সম্পাদকীয় ১...
দুর্বৃত্তায়নের পরিণাম
র্ধমান শহরে যে-নিষ্ঠুরতার সহিত দুই রাজনৈতিক নেতাকে কোপাইয়া, থ্যাঁতলাইয়া মারা হইয়াছে, তাহার অনুপুঙ্খ তদন্ত অবশ্যই জরুরি। সেই তদন্তের ফল প্রকাশের পূর্বে এই হিংসার কার্যকারণসূত্র সম্পর্কিত কোনও অভিমত প্রকাশ করা উচিত নহে, মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁহার মন্ত্রিসভার সদস্যদের তো নহেই। তথাপি ঘটনা ঘটিবার অব্যবহিত পরেই মন্তব্য এবং সিদ্ধান্তের প্লাবন বহিতেছে। ইহা কেবল দুর্ভাগ্যজনক নয়, গভীর উদ্বেগের কারণ। এই আগ বাড়াইয়া মন্তব্য করিয়া দিবার অভ্যাসটি দ্রুত প্রথায় পরিণত হইতেছে, তাহা উদ্বেগকে গভীরতর করে। অবাঞ্ছিত এই রক্তপাত এবং, সাধারণ ভাবে, রাজ্যের জেলায় জেলায় রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে ঘটিতে থাকা বিভিন্ন নিগ্রহ, খুন-জখম ও গৃহদাহের প্রতিটি ঘটনাই আইনের শাসনকে উল্লঙ্ঘন করে এবং সরকারের প্রশাসনিক ভাবমূর্তিও মলিন করিয়া তোলে।
কিন্তু এই ভয়াবহ ঘটনা কি অপ্রত্যাশিত? অহেতুক? আকস্মিক? গত কয়েক দশক ধরিয়া দেশের সর্বত্র, বিশেষত এই রাজ্যে রাজনীতির যে পরিকল্পিত দুর্বৃত্তায়ন ঘটানো হইয়াছে, যে-ভাবে প্রতিটি এলাকার চিহ্নিত সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতীদের দলে-দলে পার্টির ছায়ায় আশ্রয় দেওয়া হইয়াছে, তাহাই কি এ ধরনের ঘটনার মূল নহে? এই দুর্বৃত্তদের দিয়া বুথের সামনে সন্ত্রাস সৃষ্টি করিয়া বৈধ ভোটারদের তাড়ানো হইয়াছে, অন্য সময় প্রতিপক্ষ দলের সমর্থক কিংবা নিরীহ জনসাধারণকে সন্ত্রস্ত রাখিয়া সমাজজীবনে দলের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হইয়াছে। প্রতিবাদ করিতে গেলে ভীতিপ্রদর্শন মারফত কণ্ঠরোধ করা হইয়াছে কিংবা আর একটু সাহসী হইয়া প্রতিরোধ করিতে গেলে দৃষ্টান্তমূলক সাজা হিসাবে ‘গণপ্রহারে’ হত্যা করা হইয়াছে প্রচার করা হইয়াছে, নিহতরা ‘স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষের শিকার’। বাম জমানার তিন দশক ধরিয়া রাজ্যবাসী ও গণমাধ্যম এ জিনিস প্রত্যক্ষ করিয়াছেন। সাক্ষীর স্ত্রী-সন্তানের মাথায় বন্দুকের নল ঠেকাইয়া কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে ‘বিরূপ’ সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হইয়াছে। এই সব কাজেই ‘সুশিক্ষিত’ বাম নেতা ও শাসকরা দুর্বৃত্ত, এমনকী ভাড়াটে খুনিদের পর্যন্ত ব্যবহার করিয়াছেন। জঙ্গলমহলে মাওবাদী মোকাবিলার নামে তথাকথিত হার্মাদ বাহিনীর যে-সব শিবির গড়িয়া তোলা হয়, সেখানে তো দলীয় প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করিতে প্রতিবেশী রাজ্য হইতেও দৈনিক বা মাসিক ভাড়ায় দুষ্কৃতী-নিয়োগ করা হইত, খুন বা ধর্ষণ পিছু যাহাদের বোনাস দিবার বন্দোবস্ত ছিল। এই প্রক্রিয়াতেই তো দলের ‘সম্পদ’গুলি বিকশিত হইয়া ওঠে।
রাজ্যে পরিবর্তনের সরকার কায়েম হইলে দুষ্কৃতী-রাজেরও অবসান হইবে, এমন প্রত্যাশা অমূলক ছিল না। দুর্ভাগ্যবশত তাহা হয় নাই। দুষ্কৃতীরা অনেকেই কেবল তাহাদের ছত্রটি পরিবর্তন করিয়াছে। এবং রাজনীতির রীতি অপরিবর্তিত থাকিয়াছে। এই রীতির পরিবর্তনের দায়িত্ব প্রধান দলগুলির নেতৃত্বেরই। তবে, বিশেষ করিয়া শাসক দলের, এবং তাহার মুখ্যমন্ত্রীর। দলীয় নেতৃত্ব যদি এই দুর্বৃত্তায়নের প্রক্রিয়ায় ছেদ টানিয়া যথার্থ গণতান্ত্রিক শাসনপ্রণালী কায়েম করিতে চাহেন, তবে সর্বাগ্রে মুখ্যমন্ত্রীকে দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি হইতে দলকে টানিয়া বাহির করিতে হইবে। কাজটি দুরূহ। রাতারাতি হওয়ারও নয়। কিন্তু এ ধরনের পৈশাচিক বর্বরতাকে প্রতিপক্ষ দলের ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পরিণাম’ আখ্যা দেওয়া কিংবা নিহতদের বিরুদ্ধে সহসা ‘ফৌজদারি অভিযোগ’ আবিষ্কার করা হইতে সন্দেহ হয়, বাম জমানার সেই অপশাসনের ধারাবাহিকতাই চলিতেছে, সেই চেনা ছক, হয়কে নয় করার সেই চেনা পদ্ধতি, ‘জনরোষ’-এর সেই চেনা তত্ত্ব এবং পুলিশের খাতায় আগে হইতেই নিহতের নাম থাকার সেই চেনা সাফাই, যাহা হত্যার নৃশংসতা ও অন্যায়কে লঘু করিয়া আততায়ী-দুষ্কৃতীদের উৎসাহিত করে, নিরপেক্ষ তদন্তকেও প্রভাবিত করে। রাজ্যবাসী সাড়ে তিন দশক ধরিয়া এ সব দেখিতে অভ্যস্ত। আশঙ্কা হয়, দুষ্কৃতায়নের এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি হইতে তাঁহাদের মুক্তি নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.