ভেড়ি ভরছে জঞ্জালে, বর্জ্য-ব্যবস্থাপনায় ‘ফেল’ বিধাননগর
ধুনিকতার মানদণ্ডে ডাহা ফেল করবে সল্টলেক। কোনও শহরের আধুনিকতার অন্যতম নিরিখ হল বিজ্ঞানসম্মত জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা। শহরের বয়স পঞ্চাশ পেরোতে চলল, অথচ সল্টলেকের যাবতীয় জঞ্জাল ফেলে এখনও পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকার একটি ভেড়ি ভরাট করা হচ্ছে। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা করা নিয়ে বিধাননগর পুরসভার নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনাও নেই।
সল্টলেকের বাড়ি, রাস্তা এবং বাজার থেকে সংগ্রহ করা সব জঞ্জাল পূর্ব কলকাতায় মোল্লার ভেড়িতে ফেলে দেওয়া হয়। প্রায় সাড়ে ৫০০ বিঘার সেই ভেড়ি জঞ্জালে প্রায় ভরাট হয়ে গিয়েছে। কেবল বিধাননগর পুরসভা এলাকাই নয়, নবদিগন্ত শিল্পতালুকের জঞ্জালও ফেলা হয় ওই ভেড়িতেই। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জঞ্জাল) দেবাশিস জানা স্বীকার করেছেন, “এই মুহূর্তে সল্টলেকের যাবতীয় জঞ্জাল কেবল জড়ো করা হয়। জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা কিছুই হয় না।” পরে অবশ্য তিনি জানান, কেএমডিএ যদি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার জন্য পরিকাঠামো তৈরি করে দেয়, তা হলে বিধাননগর পুরসভা তা ব্যবহার করতে প্রস্তুত।
বিজ্ঞানসম্মত জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে জঞ্জাল থেকে সম্পদ তৈরি করা সম্ভব। কী ধরনের সম্পদ? পচনশীল জঞ্জাল থেকে জৈব সার তৈরি করা যায়। আবার, অনেক জায়গায় পচা জঞ্জাল থেকে যে মিথেন তৈরি হয় তা সংগ্রহ করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মিথেন গ্যাস ভয়ানক বিষাক্ত এবং তা গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে চিহ্নিত। এ ছাড়া প্লাস্টিক, কাগজ, লোহা বা কাচের মতো শুকনো বর্জ্য পুরোটাই পুনর্নবীকরণ এবং পুনর্ব্যবহার সম্ভব।
পুরসভাগুলিকে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব কেমডিএ-র। কয়েক বছর আগে কেএমডিএ সল্টলেকেও এমনই একটি বড় পরিকাঠামো তৈরি করে দেয়। সেখানে পচনশীল জঞ্জাল ও শুকনো জঞ্জাল পৃথক করার জায়গা এবং জৈব সার তৈরির জন্য ২৫০ ‘পিট’ বা চৌবাচ্চা তৈরি করে পুরসভা। সেই পরিকাঠামো আগের বামফ্রন্ট পুরবোর্ড যেমন ব্যবহার করেনি, বর্তমান পুর বোর্ডেরও সে দিকে নজর নেই।
দেবাশিসবাবু বলেন, “জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। যা করার কেএমডিএ করবে। পরিকাঠামো তৈরি হলে আমরা কাজ শুরু করব।” কিন্তু কেএমডিএ-র এক কর্তা বলেন, “আমরা একটা পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়েছিলাম। সেটা কোনও দিনই ব্যবহার করা হয়নি। উল্টে তার উপরে জঞ্জাল ফেলায় সেটি কিছুটা নষ্ট হয়েছে। সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।” আশা করা যায়, তখন পুরসভা জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করবে। কিন্তু মোল্লার ভেড়িরই এক পাশে একটি বহুজাতিক সংস্থার সহায়তায় ‘সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট’ (সেফ) নামে একটি পরিবেশ সংগঠন ১০ টন জৈব সার তৈরি করা যায় এমন পরিকাঠামো ব্যবহার করে জঞ্জাল থেকে নিয়মিত সার তৈরি করছে। সেফ-এর কর্ণধার দীপায়ন দে জানান, নবদিগন্তের বিভিন্ন অফিস থেকে ফেলে দেওয়া কাগজ সংগ্রহ করা হয়। সেই কাগজ দিয়ে মণ্ড তৈরি করে অফিসেরই কাজে যাতে ব্যবহার করা যায়, এমন সব সামগ্রী তৈরি করছেন তাঁরা। এই ভাবে তৈরি সব জিনিস কিনে নিচ্ছে একটি বহুজাতিক সংস্থা। সেখানে কেবল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই হচ্ছে না, পূর্ব কলকাতার ভেড়ি এলাকার অনেক মহিলার রোজগারের ব্যবস্থাও হয়েছে এই কাজের মাধ্যমে। নাগালের মধ্যে ‘জঞ্জাল থেকে সম্পদ’ তৈরির এ হেন নজির থাকা সত্ত্বেও বিধাননগর পুরসভা এখনও কিছু করে উঠতে পারেনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.