চাকরি আছে, অথচ উপযুক্ত প্রশিক্ষিত প্রার্থীর অভাবে জোগান কম। আজকের দিনে এমন কথা শুনলে নড়েচড়ে বসতেই হয় যে, সেটা কী এমন চাকরি? শিক্ষা ও শিল্পমহলের দাবি, এমনটাই ঘটছে সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল-সহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে। এ বার প্রশ্ন, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি), যাদবপুর বা বেসুর মতো বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের প্রায় ৮০টি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ যেখানে স্নাতকে এই সব কিছুই পড়ায়, সেখানে যোগ্য প্রার্থীর অভাব কেন? খোদ রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রী তথা ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশনের চেয়ারম্যান রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের জবাব, এই সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়াররা সাধারণত খুব দ্রুত চাকরি বদলায়। সরকারি-বেসরকারি, যে কোনও সংস্থাতেই এই প্রবণতা চোখে পড়ে। কিন্তু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা কম। কাজ শেখার পর তাঁদের মধ্যে অহরহ চাকরি পরিবর্তনের মানসিকতা না থাকায় সংস্থাগুলি বরং স্বস্তি পায়। এ ছাড়া, মাইনেও কম দিতে হয় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের। রবিরঞ্জনবাবুর কথায়, “রেলওয়েজ, পিডব্লিউডি বা কেএমডিএ-র মতো সরকারি ক্ষেত্রে পলিটেকনিক ডিপ্লোমাধারীদের চাহিদা বিপুল। অথচ জোগান দেওয়া যাচ্ছে না প্রশিক্ষিতের সংখ্যা কম হওয়ায়। তাই পলিটেকনিক কলেজের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আসন বাড়ানো হচ্ছে। চালু হচ্ছে নৈশ বিভাগও।” তিনি জানান, ২০১২-এ রাজ্য ১১টি পলিটেকনিক কলেজ চালু করতে চলেছে। বেসরকারি উদ্যোগেও পলিটেকনিক কলেজ গড়ার প্রস্তাব আসছে প্রচুর।
ভর্তির নিয়ম একটু বদলেছে: তিন বছরের এই ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমে ভর্তির ক্ষেত্রে এ বছর বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। আগের বছর পর্যন্ত জেক্সপো অর্থাৎ জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগ্জামিনেশন ফর পলিটেকনিক প্রবেশিকার মাধ্যমে মোট আসনের ৬০% পূর্ণ করা হত। বাকি ৪০% পূর্ণ হত মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে। কিন্তু এ বছর থেকে মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ বন্ধ হয়েছে। শুধুমাত্র জেক্সপোর মাধ্যমেই ভর্তি হওয়া যাবে। |
বদলেছে প্রবেশিকায় বসার যোগ্যতাও: এ বছর থেকে মাধ্যমিকে ৩৫% নম্বর পেলেই জেক্সপো দেওয়া যাবে। আগের বছর তা ছিল ৪০%। এ ছাড়া, পরীক্ষায় বসার জন্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমাও এ বার উঠে গিয়েছে। আগের বছর পর্যন্ত ওই ঊর্ধ্বসীমা ছিল ২১ বছর। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ টেকনিক্যাল এডুকেশনের ভাইস চেয়ারম্যান অমিতাভ রায়ের দাবি, মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ না- থাকায়, প্রবেশিকায় বসার জন্য মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরের ঊর্ধ্বসীমা কমায় এবং বয়সের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ায় আবেদনপত্র বিক্রির পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। তাঁর আশা, এ বছর প্রায় দেড় লক্ষের মতো পরীক্ষার্থী জেক্সপোতে বসবেন।
সফল হওয়া কঠিন নয়: জেক্সপো পরীক্ষাটি ২০০ নম্বরের। অঙ্কে ১০০ এবং পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন মিলিয়ে ১০০। সময় চার ঘণ্টা। প্রশ্ন মাল্টিপল চয়েস ধরনের। অমিতাভবাবুর দাবি, মাধ্যমিকের সিলেবাস খুঁটিয়ে পড়লেই জেক্সপো-তে সফল হওয়া যায়।
জেক্সপোর প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মাস্টারজি-র কর্তা চিন্ময় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের পর অনেকে জেক্সপো দেন। কিন্তু এটা অর্থহীন, কারণ মাধ্যমিক পাশ করেই এতে বসা যায়। একই মত জেআইএস স্কুল অফ পলিটেকনিকের কর্ণধার তরণজিৎ সিংহের। তাঁর পরামর্শ, মাধ্যমিকের সঙ্গেই প্রস্তুতি নিন জেক্সপোর। তা হলে সাফল্য পাবেন সহজেই।
মনে রাখুন তারিখ: এ বছরের জেক্সপো অনুষ্ঠিত হবে মে মাসের ৬ তারিখে। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজে আবেদনপত্র পাওয়া যাবে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
জেনে নিন কিছু অন্য রকম বিষয়: সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেট্রিক্যাল এই বিষয়গুলি ডিপ্লোমার পাশাপাশি স্নাতকেও পড়া যায় বিভিন্ন কলেজে। কিন্তু ডিপ্লোমা পড়তে পারেন এমন কিছু বিষয়েও, যা স্নাতকে পড়ার চল নেই খুব একটা। যেমন, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড টেকনোলজি, ফুটওয়্যার টেকনোলজি, হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কেটারিং টেকনোলজি, লেদার গুডস টেকনোলজি, মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি, প্যাকেজিং টেকনোলজি, মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্র্যাকটিস, ফটোগ্রাফি, প্রিন্টিং টেকনোলজি, সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং, মাইন সার্ভেয়িং, মেটালার্জিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং।
বিশদে জানতে: দেখুন www.wbscte.org ওয়েবসাইট। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশনে যোগাযোগ করতে পারেন। ঠিকানা: কলকাতা কারিগরি ভবন, ১১০ এস এন বন্দ্যোপাধ্যায় রোড। দ্বিতীয় তল, কলকাতা-১৩। |