যোগাযোগ, খবর আর বিনোদনের দুনিয়ায় নেট পরিষেবার বাজার বাড়াতে আঞ্চলিক ভাষাকেই পাখির চোখ করছে তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিকগুলি।
যেমন, চলতি বছরেই নিজেদের ‘মেসেঞ্জার’ পরিষেবায় বাংলা হরফে লিখে ‘চ্যাট’ করার সুবিধা চালু করতে চায় ইয়াহু। মেট্রো শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভারতে দ্বিতীয় ও স্তরের শহরের লোভনীয় বাজার ধরতে ইতিমধ্যেই বাংলা-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় বেশ কিছু পরিষেবা দিচ্ছে যারা। শুধু এই মার্কিন ইন্টারনেট পরিষেবা সংস্থাই নয়। ভারতে ব্যবসার টানে আঞ্চলিক ভাষা নির্ভর পরিষেবার উপর জোর দিচ্ছে সবাই নেট পরিষেবা সংস্থা গুগ্ল, সফট্ওয়্যার সংস্থা মাইক্রোসফ্ট, মোবাইল ফোন নিমার্তা নোকিয়ার মতো বহুজাতিক।
ইয়াহু ইন্ডিয়া-র গবেষণা ও উন্নয়ন (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) বিভাগের প্রধান শৌভিক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “দেশে ইন্টারনেট বিপ্লবের পরবর্তী অধ্যায় শুরু হবে আঞ্চলিক ভাষার হাত ধরেই। তাতে সামিল হতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি তৈরি করতে চায় আমাদের সংস্থা। যে কারণে, আমেরিকার বাইরে ইয়াহু-র বৃহত্তম গবেষণা কেন্দ্র গড়া হয়েছে এ দেশের মাটিতেই। বেঙ্গালুরুতে।”
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, আঞ্চলিক ভাষায় খবর, খেলার বিবরণ, সিনেমা বা গানের মতো হাজারো জিনিসের চাহিদা মেটাতে কেন সংস্থাগুলি এত উৎসাহী, তা বোঝা কঠিন নয়। কারণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন এ দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৭ শতাংশ মানুষ। কিন্তু বছর তিনেক পরেই তা দাঁড়াবে প্রায় ৪০ শতাংশে। এবং মেট্রো শহরের দৌলতে নয়, এই বৃদ্ধি মূলত হবে ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরগুলির হাত ধরে।
স্রেফ সংখ্যার জোরে এখন ছোট শহরের রমরমা। নেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার নিরিখে ইতিমধ্যেই বড় শহরকে টপকে গিয়েছে ছোট শহরগুলি। এখনই ৬০ শতাংশ বাজার সমবেত ভাবে তাদের দখলে। কিন্তু ওই বিপুল সম্ভাবনাময় বাজার ধরার প্রাথমিক শর্তই হল পরিষেবাকে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারকারীদের উপযুক্ত করে তোলা। আর সেই কারণেই আঞ্চলিক ভাষার পরিষেবা দিতে এত বেশি করে ঝাঁপাচ্ছে তারা।
আবার অনেকের মতে, আঞ্চলিক ভাষায় (চ্যাট)-এর সুবিধা থাকলে, স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন সবাই। কারণ, কলেজের বান্ধবী থেকে শুরু করে অফিসের সমস্যা। রান্নার নতুন রেসিপি থেকে সংসারের কুটকচালি। এই সব কিছুই তো চ্যাটের সময় কম্পিউটারের পর্দায় ‘অনর্গল’ লিখে চলি আমরা। তাই সেখানে হঠাৎ ‘চন্দ্রবিন্দু’ লিখতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়। যুক্তাক্ষর ভেঙে লিখতে গিয়ে কেটে যায় কথোপকথনের ছন্দ। তাই চাহিদা মেটাতে বাংলা-সহ অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় চ্যাটের সুযোগ আনতে চায় ইয়াহু।
আঞ্চলিক ভাষার উপর জোর দিয়ে ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলের বাজার ধরতে চায় নেট ব্যবহারের ব্যকরণ বদলে দেওয়া গুগ্ল-ও। ভারতে সংস্থার অন্যতম কর্তা বিনয় গোয়েলের দাবি, “এ দেশে ছোট শহরে ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ছে ৩৭ শতাংশ হারে। এ ক্ষেত্রে তারা পিছনে ফেলে দিয়েছে বড় শহরগুলিকেও।”
একই পথে হাঁটছে বিল গেটসের মাইক্রোসফ্টও। ২০০৮ সালে তাদের ভাষাইন্ডিয়া ডট কম ব্যবহার করতেন ৫০ হাজার মানুষ। এখন তা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। ক্রেতাদের জন্য আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের সুবিধাযুক্ত প্রযুক্তি এনেছে মোবাইল নির্মাতা নোকিয়া-ও। মোবাইলের হাত ধরেই বদলে যাচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরনও। কারণ, হাতের তালুতে বন্দি মোবাইলেই এখন পছন্দের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, খবরের হেডলাইন কিংবা পছন্দের গান খুঁজে নিচ্ছে আজকের প্রজন্ম। চাহিদা তৈরি হচ্ছে ভিন্ন ধরনের ‘কনটেন্ট’-এর। যেমন, এ ধরনের চাহিদা আঁচ করে ইতিমধ্যেই কয়েকটি প্রথম সারির আঞ্চলিক সংবাদপত্রের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে ইয়াহু। সংস্থার ম্যানেজিং এডিটর প্রেম পানিক্করের দাবি, আগামী ৫ বছরে প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে অন্তত ২ কোটি করে। আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়বে ‘কনটেন্ট’-এর চাহিদা। যা আগাম আঁচ করেই আঞ্চলিক ভাষায় পরিষেবার উপর এত জোর দিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। |