জলে আর্সেনিকের দূষণে আক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার ৩৬% মানুষ। এখন খাদ্যশস্য, সব্জিতেও ঢুকে পড়েছে এই বিষ। প্রায় তিন দশকের এই ‘অসুখ’ ক্রমেই তীব্র আকার নিচ্ছে। মুক্তির পথ খুঁজতে শনিবার দেশবিদেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সম্মেলন শুরু হল কলকাতায়। উদ্যোক্তা যৌথ ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্য।
সম্মেলনে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “২০২০-র মধ্যে রাজ্যের প্রত্যেক বাসিন্দাকে দৈনিক ১০০ লিটার বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করা হবে।” জলের সঙ্গে ‘খাদ্য-শৃঙ্খল’ (ফুড চেন) থেকেও আর্সেনিক, ফ্লোরাইড দূর করার কথাও বলেন তিনি। এই কাজে কেন্দ্রের অনগ্রসর এলাকা অনুদান তহবিল (বিআরজিএফ), বিশ্ব ব্যাঙ্ক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন (জিকা) সংস্থা থেকে অর্থ সাহায্য আসবে বলে জানান তিনি। |
আর্সেনিক নিয়ে সম্মেলনে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কলকাতায়। —নিজস্ব চিত্র |
২০০১ সাল পর্যন্ত রাজ্যের আট জেলার ৭৯টি ব্লক এবং কলকাতার একাংশ ওই বিষে আক্রান্ত। সরকারের কাছে এর পরের হিসেব নেই। তবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মতে, আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভূপৃষ্ঠের জল (‘সারফেস ওয়াটার’) ব্যবহারের উপরেই জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সম্মেলনে। দাবি উঠেছে, ভূগর্ভের জল ব্যবহার নিষিদ্ধ করে নদীনালার জল ব্যবহার করলে, বৃষ্টির জল ধরে কাজে লাগালে ভূগর্ভের জলভাণ্ডারও স্ফীত হবে।
কিন্তু ভূগর্ভের জল ব্যবহারে কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে কই? গ্রামাঞ্চলে যদিও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর নদীর জল শোধন করে পাইপলাইনে সরবরাহের চেষ্টা করছে। কিন্তু কলকাতায় জলের প্রয়োজন মেটাতে পুরসভা যথেচ্ছ গভীর এবং অগভীর নলকূপ বসানোর অনুমতি দিচ্ছে।
নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “শহরে নলকূপের জল পান ঠেকাতে বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে।” সেচের জলে আর্সেনিক মিশে যাওয়ায় ফসলেও বিষ ঢুকছে। গোখাদ্যেও মিশছে বিষ। ইউনিসেফের প্রতিনিধি আইডান ক্রোনিন থেকে বিশ্ব ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক প্রতিনিধি ক্রিস্টোফার জুয়ান কস্টেন, মালয়েশিয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টর মহম্মদ সালে প্রত্যেকেই আহ্বান জানিয়েছেন, সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানীরা আরও তৎপর হোন। সম্মেলনে ছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী, মুখ্যসচিব সমর ঘোষ, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় পানীয় জল মন্ত্রকের সচিব বিজয় ভাস্কর প্রমুখ। |