শিল্প ধর্মঘট বলে ২৮ তারিখের পূর্ব নির্ধারিত দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফর্ম পূরণের দিন পিছিয়ে দেওয়ার নোটিস দিয়েছেন নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ। এর প্রতিবাদে শনিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত তাঁকে ঘেরাও করে রাখে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) এবং কলেজ পড়ুয়াদের একাংশ। অধ্যক্ষ বুদ্ধদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ‘ দাবি, ছাত্র-ছাত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত।
কলেজ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে ফর্ম পূরণের তারিখ পরিবর্তনের নোটিস দেখে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। তাঁদের অভিযোগ, অধ্যক্ষের ওই নোটিস পরোক্ষে ২৮ তারিখ ‘ছুটি’ ঘোষণারই সামিল। ফর্ম পূরণ ছাড়াও এখন বিএসসি তৃতীয় বর্ষের প্র্যাকটিকাল পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। ফলে তাঁদের ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতিও ব্যাহত হবে। টিএমসিপি-রও দাবি, ওই নোটিস দেওয়ার মাধ্যমে আসলে গোটা কলেজই বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। কারও মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে অধ্যক্ষ একক ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও অভিযোগ।
যদিও ঘটনা হল, এ দিন দুপুরেই অধ্যক্ষ কলেজের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু সিংহের অভিযোগ, “অধ্যক্ষকে লিখিত ভাবে আপত্তি জানাই। |
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশও সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু তিনি কারও আপত্তি শোনেননি।” ওই নোটিস কি পরোক্ষে ধর্মঘটকেই ‘সমর্থন’ করছে? বিএসসি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রবি দে বলেন, “সারা বছর আমাদের একটিও প্র্যাকটিকাল ক্লাস হয়নি। অথচ ১৬ মার্চ থেকে পরীক্ষা। এই সময় আমাদের কাছে একটি দিনও নষ্ট করা চলবে না। অধ্যক্ষকে এই অসুবিধার কথা জানালেও তিনি শুনছেন না।”
অধ্যক্ষ বলেছেন, “আগেও যে দলই বন্ধ বা ধর্মঘট ডাকুক না কেন, আমরা ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কই তখন তো কেউ কিছু অভিযোগ করেননি!”
নবদ্বীপের তৃণমূল শিক্ষা সেলের সদস্য তথা ওই কলেজেরই শিক্ষক মনোজিৎ রায়ের অভিযোগ, “এ দিনের আলোচনায় বুদ্ধদেববাবুকে আপত্তির কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু আগের বারের মতোই তিনি কারও কথা শোনেননি।” গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ওয়েবকুটার ডাকা কর্মবিরতির দিনও অধ্যক্ষ কলেজ বন্ধ রেখেছিলেন বলেও মনোজিৎবাবুর দাবি। অধ্যক্ষের কথায়, “ধর্মঘটের দিন কলেজ খোলা থাকবে কি থাকবে না, আমরা আসতে পারব কি পারব না--পুরোটাই নির্ভর করছে ওই দিনের পরিস্থিতির উপরে।” কলেজ পরিচালন সমিতির পক্ষে কাশীনাথ মাপদার জানিয়েছেন, তাঁরা অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবেন। পরিচালন সমিতিরই সদস্য তথা নবদ্বীপের পুরপ্রধান, তৃণমূলের বিমানকৃষ্ণ সাহার অভিযোগ, “অধ্যক্ষ রাজনীতি করছেন। সরকারের নির্দেশ মানছেন না।” সব মিলিয়ে নোটিসকে ঘিরে কলেজে দিনভর উত্তেজনা ছিল। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে রাত পর্যন্ত বুদ্ধদেববাবুকে ছাত্রছাত্রীরা ঘেরাও করে রাখেন। অধ্যক্ষ অবশ্য তাঁর সিদ্ধান্তে ‘অনড়’। তাঁর বক্তব্য, “সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। তাহলে ভুল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে।” |