নিবেদিতা সেতুতে ফেলে উধাও দুষ্কৃতীরা বরাহনগর থেকে গাড়িতে
তুলে নিয়ে গণধর্ষণ, মৃত্যু
পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই ফের ধর্ষণ শহরে। মৃত্যুও।
গণধর্ষণের পরে এক মহিলাকে রাস্তায় ফেলে পালাল দুষ্কৃতীরা। ৩৫ বছরের ওই মহিলা পরে হাসপাতালে মারা যান।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঝুপড়িবাসী ওই মহিলা বৃহস্পতিবার রাত ৩টে নাগাদ বরাহনগরের ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের পাশে কাগজ কুড়োচ্ছিলেন। সেই সময় একটি ম্যাটাডর ভ্যান এসে থামে। গাড়িতে দু’জন ছিল। আচমকাই তারা ওই মহিলাকে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে তুলে নেয়। ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে নিবেদিতা সেতুর নীচে। শুক্রবার সকালে রক্তাক্ত অবস্থায় মহিলাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় উত্তরপাড়া হাসপাতালে। রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
বরাহনগর থানার পুলিশের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে ওই মহিলা জানিয়েছেন, তাঁকে অন্তত দু’জন পরপর ধর্ষণ করে। নিজের নাম-পরিচয় পুলিশকে বলে গিয়েছেন ওই মহিলা। যত দূর জানা গিয়েছে, ডানলপ এলাকার একটি সিনেমা হলের পিছনে ঝুপড়িতে থাকতেন তিনি।
অশক্ত শরীরে কাঁপা কাঁপা গলায় কার্যত মৃত্যুশয্যায় শুয়ে ওই মহিলা পুলিশকে কয়েক দফায় যা বলে গিয়েছেন, তা থেকে জানা গিয়েছে, গাড়িতে চাপিয়ে প্রথমে তাঁকে বেলঘরিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরে ফের বিটি রোড ধরে গাড়ি চলে আসে ডানলপে। ওই মহিলা পুলিশকে বলেছেন, তাঁর মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এক জন গাড়ি চালাচ্ছিল। অন্য জন তাঁকে চালকের কেবিনে পায়ের কাছে চেপে বসেছিল। গাড়িটি এর পরে দক্ষিণেশ্বর পেরিয়ে নিবেদিতা সেতু না-ধরে লাগোয়া রাস্তা দিয়ে নীচের দিকে নেমে যায়। সেতুর নীচে অন্ধকারে তাঁকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এখনও পর্যন্ত যা জেনেছে, ধর্ষণের পরে ওই মহিলাকে অচৈতন্য অবস্থায় গাড়িতে তুলে নিবেদিতা সেতুর উপরে ফেলে রেখে অভিযুক্তেরা পালিয়ে যায়। ভোরের দিকে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উত্তরপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যান। যেখানে ওই মহিলা পড়ে ছিলেন, সেটি হাওড়া কমিশনারেটের বালি থানার অধীন। তাই সেখানে পুলিশ একটি মামলা রুজু করেছে। যেহেতু হাওড়ার দিকে যাওয়ার রাস্তায় মহিলা পড়ে ছিলেন, তাই পুলিশের ধারণা, দুষ্কৃতীরা ভ্যান নিয়ে ওই দিকেই পালিয়ে গিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরের পরে ঘটনাটি জানতে পারে বরাহনগর থানার পুলিশ। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইন্সটিটিউট সংলগ্ন এলাকা ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অধীন। দুপুরের দিকে ওই থানা থেকেও তদন্তকারী অফিসারেরা উত্তরপাড়া হাসপাতালে গিয়ে ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু দিনভর রক্তপাতের পরে তাঁর শরীর তখন অবসন্ন, নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। সেই অবস্থাতেই পুলিশকে আগের রাতের ঘটনা বিক্ষিপ্ত ভাবে বলতে পেরেছিলেন তিনি। উত্তরপাড়া হাসপাতাল সূত্রে খবর, বিকেলের পরে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ওই মহিলাকে আর জি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু সেই সময় পুলিশ পায়নি। সন্ধের কিছু পরেই ওই কাগজকুড়ুনির মৃত্যু হয়।
বিটি রোডের মতো রাস্তায় সারা রাতই গাড়ি চলে। উপরন্তু রাস্তার দু’ধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বাস, ট্রাক, লরি। থাকে পুলিশের টহলদারি। প্রশ্ন উঠেছে, এমন একটি জায়গা থেকে সকলের নজর এড়িয়ে কী ভাবে এক জন মহিলাকে গাড়িতে তুলে নিল দুষ্কৃতীরা? মহিলার বয়ান অনুযায়ী, তাঁদের ম্যাটাডর ভ্যান দু’-দু’বার সেই ডানলপ মোড় পার করেছিল। ওই মোড়ে রাতভর থাকে পুলিশ, খোলা থাকে একাধিক চায়ের দোকান। থাকেন ট্যাক্সিচালকরা। তা হলে কি কমিশনারেট হওয়ার পরেও শহরতলির আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে? এক কথায় এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পুলিশকর্তারা রাজি নন। তবে ঘটনাটি পর্যালোচনা করতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত তাঁরা যে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, তাতে এটা পরিষ্কার যে, রাতে একা-বেরোনো কোনও মহিলার পক্ষে ওই এলাকা নিরাপদ নয়। পুলিশের ধারণা, ভোর হওয়ার আগে বেরোলে অনেক বেশি কাগজ কুড়োনো যাবে, এটাই সম্ভবত ছিল ওই মহিলার উদ্দেশ্য। ডানলপের আশপাশে যে একাধিক লরি স্ট্যান্ড রয়েছে,
সেখানকারই কেউ তাঁকে কিছু দিন ধরে নজর করছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান।
তা হলে কী করছিল রাতের পুলিশ? রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কমিশনারেট চালু হলেও পর্যাপ্ত পুলিশ দেওয়া হয়নি। গাড়িও কম। সব মিলিয়ে পরিকাঠামোর অভাব যথেষ্ট। তাই যথাযথ কাজ করার ক্ষেত্রে খানিকটা অসুবিধা থেকেই গিয়েছে।” ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ইতিমধ্যেই অ্যাডিশনাল ডিসি বিশ্বজিৎ ঘোষের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করেছি। আমি নিজে গোটা বিষয়টি তদারকি করছি। কোনও শিথিলতা হবে না।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.