কোথা থেকে কোন পথে, কোথায় নিয়ে গিয়ে বরাহনগরের ঝুপড়িবাসিনীকে ‘ধর্ষণ’ করা হয়, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মহিলার পরিচিত এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরেই সে মহিলাকে ধর্ষণ ও খুনের ছক কষে বলে পুলিশের সন্দেহ।
কিন্তু পুলিশকে ধন্দে ফেলছে রাজচন্দ্রপুরে নিবেদিতা সেতুর টোলপ্লাজার সিসিটিভি-র ফুটেজ। মহিলাকে কোন পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা যাচাই করতে ওই ছবি খুঁটিয়ে দেখে পুলিশ। তাতে কিছু বোঝা যায়নি। অর্থাৎ, মহিলাকে আদৌ নিবেদিতা সেতু দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কি না, সে প্রশ্ন থাকছে। অন্যথায় বালি সেতু ধরে এগিয়ে বামুনডাঙা আইল্যান্ড থেকে বাঁ দিকে ঘুরে সার্ভিস রোড ধরার সম্ভাবনা থাকছে। তবে পুলিশের একাংশেরই মত, কোনও গাড়িতে মহিলাকে নীচে ঝুঁকিয়ে পায়ের কাছে বসিয়ে কোথাও নিয়ে যাওয়া হলে সিসিটিভি-র ছবিতে তাঁকে দেখা যাবে না। যদিও একটা বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত, যে রুট ধরেই মহিলাকে সার্ভিস রোডের দিকটায় নিয়ে যাওয়া হোক না কেন, দুষ্কৃতীরা ওই এলাকা ভাল করে চিনত। এ বিষয়ে জল্পনার মধ্যেই মহিলার পরিচিত এক যুবক দিলীপ সোনারকে রবিবার গ্রেফতার করে পুলিশ।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “দিলীপের সঙ্গে মহিলার একটা ঝগড়া হয়েছিল। সে ওই মহিলার বাড়ি গিয়ে তাঁর ছেলেকে ‘তোর মাকে দেখে নেব’ বলে শাসিয়ে যায়।” পুলিশের দাবি, ধর্ষণের সময়ে দিলীপও সেখানে ছিল। দিলীপ নেশা করে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় থাকায় তাকে জেরা করতে অবশ্য হয়রান হতে হয়েছে গোয়েন্দাদের। তাই আপাতত বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব খুঁজছে পুলিশ।
যেমন
১) বৃহস্পতিবার, ঘটনার রাতে কোথায় দিলীপের সঙ্গে মহিলার দেখা হল?
২) কোথায় নিয়ে গিয়ে মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়?
৩) নিবেদিতা সেতুর সমান্তরাল সার্ভিস রোডে মহিলাকে কী ভাবে ফেলে আসা হয়?
৪) দিলীপের সঙ্গে আর কে বা কারা ছিল?
এই বিষয়গুলিও গোয়েন্দাদের রীতিমতো ভাবাচ্ছে। পুলিশ কমিশনার বলেন, “খোলা মনে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। কিছু পারিপার্শ্বিক প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা চলছে।”
এক পুলিশকতার্র কথায়, “হাসপাতালে মৃত্যুর আগে মহিলার জবানবন্দির ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করলেও দিলীপরা কী ভাবে মহিলাকে ফাঁদে ফেলেছিল, তা বোঝার চেষ্টা চলছে।” কিন্তু দিলীপ কীসের আক্রোশে মহিলার উপরে নির্যাতনের ছক কষবে? পুলিশ সূত্রের খবর, স্বামী-বিচ্ছিন্না ওই মহিলার দিলীপের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। সম্প্রতি ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। এক পুলিশকর্তা বলেন, “দিলীপ কারও কাছ থেকে একটি আংটি কিনে বিক্রি করে ফেলেছিল। আংটির মালিক টাকা দাবি করলে, সে মহিলার কাছে দু’হাজার টাকা চায়। এই নিয়েও দু’জনের ফের ঝগড়া হয়। দিলীপ তখন মহিলাকে ‘দেখে নেব’ বলে শাসায়।” পুলিশের সন্দেহ, ঝগড়ার জেরে আক্রোশবশত দিলীপই মহিলাকে নির্যাতন করে খুনের ছক কষে। তবে কারা তার সঙ্গী ছিল, এ বিষয়ে পুলিশ অন্ধকারে।
তবে পার্ক স্ট্রিটে এক মহিলাকে নাইট ক্লাব থেকে বেরোনোর সময়ে লিফ্ট দেওয়ার নাম করে গাড়িতে তুলে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার সময়ে যা ঘটেছিল, বরাহনগরের ঝুপড়িবাসিনীর ক্ষেত্রেও পুলিশের একাংশ একই প্রশ্ন তুলেছে। দিলীপের সঙ্গে মহিলার সম্পর্কের বিষয়টি জানার পরে পুলিশের একটি মহল, মহিলার ‘চরিত্র’ ও ‘জীবনযাপন’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। বরাহনগরের মহিলা যৌনকর্মী ছিলেন বলেও দাবি করে তদন্তকারীদের একাংশ।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, সার্ভিস রোডে যেখানে মহিলাকে ফেলে পালায় দুষ্কৃতীরা, তার কাছেই রাজচন্দ্রপুরে একটি বাড়িতে মহিলার যাতায়াত ছিল। ঘটনার দিন সকালে বালি খালে মহিলাকে দেখা গিয়েছিল বলেও পুলিশের একাংশের দাবি। তবে গোয়েন্দা বিভাগের এক পুলিশকর্তার কথায়, “মহিলার উপরে নির্যাতনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত এগোচ্ছে।” |