সরকারে ডানা ছাঁটার পর এ বার দলীয় সংগঠনেও ‘বিড়ম্বনা’য় পড়লেন রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস।
নদিয়া জেলার তৃণমূল সভাপতির পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হল কৃষ্ণনগর দক্ষিণের বিধায়ক উজ্জ্বলবাবুকে। তাঁর বদলে নবদ্বীপের তিন বারের বিধায়ক, দীর্ঘদিন পুরপ্রধানের পদ সামলানো পুণ্ডরীকাক্ষ(নন্দ) সাহাকে জেলায় দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
যে সব মন্ত্রীর কাজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সন্তুষ্ট’ ছিলেন না, জানুয়ারি মাসে মন্ত্রিসভায় রদবদলের সময়েই তাঁদের প্রতি ‘বার্তা’ দেওয়া হয়েছিল। উজ্জ্বলবাবুকে যুবকল্যাণ থেকে সরিয়ে তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও উদ্যান পালন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যুবকল্যাণ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী করা হয় অরূপ বিশ্বাসকে।
শনিবার কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে নদিয়ার সাংসদ, বিধায়ক, অন্য জনপ্রতিনিধি ও নেতা-কর্মীদের নিয়ে ‘সমন্বয় সভা’ করেন পুণ্ডরীকাক্ষবাবু। তিনি বলেন, “গত ৭ ফেব্রুয়ারি জেলায় এসে দলনেত্রী এ ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা আমায় জানিয়ে গিয়েছিলেন। দিন কয়েক আগে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় আমাকে নতুন দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান।”
এই রদবদলের কারণ নিয়ে জেলা তৃণমূলে জোর জল্পনা চলছে। দলের একাংশের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই ব্লক স্তরের সংগঠনে একাধিক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। মাঝে-মধ্যেই প্রকাশ্যে চলে আসছিল গোষ্ঠী কোন্দলও। প্রায় সর্বত্রই এই গোষ্ঠীবাজির পিছনে উজ্জ্বলবাবুর ‘ইন্ধন’ ছিল বলে নেত্রীর কাছে অভিযোগ যায়। মমতা সেটা ভাল চোখে দেখেননি। সে কারণেই মন্ত্রিসভায় ডানা ছাঁটার পরে সাংগঠনিক পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল বলে জেলার নেতা-কর্মীদের একাংশের ধারণা। তুলনায় ‘স্বচ্ছ’ ভাবমূর্তির পুণ্ডরীকাক্ষবাবুকে জেলা সভাপতি করায় গোষ্ঠীকেন্দ্রিক ক্ষোভ-বিক্ষোভও অনেকটা প্রশমিত হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
তবে পুরনো বা নতুন জেলা সভাপতি কেউই এই রদবদলকে ‘শাস্তি’ বলে স্বীকার করতে চাননি। উজ্জ্বলবাবুর দাবি, “আমাদের জেলায় দলের ভিতরে কোনও গোষ্ঠী নেই। আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই জেলা সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল।” পুণ্ডরীকাক্ষবাবুও বলেন, “এক জনের পক্ষে দু’টো পদ সামলানো কঠিন। তাই নেত্রী আমায় সভাপতি করেছেন। আগেও তিনি এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ বার আর আমার পক্ষে তাঁর নির্দেশ উপেক্ষা করা সম্ভব হল না।”
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবুর বক্তব্য, “উজ্জ্বলবাবু মন্ত্রী হওয়ায় এমন এক জনের দরকার ছিল যিনি পূর্ণ সময়ের জন্য জেলায় দলের কাজ করতে পারবেন। তাই এই পরিবর্তন।” এ দিন রবীন্দ্রভবনের সভামঞ্চে জেলার বেশির ভাগ বিধায়কই পঞ্চায়েত নির্বাচনে একা লড়াই করার প্রস্তাব দেন। উজ্জ্বলবাবুও একই প্রস্তাব দিয়েছেন। |