুথেই সীমাবদ্ধ। পুলিশের পরিকল্পনামাফিক টোলপ্লাজার ছাদে সিসিটিভি এখনও বসেনি। গণধর্ষণের ঘটনাটির পরে টোলপ্লাজার এক কর্তার আফশোস, “ওই সিসিটিভি থাকলে টোলপ্লাজার অফিসের পিছনে সার্ভিস রোডের দিকটায় কারা মহিলাকে ফেলে পালাল, তা হয়তো ক্যামেরায় ধরা পড়ত।”
ব্যারাকপুরের থেকে কিছুটা পুরনো হাওড়া কমিশনারেটের বয়স এখন ছ’মাস। কিন্তু পরিকাঠামোর উন্নতির নিরিখে পরিস্থিতির তেমন হেরফের নেই। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডের দাবি, “গোয়েন্দা বিভাগ বা ট্রাফিকের মতো শাখাগুলি স্বতন্ত্র ভাবে কাজ করছে।” কিন্তু নিট ফল কী? হাওড়ায় সাতটা খুনের মধ্যে কিনারা হয়েছে মাত্র একটির। ব্যারাকপুরের মতো হাওড়াও একের পর এক চুরির জেরে নাজেহাল। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়েরও দাবি, কমিশনারেট গঠনের পরে পুলিশি ব্যবস্থার ঢের উন্নতি হয়েছে। তাঁর কথায়, “আগে এই এলাকায় থানার গাড়িই টহল দিত। এখন ২৪ ঘণ্টা কমিশনারেটের সদর দফতরের টহলদার গাড়িও (এইচআরএফএস এবং আরএফএস) থাকে। পুলিশকর্মীরা বাড়তি সময় ডিউটি করে তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন।” সঞ্জয়বাবু বস্তি এলাকায় টহল বাড়ানোর কথা বললেও এলাকাবাসীর অভিজ্ঞতা বলছে, ভিতরের রাস্তায় পুলিশ ঢোকে না। সেখানে গজিয়ে উঠছে দুষ্কৃতী-ডেরা। আইএসআই-এর আশপাশে বেআইনি পার্কিং ঘিরে ‘গোলমেলে’ লোকের ভিড় নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সঞ্জয়বাবু বলছেন, “আগামী দু’তিন সপ্তাহে ট্রাফিকের কয়েক জন কর্তা যোগ দিলে পার্কিংয়ের বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হবে।”
দু’টি কমিশনারেট সূত্রেরই খবর, আসলে জনসংখ্যা বা এলাকার আয়তনের নিরিখে নিতান্তই সামান্য লজ্ঝড়ে গাড়ি ও অল্পসংখ্যক পুলিশ নিয়ে কমিশনারেটের কাজ চলছে। থানাগুলো সাকুল্যে দু’-তিনটে গাড়ির ভরসায় চলছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, “যা অবস্থা, তাতে বেলা ন’টাতেও বালি থানায় গাড়ি না-থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।”
ফলে সীমিত পরিকাঠামো নিয়ে রাজ্য সরকারের তড়িঘড়ি কমিশনারেট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েই আপাতত প্রশ্ন উঠছে। হাওড়ার পুলিশ কমিশনারের অবশ্য আশ্বাস, “নতুন লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।” ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয়বাবুও বলছেন, “আগামী দু’তিন মাসে কিছু নতুন গাড়ি পেয়ে যাব। তখন সমস্যা অনেকটা মিটবে। আর চার ধাপে বেশ কয়েক জন নতুন পুলিশকর্মীও যোগ দেবেন। হয়তো একটু সময় লাগবে। কিন্তু আশা করা যায়, পুজোর আগে কমিশনারেটের এলাকার পুলিশ-পাহারা অন্য চেহারা পাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.