সম্পাদকীয় ২...
একসূত্রে নহে
কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বল আগামী বছর হইতে সব কয়টি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের জন্য একটিই পরীক্ষা চালু করিতে চাহেন। এই ব্যবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ফলকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হইবে। এই ‘একত্ববাদ’-এর বিরোধিতা করিয়াছে অনেকগুলি আই আই টি। তাহাদের বক্তব্য, বিভিন্ন রাজ্যের দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের নম্বর দিবার শর্তের মধ্যে সমতা না আনিয়া এই সংস্কার অন্যায় হইবে। একটি মাত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকিলে ছাত্রদের উপর চাপ কমিবে, ইহাও মানিতে নারাজ আই আই টির শিক্ষকরা। তাঁহাদের বক্তব্য, দ্বাদশ শ্রেণির ফলের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করিলে বরং ছাত্ররা আরও বেশি কোচিং ক্লাস-মুখী হইবে। যত দিন ছাত্রের সংখ্যা উত্তম কলেজের আসনের সংখ্যা হইতে অধিক হইবে, তত দিন ছাত্রদের চাপ মুক্তি সম্ভব নহে। সমগ্র দেশে এই সংস্কার আনিবার পূর্বে পরীক্ষামূলক ভাবে তাহার প্রয়োগের সুপারিশও করিয়াছেন আই আই টি-র প্রতিনিধিরা।
আপত্তিগুলি যুক্তিযুক্ত। ছাত্রদের ভবিষ্যৎ লইয়া, এবং দেশের শিক্ষার মান লইয়া পরীক্ষানিরীক্ষা করা মন্ত্রীর কাজ নহে। শিক্ষায় সংস্কার বিশেষজ্ঞদেরই কর্তব্য। কিন্তু ইহাই প্রধান আপত্তি নহে। সিব্বল যে গোড়া হইতেই স্কুলশিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীভূত করিতে চাহিয়াছেন, রাজ্য সরকারগুলির সিদ্ধান্ত লইবার ক্ষমতা হ্রাস করিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের নিরূপিত একটি রূপরেখার অধীনে গোটা দেশের শিক্ষাকে আনিতে চাহিয়াছেন, ইহাই সর্বাপেক্ষা আপত্তিজনক। ইহা সংবিধানবিরোধী, কারণ শিক্ষা যৌথ তালিকায় রহিয়াছে, সে বিষয়ে রাজ্যের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই সঙ্গে শিক্ষায় উৎকর্ষেরও বিরোধী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্বনিয়ন্ত্রণ এবং স্বাতন্ত্র্য হইতেই উৎকর্ষ আসে। প্রতিটি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ নিজ পাঠক্রম, শিক্ষক নিয়োগ এবং ছাত্র ভর্তির শর্ত নিজে স্থির করা প্রয়োজন, তাহাই পরস্পরের সহিত প্রতিযোগিতার দ্বারা উন্নতির প্রধান উপায়। একাধিক কলেজে আবেদন করিবার জন্য কিংবা একাধিক ভর্তির পরীক্ষায় বসিবার জন্য ছাত্রদের মধ্যে অধিক চাপ তৈরি হইবে, এ কথা মনে করিবার কারণ নাই। বরং তাহাদের সম্মুখে সুযোগ আরও বর্ধিত হইবে। একই শর্তাবলি সকলের ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রযোজ্য নহে, এক প্রতিষ্ঠানের নিকট যে গ্রহণযোগ্য নহে, অপরের কাছে সে-ই সর্বাধিক প্রার্থনীয় হইয়া উঠিতে পারে। ছাত্র তাহার ইচ্ছানুসারে প্রতিষ্ঠান বাছিয়া লইবে, প্রতিষ্ঠানও তাহার আদর্শ ও লক্ষ্যের কথা চিন্তা করিয়া ছাত্রকে স্থান দিবে, ইহাই স্বাস্থ্যকর এবং যুক্তিযুক্ত ব্যবস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ-সহ সমস্ত দেশগুলিতেই ইহা প্রচলিত ব্যবস্থা। জাতীয় স্তরের মেধা-নির্ণায়ক পরীক্ষা অবশ্যই রহিয়াছে, কিন্তু সেই পরীক্ষার ফলকে কোন প্রতিষ্ঠান কত গুরুত্ব দিবে, সে বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নাই। সিব্বল একসূত্রে সব প্রতিষ্ঠানকে বাঁধিতে চাহিয়াছেন। ইহা অপরিণামদর্শিতা।
শিক্ষাকে উন্নত করিতে হইলে তাহাকে সমান করিতে হইবে, সিব্বলের এই চিন্তাতেই গলদ রহিয়া গিয়াছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য, দর্শন, শিল্প, সকল ক্ষেত্রেই জ্ঞানের পুষ্টতা আসিয়াছে বৈচিত্র এবং বিতর্ক হইতে। এই বিচিত্রতা কেবল পড়িবার বিষয় নহে, ইহা জীবনে অনুশীলন করিবার বিষয়। রাষ্ট্রে, সমাজে এবং পারিবারিক জীবনে একই বিষয় নানা রূপে ব্যক্ত হইতে পারে, এবং তাহার প্রতিটিরই নিজস্ব পথে বিকশিত হইবার অধিকার রহিয়াছে, প্রয়োজনও রহিয়াছে। সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি নিয়মে কষিয়া বাঁধিলে সেই অমূল্য শিক্ষাটি হারাইয়া যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.