শাড়ির ভাঁজে চোরকাঁটা ক্যানসারের আশঙ্কাও
শাড়িতেও বিপদের গন্ধ!
নীল শাড়ির শ্রীমতি-ই হোক বা ময়নাপাড়ার কৃষ্ণকলি, শাড়ি আক্ষরিক অর্থেই নারীর অঙ্গাঙ্গী। সেই শাড়িও ডেকে আনতে পারে রোগ, চিকিৎসকদের আশঙ্কা এমনই।
মূল বিপদটা যদিও শাড়ি নয়, শাড়ির অনিবার্য সঙ্গী সায়া থেকে। মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগিণীর উদাহরণ সামনে এনে সেখানকার চিকিৎসকেরা দেখিয়েছেন শাড়ি পরার সময়ে সায়ার দড়ির শক্ত ফাঁস থেকে কী ভাবে কোমরে ঘা হয় আর কী ভাবে সেই ঘা রূপান্তরিত হতে পারে ক্যানসারে।
ওই চিকিৎসকদের লেখা প্রবন্ধ ইতিমধ্যেই দেশের কয়েকটি নামী জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত এই ধরনের ক্যানসার খুবই কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও সতর্ক থাকা দরকার। ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে শাড়ির জনপ্রিয়তা যেহেতু খুবই বেশি এবং বহু মহিলাই যেহেতু সায়ার দড়ি খুব শক্ত করে বাঁধেন, তাঁদের কাছে এই বার্তা পৌঁছনোটাও জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা। শুধু সায়া নয়, সালোয়ার-কামিজের দড়িও অনেকেই শক্ত করে বাঁধেন। এমনকী বহু পুরুষের মধ্যেও পায়জামার দড়ি আঁট করে বাঁধার প্রবণতা রয়েছে। তাই এ সম্পর্কে সকলেরই সচেতন থাকা উচিত।
কী ভাবে জানা গেল এই বিপদের কথা? বছর চল্লিশের এক মহিলা মুম্বইয়ের হাসপাতালে এসেছিলেন কোমরে একটা ঘা নিয়ে। চিকিৎসককে তিনি জানিয়েছিলেন, প্রায় সব সময়েই শাড়ি পরেন তিনি। কয়েক মাস আগে তাঁর কোমরে এক ধরনের অ্যালার্জি হয়েছিল। লালচে দাগ ছড়িয়ে গিয়েছিল অনেকটা অংশেই। তা থেকে এক সময় ঘা হয়ে যায় কোমরে। ওই জায়গাটা ফুলে যেতে শুরু করে আর তা থেকে রস গড়ানো শুরু হয়। ভয় পেয়েই শেষ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি।
তার পর? সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রথমে সায়ার দড়ির কথাটা তাঁদের মাথায় আসেনি। তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন, কোমরে সব সময়ে কোনও কিছুর ঘষা লাগে কি না। তখনই ওই মহিলা তাঁদের জানান, খুব আঁটোসাঁটো ভাবে সায়ার দড়ি বাঁধা তাঁর বরাবরের অভ্যাস। ২৫ বছর ধরে ওই ভাবেই শাড়ি পরছেন তিনি। তা থেকে মাঝেমধ্যেই তাঁর নানা রকমের অ্যালার্জিও হয়েছে। এই সূত্র ভাবিয়ে তোলে চিকিৎসকদের। পরীক্ষা করে দেখা যায়, ঘা-টা সাধারণ নয়, ‘স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’। অস্ত্রোপচার ও পরবর্তী ধাপের চিকিৎসার পরে আপাতত ওই মহিলা বিপন্মুক্ত বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
গরমের দেশে আঁটোসাঁটো পোশাক পরলে কোমরে বা হাতের তলায় ঘাম জমে চুলকানি বা ওই ধরনের সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু অনেকেই সেটা না সারিয়ে রেখে দেন। সেটাই যথেষ্ট ক্ষতিকর বলে মনে করছেন ক্যানসার চিকিৎসকেরা। ক্যানসার-শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “সায়ার দড়ি থেকে ঘা অনেকেরই হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করে রেখে দিলে, তা ক্যানসারে পরিণত হওয়ার নজির রয়েছে। মহিলাদের তাই খুব সাবধান থাকা উচিত।” একই কথা বলছেন চর্মরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় ঘোষও। তিনি জানিয়েছেন, পোশাক থেকে অনেকেরই অ্যালার্জি হয়। তাকে বলে ‘কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস’। কিন্তু গ্রীষ্মপ্রধান দেশে শক্ত করে দড়ি বেঁধে পোশাক পরলে চামড়ার এক ধরনের সমস্যা হয়, তার নাম ‘ফিকশনাল ডার্মাটাইটিস’। যাঁদের ওজন বেশি এবং ঘামও বেশি হয়, তাঁদের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে তিনি জানান। সঞ্জয়বাবুর কথায়, “এখনও পর্যন্ত এ থেকে ক্যানসারের ঘটনা কম। কিন্তু দেশ জুড়ে নানা ধরনের ক্যানসার যে হারে বাড়ছে, তাতে সাবধান থাকাটা জরুরি।”
তা হলে বিকল্প পথ কী? ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত তাঁর শৈশবের স্মৃতি থেকে জানালেন, তখন বহু মেয়ে ইজেরের দড়িও এত শক্ত করে বাঁধত যে কোমরে লাল দাগ হয়ে যেত, কখনও কখনও ঘা-ও হত। “একটাই পথ, মেয়েদের সচেতন হতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরাই তো শাড়ি পরেন, তাঁরা এই ক্ষতির দিকটা বুঝবেন না কেন? ক্যানসারের কথা যদি ভাবতে না-ও পারেন, অন্তত রক্ত চলাচলে বাধার কথা তো তাঁদের টের পাওয়ার কথা।” কিরণ উত্তম ঘোষ বললেন, “সায়ার ফিতে সরু না হয়ে খানিকটা চওড়া করে নিলে এই সমস্যাটা অনেকটাই কমে যাবে বলে আমার মনে হয়।” দড়ির বদলে ইলাস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে কি? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ইলাস্টিকও ক্ষতিকারক। সঞ্জয়বাবু বলেন, “ইলাস্টিক বেশি ব্যবহার করলে কেমিক্যাল লিউকোডার্মা বা শ্বেতির মতো রোগ হয়।”
এখনকার প্রজন্ম অবশ্য পোশাকে বৈচিত্র্য ভালবাসে। কখনও শাড়ি, কখনও সালোয়ার বা স্কার্ট, কখনও ট্রাউজার্স এই রকমফের হয়তো তাঁদের সায়ার বিপদ থেকে খানিকটা দূরে রাখছে। কিন্তু সালোয়ার বা জিনস-ও খুব আঁট করে পরার প্রবণতা এঁদেরও অনেকের রয়েছে। সাহিত্যিক বাণী বসু বললেন, আঁটোসাঁটো পোশাকের প্রতি মেয়েদের ঝোঁকটা অনেকটাই সমাজের চাপিয়ে দেওয়া। তিনি বলেন, “বাজার বলে দিচ্ছে, সুন্দর হওয়ার মাপকাঠি সরু কোমর। তাই বহু মেয়েই মনে করছে টাইট পোশাক পরতে হবে। এই ধারণাটা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.