বহরমপুর শহরের মাঠগুলি জুড়ে মেলা ও সার্কাসেরই দাপট। তার জন্য মাঠ জুড়ে যেখানে সেখানে গর্ত, ফেলে রাখা টিনের টুকরো থেকে পেরেক। খেলাধুলো হবে কোথায়? যাঁরা সকাল বিকেল এই মাঠে হাঁটতে আসেন, কিংবা শুধু বসে থেকেই খানিকটা সময় কাটান, তাঁরাই বা যাবেন কোথায়?
শহরের ক্রীড়াপ্রেমীরা এই প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু মুশির্দাবাদ জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “বহরমপুরের কেন্দ্রস্থলে অত বিশাল মাঠগুলি স্রেফ খেলার জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে সরকার লিজ দিতে পারে না। অস্থায়ী ভাবে ব্যবহারের জন্য মেলা কমিটিগুলোকেও তাই ভাড়া দেওয়া হয়।”
বহরমপুরে স্টেডিয়াম ছাড়াও রয়েছে ৭২ বিঘার ব্যারাক স্কোয়ার মাঠ। সেখানে হয়েছে বইমেলা। তার আগে ওই মাঠে দু’টি বেসরকারি সংস্থার সাংস্কৃতিক উৎসব হয়েছে। এ ছাড়াও ওই মাঠে ভিভিআইপি-দের কপ্টার ওঠা নামার জন্য বরাবর হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়। বহরমপুর স্টেডিয়ামের ভিতরের মাঠে হয়েছে সার্কাস। বাকি থাকল ৩টি মাঠ। ১৪ বিঘা জুড়ে এফইউসি মাঠ, ২৩ বিঘা জুড়ে ওয়াইএমএ মাঠ এবং প্রায় ২০ বিঘা আয়তনের কৃষ্ণনাথ কলেজ মাঠ। |
ওই মাঠ তিনটির প্রকৃত মালিক কিন্তু সরকার, দাবি জেলা ভূমি দফতরের। যে কারণে এই দফতরের কাছ থেকেই মোটা টাকায় মাঠগুলি ভাড়া নিতে হয় মেলার জন্য।
কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “প্রায় দেড়শো বছর ধরে মোহন সিনেমা হলের সামনের ওই মাঠটি কৃষ্ণনাথ কলেজ ব্যবহার করে। তার জন্য কলেজে থেকে ভূমি দফতরকে বাৎসরিক ৫০ টাকা ভাড়া দেওয়া হয়। বাণিজ্যিক মেলা করার জন্য হঠাৎ করে ওই মাঠটি গত বছর ভাড়া দেওয়া হয় একটি বেসরকারি সংস্থাকে। ফলে কলেজের ছেলেদের খেলা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে ওই মাঠটিতে মেলা করতে দেওয়া হয়নি।” ওই বিবাদ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি মামলার রায়ে ‘কৃষ্ণনাথ কলেজ মাঠ’টিতে বাণিজ্যমেলা করার অনুমতি দিয়েছে।
ভূমি দফতরের বহরমপুর ব্লক আধিকারিক কল্যাণ রায় বলেন, “সরকারি মলিকানায় থাকা মাঠগুলি বাৎসরিক ভাড়ায় ব্যবহার করতে দেওয়ার আগের নিয়ম বর্তমানে বাতিল। ফলে বছর তিনেক থেকে বহরমপুর শহরের কোনও মাঠের জন্যই কোনও ক্লাব বা কলেজের কাছ থেকে বাৎসরিক ভাড়া নেওয়া হয়নি। দীর্ঘমেয়াদি লিজ নেওয়ার জন্য শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে রাজ্যের ভূমি দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়ে তা অনুমোদন করা হলে তবেই কলেজকে মাঠ ব্যবহার করতে দেওয়া হবে।” সোমেশবাবু বলেন, ‘‘প্রায় দেড়শো বছর ধরে কলেজের ছেলেরা ওই মাঠ ব্যবহার করে। ওই মাঠটি কৃষ্ণনাথ কলেজের মাঠ হিসাবেই পরিচিত। ভূমি দফতরের কাছে থেকে ওই মাঠটি লিজে পাওয়ার জন্য উচ্চশিক্ষা দফতরে আবেদন করা হয়েছে বছর খানেক আগে। কিন্তু উত্তর মেলেনি।”
কৃষ্ণনাথ কলেজের মাঠের মতোই এফ ইউ সি এবং ওয়াই এম এ ক্লাব দু’টিও শতাধিক বছর ধরে বাৎসরিক ভাড়ায় মাঠ দুটি ব্যবহার করছে। ওই মাঠ নিয়ে এখন ওই দু’টি ক্লাবের দশাও কলেজেরই মতো। এফ ইউ সি ক্লাবের জগন্ময় চক্রবর্তী এবং ওয়াই এম এ ক্লাবের কাজল ভাদুড়ি বলেন, “কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিক মেলার জন্য মাঠ ভাড়া দেওয়র ফলে খেলাধূলা লাটে উঠেছে। খেলাধূলার জন্য ক্লাবগুলিকে ওই মাঠ গুলি লিজ না দেওয়া হলে এক সময় বহরমপুর শহর থেকে খেলাধুলো হারিয়ে যাবে।” ভূমি দফতরের জেলা আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “তার জন্য রাজ্য ভূমি দফতরে আবেদন করতে হবে। লিজ দেওয়ার অধিকার জেলা ভূমি দফতরের নেই, ওই ক্ষমতা আছে কেবল রাজ্যের।”
|