বিশ্বকাপ জেতার দশ মাস পর কার্যত বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলতে নামার মতো পরিস্থিতিতে ফিরে যাচ্ছে ধোনির ভারত। সিডনিতে রবিবার অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে তবেই তারা ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে টিঁকে থাকতে পারবে। ফাইনালের টিকিট পেতে গেলে তার পরেও শেষ ম্যাচে হারাতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। যারা কি না শেষ ম্যাচে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে।
মরণ-বাঁচন ম্যাচ খেলতে নামার আগে বিতর্কই যে তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ সেটা আরও এক বার বুঝিয়ে দিলেন ধোনিরা। সিডনিতে ফোন করে জানা গেল, এ দিন টিম রুদ্ধদ্বার প্র্যাক্টিস করেছে। সেখানে সমর্থক থেকে শুরু করে মিডিয়া কারও প্রবেশাধিকার ছিল না। সাংবাদিকদের সামনে প্রাক-ম্যাচ সম্মেলন করতে এলেন ঠিকই ভারত অধিনায়ক। কিন্তু সেটা সাংবাদিক সম্মেলন কক্ষে। ধোনি-সহবাগ প্র্যাক্টিস করতে করতে নিজেদের মধ্যে কথা বললেন কি না, প্রিয়তম সিডনিতে নামার আগে সচিনের দীর্ঘ, ব্যক্তিগত অনুশীলনের ধরন কেমন ছিল, ধোনির সঙ্গে সচিনের শরীরী ভাষা কেমন থাকল, সে সবের লাইভ ছবি তোলার অনুমতি নেই। অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় আড়াই মাস রয়েছে ভারতীয় দল। এমন নিষেধাজ্ঞা এই প্রথম আরোপ হল। এমনকী টেস্ট সিরিজ ০-৪ হারার পরেও এ ভাবে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়নি সাংবাদিক, সমর্থকদের সামনে। |
কিন্তু সংবাদমাধ্যমকে গেটের বাইরে রাখলেও প্রথম একাদশ নিয়ে জল্পনা তাতেও থামানো যায়নি। তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের কে বসবেন রবিবার? সারা দিন ধরে সিডনিতে এ নিয়ে যথেষ্টই কথাবার্তা চলল। প্র্যাক্টিস থেকে আগে আগে সহবাগ বেরিয়ে যাওয়ায় অনেকের মনে হতে থাকে তিনি রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নামছেন না। খেলবে সচিন-গম্ভীরের ওপেনিং জুটি। সংবাদসংস্থার সংযোজন, সাংবাদিক সম্মেলনে আবার ধোনি ইঙ্গিত দিয়েছেন তিন জনকেই খেলানো হতে পারে। “আমাদের তিন জন স্পেশ্যালিস্ট ওপেনার রয়েছে। তিন জনেই ভাল প্লেয়ার। ওরা প্রত্যেকেই ভাল গতিতে রান করতে পারে। ওরা যেমন ভাল বাউন্ডারি মারে তেমনই ভাল সিঙ্গলস নেয়। ওদের বসিয়ে পিঞ্চ হিটার পাঠানোর কোনও কারণ আমি দেখছি না,” বলেছেন ভারত অধিনায়ক। ধোনির কথা শুনে যদিও অনেকের মনে হয়েছে, এটা যতটা না তাঁর ভেতরকার কথা তার চেয়ে বেশি টিমের মধ্যে শান্তির বাতাবরণ ফেরানোর প্রয়াস। শেষ পর্যন্ত তিন সিনিয়রকে রেখেই প্রথম একাদশ গড়া হয় কি না তা দেখার জন্যও রবিবার দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার বলে সিডনি থেকে বললেন কেউ কেউ।
দুমড়ে থাকা বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জন্য চিন্তার খবর বরং জাহির খানের চোট। ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রায় খেলতেই পারেননি জাহির। চোট থাকলেও তাঁর জায়গায় বদলি পেসার পাঠানো হয়নি। এখন মরণ-বাঁচন ম্যাচের আগে চোট লুকোনোর অভ্যেস ফের ভারতীয় দলকে ভোগাতে চলেছে। জাহিরের জায়গায় বিনয় কুমারকে যে খেলানো হবে, শোনা যাচ্ছে তিনিও পুরো সুস্থ নন। মনোজ তিওয়ারিকে নামানোর কোনও ইঙ্গিত রবিবারের ম্যাচের আগেও নেই। ধোনি এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে বরং বলে গেলেন, তিনি সুরেশ রায়না এবং রোহিত শর্মার ব্যর্থতায় হতাশ নন। “সব সময় সবাই সফল হবে এমন কোনও কথা নেই। সে কতটা চেষ্টা করছে সেটাও দেখতে হবে,” বলছেন ধোনি।
তাঁর আগের দিনের মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের ব্যাপারেও মুখ খোলেন ধোনি। সিডনিতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আপনারা যদি আগের দিন আমার সাংবাদিক সম্মেলনটা নিজেরাই শোনেন তা হলে বুঝতে পারবেন আমি ঠিক কী বলেছিলাম। আমার মন্তব্যের একটা অংশ তুলে ধরে নিয়ে মানে করলে তো চলবে না। পুরো ব্যাখ্যাটা শুনতে হবে। আগেও এ রকম হয়েছে। একটা নির্দিষ্ট অংশ তুলে দিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। অথচ তার আগে-পরে আমি যে কথাগুলো বলেছি সেগুলো উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো থাকলে দেখা যাবে হয়তো ব্যাখ্যাটা অন্য রকম।” বিতর্কের ফলে ড্রেসিংরুমে মেলামেশায় সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে ধোনি অবশ্য স্বীকার করেন, “একটা অস্বস্তি হয় ঠিকই। আপনার মনে হতে পারে কোনও সতীর্থ হয়তো সত্যি সত্যিই ভাবছে, এই লোকটা এটাই বলেছে। আবার আমারও মনে হতে পারে, ও-ও কিছু একটা বলেছে। কিন্তু এক বার নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা হয়ে গেলে এই সমস্যাটা আর থাকবে না।” বলে ধোনি দ্রুত যোগ করেন, “একটা কথা বলে দিতে পারি। এ সব বিতর্ক আমাদের পারফরম্যান্সের ওপর দশ শতাংশও প্রভাব ফেলে না।”
সহবাগ যে বলেছেন তাঁর কোনও দরকারই নেই অধিনায়কের সঙ্গে গিয়ে কথা বলার, সেই প্রসঙ্গ তুললে ধোনির জবাব, “ঠিকই তো বলেছে। আমরা কেন কথা বলতে যাব? আমাদের মধ্যে যখন কোনও সমস্যা নেই, তখন কীসের সমাধান করব?” |