উদ্যোগী মমতার দূত দিল্লিতে
ইনফোসিসের জট খুলতে সূত্র কেন্দ্রের
নফোসিসের এসইজেড মর্যাদাপ্রাপ্তি নিয়ে জট খুলতে এ বার রাজ্যকে প্রস্তাব দিল কেন্দ্রীয় সরকার।
সম্প্রতি রাজ্যের শিল্পসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা জানান, রাজ্য যদি রাজি থাকে তা হলে আগের বামফ্রন্ট সরকারের করা পুরনো সুপারিশের ভিত্তিতে কেন্দ্র ইনফোসিসকে এসইজেড মর্যাদা দিতে পারেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে রাজ্যকে এসইজেডের ছাড়পত্র দিতে হচ্ছে না, আলাদা করে সুপারিশও করতে হচ্ছে না। ফলে বিধানসভা ভোটের সময় এসইজেড বা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের বিরুদ্ধে তৃণমূল যে অবস্থান নিয়েছিল, তার থেকেও তাদের সরতে হচ্ছে না। আবার ইনফোসিসকে আগের রাজ্য সরকার যে সব সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছিল, এসইজেড হওয়ায় তারা সেগুলি পাবে। এবং এই নিয়ে জট খোলার সম্ভাবনা দেখা দেবে।
শিল্পসচিব জানিয়েছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে পুরো পরিস্থিতি জানাবেন। তার পরে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাম আমলে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ার পরে এসইজেডের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এবং তাঁর দল যে নীতিগত ভাবে এসইজেডের পক্ষে নন, ভোটের আগে সে কথা বারবার ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। ভোটের পরেও তিনি এবং তাঁর শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় একাধিক বার সে কথা জানিয়েছেন। কিন্তু ইনফোসিসের মতো তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রণী সংস্থাকে রাজ্য থেকে চলে যেতেও দিতে চায় না রাজ্য সরকার। জট কাটাতে তাই মমতা উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁরই নির্দেশে রাজ্যের শিল্পসচিব বাসুদেববাবু গত সপ্তাহে দিল্লিতে এসে আনন্দ শর্মার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
পরে আনন্দ শর্মা বলেছেন, “আগে যে এসইজেড নিয়ে মমতা এবং তাঁর দলের আপত্তি ছিল, ইনফোসিস বা তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের এসইজেড তার থেকে আলাদা। এর জন্য হাজার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করার দরকার হয় না।” বস্তুত, ইনফোসিসের এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের জন্য মাত্র ৫০ একর জমি প্রয়োজন ছিল। সেই জমিও সরকার গত বছর নভেম্বরে সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু যত ক্ষণ না এসইজেড তকমা পাচ্ছে, বিশেষ আর্থিক সুবিধাগুলি পাবে না ইনফোসিস। সংস্থার বক্তব্য, তা হলে তাদের পক্ষে মুনাফা বাড়ানোও সম্ভব হবে না। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কলকাতায় গিয়েছিলেন সংস্থার প্রাণপুরুষ নারায়ণমূর্তি। তখনই তিনি স্পষ্ট করে দেন, ইনফোসিস রাজ্য সরকারের কয়েকটি শর্ত পূরণের অপেক্ষায় রয়েছে। এর পরেই মমতার নির্দেশে দিল্লি আসেন শিল্পসচিব।
এসইজেড কী ভাবে কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে আনন্দ শর্মা পশ্চিমবঙ্গেরই মণিকাঞ্চনের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “২০০৫ সালে মাত্র ২০ একর জমিতে এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চল গড়ে উঠেছিল। তখন তাদের রফতানির পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি টাকা। গত ছ’বছরে সেই রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, স্বল্প পরিমাণ জমিতেও গুরুত্বপূর্ণ এসইজেড গড়ে তোলা সম্ভব।” মণিকাঞ্চনে অলঙ্কার ও রত্নের কাজ করেন গরিব মানুষরাই। তাঁদের বেশির ভাগই মহিলা। সেটাও যে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মণিকাঞ্চনের বড় সাফল্য, বৈঠকে সে কথা উল্লেখ করেন আনন্দ শর্মা। একই সঙ্গে তিনি শ্রীপেরুমবুদুরে দেশের প্রথম বিশেষ আর্থিক অঞ্চলটিরও উল্লেখ করেন। সেখানে কর্মসংস্থান এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যাতে শ্রমিকদের বেতন হার ছ’গুণ বেড়ে গিয়েছে।
বিশেষ আর্থিক অঞ্চল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যেও দ্বিমত ছিল। তবে রাজ্যকে দিল্লি একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেয়, এসইজেড সংক্রান্ত নীতির মন্দ দিকটা বাদ দিয়ে ভালটাও গ্রহণ করা যায়। অর্থাৎ, হাজার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ না করে ছোট এলাকার মধ্যে কোনও শিল্পকে এই মর্যাদা দেওয়া যায়, যাতে তারা প্রয়োজনীয় আর্থিক সুযোগ সুবিধাগুলি পেতে পারে।
এসইজেড তকমা না থাকলে ইনফোসিসের পক্ষে যে ব্যবসা চালানো কঠিন, সেটা রাজ্য সরকারও বুঝতে পারছে। কিন্তু নীতিগত ভাবে এসইজেডের বিরুদ্ধে হওয়ায় মমতার সরকার সেই শর্ত পূরণ করতে পারছে না। ফলে পুরো পরিস্থিতি বিশ বাঁও জলে। এই অবস্থায় বৈঠকে বাসুদেববাবু জানান, কেন্দ্রই বরং ইনফোসিসকে এসইজেডের মর্যাদা দিক। কিন্তু সংবিধানগত ভাবে কেন্দ্রের পক্ষে একতরফা ভাবে সেই মর্যাদা দেওয়া সম্ভব নয়। সে কথা জানিয়ে আনন্দ শর্মা বলেন, “সংবিধান অনুসারে রাজ্য সরকারকে আগে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করতে হবে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে।” কিন্তু এসইজেড নিয়ে অবস্থানে অনড় থাকা মমতার পক্ষে এই সুপারিশ করাও সম্ভব নয়। তা হলে? তখন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীই প্রস্তাব দেন, বাম সরকারের আমলেই ইনফোসিসকে এসইজেড মর্যাদা দিতে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করা হয়েছিল। রাজ্যের যদি আপত্তি না থাকে তা হলে সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই ইনফোসিসকে ছাড়পত্র দিতে পারে কেন্দ্র। তাতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.