|
|
|
|
|
|
বটানিক্যাল গার্ডেন |
ছবি বদলায় না |
দেবাশিস দাশ |
হাইকোর্টের একাধিক নির্দেশ, একাধিক ভর্ৎসনা, আদালত নিয়োজিত কমিটির সুপারিশ, রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীর উপস্থিতি কিছুতেই বদলাল না শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচিত ছবিটা।
উদ্যানের কর্মচারীদের অভিযোগ, আদালত নিয়োজিত কমিটির সুপারিশ মেনে গঙ্গার সঙ্গে উদ্যানের সরোবরগুলির সংযোগ ব্যবস্থার সংস্কার হয়নি। দেখভালের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে কুঞ্জবন, রেন ট্রি, ওষধি গাছ, গাছের বীজের নার্সারি। ভেঙে পড়েছে অর্কিড হাউস। গ্লাস হাউসে বিরল প্রজাতির ক্যাকটাস নেই। উধাও হয়ে গিয়েছে ফার্ন জাতীয় নানা গুল্ম। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে দর্শকদের জন্য আজও তৈরি হয়নি কোনও ছাউনি। রয়েছে পানীয় জলের অভাব। ফুলের বাগান করা হলেও সেখানে ফুলগাছ প্রায় নেই। তাই সম্প্রতি বাইরে থেকে ফুল গাছ, অর্কিড এনে ‘ফ্লাওয়ার শো’ করতে হয়েছে। |
|
এই উদ্যান ২৭৩ একরের। মোট ২৫টি বিভাগ। সরোবর রয়েছে মোট ২৪টি। উদ্যানের মাটির আর্দ্রতা রক্ষা করে এই সরোবরগুলি। এগুলি পরস্পরের সঙ্গে পাইপের মাধ্যমে যুক্ত। দু’পাশের দু’টি সরোবর আবার পাইপের মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত। আগে জোয়ার-ভাটার সময়ে লকগেটের মাধ্যমে সরোবরের জলের সমতা রক্ষা করা হত। এতে জলস্তরের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি নিচু অঞ্চলের বৃষ্টির জমা জল গঙ্গায় চলে যেত। কিন্তু অভিযোগ, দীর্ঘ দিনের অবহেলায় লকগেটগুলি অকেজো হয়ে গিয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্যানের এক কর্মী বলেন, “গত ২৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এই লকগেট। সরোবর-সংযোগকারী পাইপগুলি ময়লা জমে আটকে গিয়েছে। ফলে বৃষ্টির জমা জল সরোবর ছাপিয়ে গাছের গোড়ায় জমে মাটি আলগা করে দিচ্ছে। সামান্য ঝড়ে গাছগুলি উপড়ে পড়ছে।”
|
|
কর্তৃপক্ষের এই অবহেলা নিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের করা মামলার প্রেক্ষিতে একাধিক বার উদ্যান কর্তৃপক্ষকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। কয়েকটি ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাও নেন। যেমন, উদ্যানে প্লাস্টিক ও ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়। বন্ধ করা হয় রান্না করা, বিয়ের অনুষ্ঠান, মাদকগ্রহণ, মাইক্রোফোন বাজানো ইত্যাদি। কিন্তু অভিযোগ, সরোবরগুলি বাঁচানোর জন্য কিছু করা হয়নি।
সুভাষবাবু বলেন, “সরোবরগুলির সংস্কার করাতে ২০০২-এ হাইকোর্টে মামলা হয়। আদালতের নির্দেশে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি অবিলম্বে লকগেট ও পাইপলাইন সংস্কারের কাজ করতে রায়ও দেয়। কিন্তু আজও কেন কাজ হয়নি তা খোঁজ নিয়ে দেখব। প্রয়োজনে আদালতকে ফের জানাব।” |
|
উদ্যানের কর্মচারী সংগঠন বটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া নন-গেজেটেড স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছায়া শূর বলেন, “কর্তৃপক্ষ দর্শকদের থেকে প্রবেশ মূল্যে, ক্যামেরা এবং ক্যামেরা মোবাইল নিয়ে ঢুকলেও ১০ টাকা মূল্য নিয়ে আয় বাড়িয়েছেন। কিন্তু উদ্যানের সার্বিক উন্নতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।”
যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ উদ্যানের যুগ্ম অধিকর্তা হিমাদ্রিশেখর দেবনাথ। তিনি বলেন, “উদ্যানের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গঙ্গার সঙ্গে লকগেটের মাধ্যমে সরোবরগুলির সংযোগের সংস্কারের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরকে দেওয়া হয়েছে। কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।”
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|