|
|
|
|
‘চাপে পড়ে’ ধর্ষণের নালিশ জানাল নাবালিকা |
রাতভর থানায় আটক পরীক্ষার্থী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দিনহাটা |
গর্ভবতী হয়ে পড়া নাবালিকার মিথ্যে অভিযোগে রাতভর থানায় আটকে থাকতে হল এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে। বুধবার কোচবিহারের দিনহাটা থানায় ওই পরীক্ষার্থীকে আটকে রাখে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশের কাছে অভিযোগকারিণী মত বদলে প্রতিবেশী অপর এক ছাত্রের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সঙ্গে থানায় আটকে থাকা ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নির্দোষ বলে জানিয়ে দেন। এ দিন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন সেই প্রেমিক ভয় দেখিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ওই কিশোরের নামে তাকে মিথ্যে অভিযোগ করতে বাধ্য করিয়েছে বলে জানিয়ে দেয়। এর পরেই ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন পরীক্ষার্থী এবং তার পরিবারের লোকেরা। কোচবিহারের ডিএসপি(ক্রাইম) রাণা মুখোপ্যাধ্যায় বলেন, “‘ওই নাবালিকা প্রথমে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর নামে অভিযোগ করায় তাকে থানায় আনা হয়। পরে অন্য জনের নামে লিখিত অভিযোগ করার পাশাপাশি আটক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী র বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই বলে জানায়। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” এ দিন দিনহাটা থানায় বসে ওই নাবালিকা জানান, তিনি এলাকার একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। তার পাশের বাড়ির এক ছাত্রের সঙ্গে বছরখানেক আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। নাবালিকার কথায়, “সালিশি সভায় ওর নাম না বলার জন্য হুমকি দিয়েছিল। চাপে পড়েই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর নাম বলি। মিথ্যে ওকে দোষারোপ মন থেকে মেনে নিতে না পেরে আজ সব পুলিশকে জানিয়েছি।” পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, দিনহাটা থানার বড়নাচিনা এলাকার বাঁশতলার বাসিন্দা ১৬ বছরের ওই নাবালিকা হতদরিদ্র পরিবারের। বাবা-মা ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। মেয়েকে স্থানীয় এক ব্যাবসায়ীর বাড়িতে পরিচারিকার কাজে রেখে যান। একই গ্রামের বাসিন্দা ওই নাবালিকার আত্মীয়রা তার দেখভাল করেন। সম্প্রতি তাঁরা জানতে পারেন ওই নাবালিকা ৩ মাসের গর্ভবতী। বুধবার তা নিয়ে গ্রামে সালিশি বসে। সেখানেই নাবালিকা গোটা ঘটনার জন্য এলাকার বাসিন্দা দিনহাটার পুটিমারি হাইস্কুলের ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দায়ী বলে অভিযোগ করেন। অভিযুক্তের অভিভাবকেরা তা মানতে না চাইলে সালিশি সভায় উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসবাদ করা হয় নাবালিকাকেও। নাবালিকার বক্তব্যে অসঙ্গতি দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়।পুলিশের দাবি, এ দিন নাবালিকা জানায়, প্রেমিক ভয় দেখিয়ে ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর নাম সালিশি সভায় বলতে বাধ্য করিয়েছে। চাপের মুখে সে তাই বলতে বাধ্য হয়। এ দিন তাই প্রেমিকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই বলে নাবালিকার অভিভাবকেরা পুলিশকে জানান। অভিযোগ প্রত্যাহারের পর ছাড়া পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বলেন, “দোষ না-করে এ ভাবে পরীক্ষার আগে একটা রাত থানায় কাটাতে হবে ভাবিনি। তবে ঠিক মতো পরীক্ষা দিতে পারব বলেই মনে হচ্ছে।” তার কাকা পরিমল বর্মন জানান, বিনা দোষে ভাইপো কলঙ্কে জড়িয়ে পড়েছে দেখে খারাপ লাগছিল। নাবালিকার দাদু অনিল দাস বলেন, “প্রকৃত দোষীর শাস্তি চাই।” এলাকার গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য নুরুল ইসলাম জানান, একজনের ভুলের মাসুল অন্য কেউ গুনবে এটা মানা যায় না। তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক পুলিশ। |
|
|
|
|
|