টুজি-কাণ্ডের পরে জিএসএম প্রযুক্তির মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলির মধ্যে কাজিয়া চলছিল। এ বার জিএসএম এবং সিডিএমএ পরিষেবা সংস্থাগুলির মধ্যেও লড়াই বাধায় তা আরও ঘোরালো হল। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের ও তার জেরে রাজকোষের ক্ষতির অভিযোগ তুলেছে।
টুজি স্পেকট্রামের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে ২০০৮-এর পর থেকে দেশ জুড়ে ১২২টি লাইসেন্স বাতিল করে ফের নিলামের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই সিদ্ধান্তে জেরে আইডিয়া, টেলিনরের মতো জিএসএম পরিষেবা সংস্থা এবং টাটা ডোকোমো, রিলায়্যান্স ও এমটিএসের মতো মূলত সিডিএমএ পরিষেবা সংস্থা বিপাকে পড়েছে।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে প্রথমে জিএসএম প্রযুক্তি নির্ভর টেলি-শিল্পমহলের মধ্যে কাজিয়া বাধে। টেলিনর দাবি তোলে নতুন নিলামের ক্ষেত্রে ভোডাফোন বা এয়ারটেলের মতো পুরনো সংস্থাকে যেন নতুন করে বাতিল লাইসেন্সের নিলামে অংশ নেওয়ার সুযোগ না-দেওয়া হয়। ২০০৮-এর পরে লগ্নি করা সংস্থাগুলিই শুধু যেন সেই সুযোগ পায়। আবার নরওয়ের টেলিনর লাইসেন্স বিতর্কের জন্য তাদের ভারতীয় অংশীদার ইউনিটেক এবং পশ্চিম এশিয়ার এটিসালাত ভারতীয় অংশীদার ডিবি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। এ সব নিয়ে জিএসএম সংস্থাগুলির সংগঠন সেলুলার অপারেটর্স অফ ইন্ডিয়ার (সিওএআই) মধ্যেই মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।
এ বার লড়াইয়ের ময়দান আরও বিস্তৃত হয়েছে জিএসএম এবং সিডিএমএ, উভয় ধরনের পরিষেবা সংস্থাগুলির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ইউনাইটেড সার্ভিস প্রোভাইডার্স অফ ইন্ডিয়া (এইউএসপিআই) এবং সিওএআই-এর তরজায়। এ ইউ এস পি আই-এর সদস্য টাটা ডোকোমো ও রিলায়্যান্স সিডিএমএ এবং জিএসএমএ, উভয় পরিষেবাই দিলেও এমটিএস অবশ্য শুধু সিডিএমএ পরিষেবাই দেয়।
এইউএসপিআই-এর অভিযোগ, ভোডাফোন, এয়ারটেল, আইডিয়া, বিএসএনএল-এর মতো পুরনো সংস্থা টুজি পরিষেবার জন্য ৬.২ মেগাহার্ৎজ-এর দামেই আরও প্রায় ৪ মেগাহার্ৎজ অতিরিক্ত স্পেকট্রাম পেয়েছে। ফলে তাদের থেকে এককালীন ‘চার্জ’ নেওয়ার দাবি তোলে তারা। যা এর আগে টেলিকম কমিশন ও ট্রাই মেনে নিয়েছিল বলেও তাদের দাবি। সে ক্ষেত্রে ওই সব সংস্থার প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বাড়তি খরচ হত। এইউএসপিআই-এর অভিযোগ, কিন্তু যে পদ্ধতিতে টেলিকম দফতর এই অর্থ নেওয়ার কথা বলেছে, তাতে কেন্দ্রের প্রায় ২০ হাজার কোটি ক্ষতি হবে।
বৃহস্পতিবার সিওএআই কর্তা রাজন ম্যাথুজের পাল্টা অভিযোগ, উভয় প্রযুক্তির পরিষেবা সংস্থাগুলির লাইসেন্স-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিভঙ্গের জন্য কেন্দ্রের প্রায় ৫১,৯৯৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত লাইসেন্স বাতিলের যে-নির্দেশ দিয়েছে, তাতে ওই সংস্থাগুলি বাড়তি সুযোগ পেয়েছে, যা বেআইনি। তাঁদের দাবি, সেই স্পেকট্রামও ফিরিয়ে নিয়ে তা নিলাম করতে হবে। পাশাপাশি টেলিকম কমিশন ও ট্রাইয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে টেলিকম দফতর আপাতত তাদের সদস্যদের থেকে ওই চার্জ নেওয়ার বিষয়টি স্থগিত রেখেছে। সেই সিদ্ধান্তের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে আজ, শুক্রবার তাঁরা টেলিকম দফতরকে চিঠি দেবেন।
এইউএসপিআই-এর কর্তা এস সি খন্না সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেন, উভয় প্রযুক্তির পরিষেবা চালুর জন্য সিওএআই সদস্যদেরও একই সময়ে প্রস্তাব দিয়েছিল টেলিকম দফতর। কিন্তু তারা তাতে রাজি হয়নি। তাঁর দাবি, তাঁদের সদস্যরা নিয়ম মেনেই ব্যবসা করেছে। তাতে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাসুল কমেছে, যাতে লাভবান হয়েছেন গ্রাহকেরাই।
অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের জেরে দেশের টেলি-শিল্পের সঙ্কট বাড়ছে বৈ কমছে না। |