মাজদিয়া কলেজের ভিতরে ঢুকে এসএফআই সমর্থকদের উপরে হামলার ঘটনায় কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সুশীল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হল। শুক্রবার ছিল মাজদিয়া সুধীরঞ্জন লাহিড়ি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। সেখানে এসএফআই জয়ী হয়েছে। অভিযোগ, গণনা শেষ হওয়ার পরে সুশীলবাবু লোকজন নিয়ে জোর করে কলেজের ভিতরে ঢোকেন। প্রায় শ’খানেক পুলিশকর্মীর সামনেই এসএফআইয়ের প্রার্থীদের বাঁশ ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। আট জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে চার জনকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ দিন রাতেই তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
সুশীল বিশ্বাস |
এই ঘটনার পর শুক্রবার গভীর রাতে কৃষ্ণগঞ্জ থানায় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুশীল বিশ্বাস-সহ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন এসএফআইয়ের আহত সমর্থকেরা। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমন মিশ্র বলেন, ‘‘দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। একটি অভিযোগে সুশীলবাবুর নাম আছে। আমরা পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে, তাদের সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
৭ জানুয়ারি এই কলেজের অধ্যক্ষ সরোজেন্দ্রনাথ করকে নিগ্রহের ঘটনায় তিন জন এসএফআই সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা প্রয়োগ করা হয়। ৩৩ দিন জেল হেফাজতের পরে সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান ওই তিন ছাত্র। এই ঘটনার পর মাজদিয়া কলেজ ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ‘মর্যাদার’ লড়াই। শুধু তৃণমূল ছাত্র পরিষদই নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব ও একাধিক বিধায়ক মাজদিয়ায় এসে সভা করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ওই কলেজে জয়ী হয় এসএফআই। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক কৌশিক দত্ত বলেন, ‘‘পরাজয় মানতে না-পেরে বিধায়কের নেতৃত্বে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের আক্রমণ করল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা।’’
মাজদিয়া কলেজে নির্বাচন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলছিল। বিকেল পাঁচটা নাগাদ ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর বিধায়ক লোকজন নিয়ে ব্যারিকেড ভেঙে কলেজে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ। বিধায়ককে ঠেকাতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের। ছাত্রদের মারধরের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। এই কলেজে দু’বছর পরে ক্ষমতায় ফিরল এসএফআই। কলেজে ঢুকে সুশীলবাবুর ‘তাণ্ডব’ চালানোর বিষয়টি জানাজানি হতে রীতিমতো নড়েচড়ে বসে তৃণমূলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁকে রীতিমতো ভর্ৎসনা করা হয় বলে তৃণমূলের এক জেলার নেতা জানিয়েছেন। ওই নেতা বলেন, ‘‘দিদির স্পষ্ট নির্দেশ ছিল নির্বাচন চলাকালীন কোনও বিধায়ক কলেজে যাবেন না। সুশীলবাবু কেন সেই নির্দেশ অমান্য করলেন তা জানতে চাওয়া হয়েছে’’
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘‘মাজদিয়া কলেজে ঠিক কী হয়েছে তা রাজ্য নেতৃত্ব আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। সুশীলবাবু জানিয়েছেন, আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা কলেজের ভিতরে আক্রান্ত হচ্ছিল। তাদের উদ্ধার করতেই তিনি কলেজে ঢুকেছিলেন।’’ আর সুশীলবাবুর সাফাই, ‘‘আমার কাছে খবর আসে আমাদের ছাত্রেরা কলেজের ভিতরে আক্রান্ত হচ্ছিল। বাধ্য হয়েই পুলিশের কাছে যাওয়ার জন্য আমাকে কলেজের ভিতরে ঢুকতে হয়েছিল। এসএফআইয়ের হাতে আমিই বরং আক্রান্ত হয়েছি।’’ |