সম্পাদকীয় ২...
অসংবেদী
শ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য-পরিষেবা যে উচ্ছন্নে গিয়াছে, প্রতিদিনই তাহার রকমারি নমুনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত। সর্বশেষ নমুনাটি মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের তিনটি সরকারি চিকিৎসালয়ের, যেখানে শারীরিক পরীক্ষার সময় ন্যূনতম সম্ভ্রম রক্ষার আব্রুটুকুও মহিলা রোগীরা পান না। সকলের সামনেই, অপেক্ষারত অন্য রোগীদের লাইনের সামনেই, তাঁহাদের শারীরিক পরীক্ষা করাইতে হয় এবং সেই পরীক্ষার সময় প্রায়শ পুরুষ চিকিৎসকদের কোনও মহিলা সাহায্যকারিণী বা সেবিকা-আয়াও থাকে না। এই তথ্য বা অভিযোগ যে সরকারের কিংবা তাহার জনপ্রিয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমুজ্জ্বল ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করার কোনও চক্রান্ত নয়, বরং বহরমপুরের সরকারি হাসপাতালগুলির দৈনন্দিন বাস্তব, হাসপাতাল পরিদর্শনান্তে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদের জমা দেওয়া রিপোর্টেই তাহা কবুল করা হইয়াছে। এই বেআব্রু অবস্থায় শারীরিক পরীক্ষা করাইবার সময় স্বভাবতই রোগিণীরা নিজেদের সব সমস্যার কথা চিকিৎসককে জানাইতেও পারেন না, লজ্জায় সিঁটাইয়া থাকেন। ফলে চিকিৎসাও যথাযথ হয় না।
এই যে অনুশীলনটি চলিয়া আসিতেছে, তাহা যে কেবল গত আট মাসের ব্যাপার, এমন কথা কেহই বলিবে না। বস্তুত, ইহাই এ রাজ্যের স্বাস্থ্য-পরিষেবার দস্তুর। কী অপুষ্টিজাত সদ্যোজাতের চিকিৎসা, কী মহিলাদের স্ত্রীরোগ চিকিৎসা ও পরীক্ষা, সর্ব ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য-প্রশাসনের অসংবেদী মনোভাব ও আচরণ স্বাস্থ্য-পরিষেবার তৃণমূল স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রশ্নটি মানসিকতার, রাজনীতির নয়। তাই সরকারে কোন দল কখন ক্ষমতাসীন, তাহার উপর এই মানসিকতার আবাদ নির্ভরশীল নয়। রোগিণীদের শারীরিক পরীক্ষার চত্বরটিকে অন্যদের চোখের আড়াল করিয়া দিতে কেবল একটি-দুটি পর্দা ঝুলাইতে হয়, তাহার বেশি কিছু নয়। তাহার দামও এমন কিছু নয়। একই ভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ‘কপার-টি’ পরিতে আসা মহিলাদের একটি ঘরে গাদাগাদি করিয়া সকলের সামনে তাহা পরানোর মধ্যেও ঘোরতর অসংবেদী নির্লজ্জতা রহিয়াছে। লজ্জা-সঙ্কোচে মরমে মরিয়া যাওয়া গ্রাম্য গৃহবধূরা এ জন্য একটু একান্ত আড়াল প্রার্থনা করিতেই পারেন। তখন চতুর্থ শ্রেণির স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি তাঁহাদের চোখ রাঙাইয়া ‘না পোষাইলে’ চলিয়া যাইতে বলেন, তখন মহিলাদের প্রাপ্য ন্যূনতম সম্ভ্রম বা আব্রু মঞ্জুর করার অনীহাই তাহাতে ধরা পড়ে। এই মানসিকতা কোনও সভ্য সমাজের পরিচায়ক নয়। তথাপি এমনটাই চলিয়াই আসিতেছে।
প্রশ্ন হইল, চলিয়া আসিতেছে বলিয়াই কোনও অন্যায় প্রথা বা অনুশীলন চলিতে থাকিবে, ইহা কেমন কথা? মহিলা রোগীদের শারীরিক পরীক্ষাকালে তাঁহাদের সম্ভ্রম ও আব্রু রক্ষার সমস্যাটি তো আর বামফ্রন্টের অপশাসনের উত্তরাধিকার হইতে পারে না। হইলেও, যদি সামান্য একটা পর্দা ঝুলাইয়া এবং রোগিণীদের সহিত ‘জন্তু-জানোয়ারের মতো ব্যবহার’ না-করিয়া তাঁহাদের লজ্জাশীল মানুষের মর্যাদা দিয়া সেই উত্তরাধিকার রদ করা যায়, তবে তাহা করা হইবে না কেন? স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্য শুনিলে অবশ্য এ ব্যাপারে বিশেষ আশার সঞ্চার হয় না। তিনি সব কিছু তদন্ত করিয়া, পরিস্থিতি বুঝিয়া তবে মন্তব্য করিবেন। সরজমিন তদন্তের ভিত্তিতেই কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য ভবনে তাঁহাদের রিপোর্ট জমা দিয়াছেন, যাহাতে এই তথ্য উন্মোচিত। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সেই তদন্তেরও তদন্ত করিয়া দেখিবেন কি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে খুশি করিতে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.