|
|
|
|
কুৎসা সত্ত্বেও জানতাম, সত্যিটা বেরোবে |
(অভিযোগকারিণীর প্রতিক্রিয়া) |
শেষ পর্যন্ত সত্যটা সামনে এল। এত দিন ধরে যে লড়াইটা লড়ছিলাম, তার অনেকটাই সফল। তবে, এখনও আরও লড়াই বাকি। আমি তৃপ্ত, চাপমুক্ত। তবে আতঙ্ক কাটেনি। লালবাজার পুলিশ যে ভাবে ঘটনার তদন্ত করেছে, তাতে আমি খুশি।
সেই রাতের ঘটনার পর আতঙ্ক না-কাটায় অনেক খুঁটিনাটি তথ্য পুলিশকে জানাতে পারিনি। কিন্তু গোয়েন্দারা যখন আমাকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে যান, তখন অনেক কথাই মনে পড়ে যায়। নিজেকে সাহস জোগাই। প্রথমে ছেলেটি যে রুমান নাম বলেছিল, তা-ও পুলিশকে জানাই। এ দিন পুলিশ ওই দু’জনের ছবি দেখানোর পরই ভাল ভাবে চিনতে পারি। |
|
সাংবাদিক বৈঠকে দময়ন্তী সেন। |
আমার এই গোটা লড়াইটা জুড়ে ছিল অনেকখানি ধৈর্য, পরামর্শ, আলাপ আলোচনা এবং শেষ পর্যন্ত সঠিক লোকের কাছে পৌঁছনো। এই সঠিক লোকেদের কাছে যেতে পেরেছিলাম বলেই সুফল পেলাম। সত্য বার করার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ। বিশেষত যুগ্ম কমিশনারকে। কারণ, যে ভাবে ঘটনায় আমার দিকে অভিযোগ উঠেছিল, তাতে সত্যটা বেরোনোর দরকার ছিল। আমার এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে আমার পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু এবং সংবাদমাধ্যমের সমর্থন। এঁরা প্রত্যেকেই সব সময় পাশে থেকেছে।
সরকার-সহ নানা মহল থেকে আমার ব্যক্তিগত জীবন, আমার পরিবার নিয়ে নানা কথা বলা হয়েছিল। কুৎসা রটানো হচ্ছিল। কিন্তু আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। জানতাম, সত্যিটা বেরোবেই। আমার পরিবার অত্যন্ত ভদ্র। সরকারি এক মুখপাত্র বলেছিলেন, আমি নাকি এসকর্ট সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত। চরিত্র নিয়েও নানা কথা বলা হয়েছে। সে সবের পরোয়া করি না। আর যে সব মহিলা ওই সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের প্রতি আমার কোনও খারাপ মনোভাব নেই। ওই পেশার মহিলাদের ধর্ষণের অধিকার কারও নেই। |
|
এই সেই গাড়ি। |
৫ তারিখ রাতে ওই নাইটক্লাবে অপরাধী তিন যুবক আমায় লাভি, শরাফত এবং আজহার বলে পরিচয় দিয়েছিল। আমি সেই নামগুলিই পুলিশকে দিই। কিন্তু শনিবার জানতে পারি, ওই নামের যে যুবকদের জেরা করা হচ্ছিল, তাঁরা অপরাধী নয়। বরং আসল অপরাধীরা নাম ভাঁড়িয়ে আলাপ জমিয়েছিল। আমি লাভি, শরাফত এবং আজহার এবং তাঁদের পরিবারের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
তবে, এই সাফল্যের মধ্যেও নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন। বাড়িতে মা এবং ছোট দু’টো মেয়ে রয়েছে। তাঁদের আতঙ্কও কাটেনি। এখন আমাকে এবং আমার পরিবারকে পুলিশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। কিন্তু মামলা মিটে যাওয়ার পর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে কি না, সেটাই আমায় ভাবাচ্ছে। এই ঘটনার স্মৃতি কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ক্ষেত্রেও কিছুটা সমস্যা হবে।
|
যন্ত্রণার ১৩ দিন |
৫ ফেব্রুয়ারি |
গভীর রাতে ধর্ষণের ঘটনা |
৯ ফেব্রুয়ারি |
পার্ক স্ট্রিট থানায় এফআইআর |
১০ ফেব্রুয়ারি |
কোর্টে পুলিশ, ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ। পরীক্ষা হল না। পুলিশের দাবি, চিকিৎসক নেই |
১৪ ফেব্রুয়ারি |
ডাক্তারি পরীক্ষা হল |
১৫ ফেব্রুয়ারি |
রাতে আটক আজহার-শরাফত |
১৬ ফেব্রুয়ারি |
তদন্তে গোয়েন্দা দফতরমুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘সাজানো ঘটনা’। ‘সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে অপপ্রচার’, মন্তব্য পুলিশ কমিশনারের |
১৮ ফেব্রুয়ারি |
রুমান-সুনীত-নাসির গ্রেফতার। ধর্ষণ হয়েছে, বলছে পুলিশ।ধর্ষক কাদির এখনও অধরা। |
|
আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা আরও অনেক মেয়ের সঙ্গেই ঘটে। কিন্তু তাঁরা সাহস করে এগিয়ে আসতে পারেন না। এখন এটা ভেবে ভাল লাগছে যে, আমার এই সাফল্যের পর অনেক মেয়েই এই ধরনের অপরাধের অভিযোগ জানাতে এগিয়ে আসবে। আর এটাও বলব, নাইটক্লাবে যাওয়া খারাপ নয়। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত।
আর শেষে বলব, ধর্ষিতা হয়েছি। কিন্তু তাতে জীবনযাত্রা বদলাব না।
|
পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের |
তদন্ত শুরু হতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “সাজানো ঘটনা। আস্তে আস্তে সব বেরোবে।” এখন পুলিশই জানাল, ‘যা হয়েছে, তা ধর্ষণ।’ আপনি এটা কী ভাবে দেখছেন? |
তদন্ত শেষের আগে মন্তব্য না করাই ভাল। তবে মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই ঠিক খবর পাননি। তাঁকে জানানোর আগে পুলিশের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
অর্পিতা ঘোষ |
মুখ্যমন্ত্রী কোনখানে মুখ ফস্কে একটা কথা বলে ফেলেছেন, তাই নিয়ে শিরোনাম করলে, যাঁরা তা করছেন, তাঁরাই জনপ্রিয়তা হারাবেন।শুভাপ্রসন্ন
মুখ্যমন্ত্রীর কথা |
নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আমরা সবাই বিভ্রান্ত ছিলাম।
হরনাথ চক্রবর্তী |
ঘটনাটা কাগজে পড়েছি। এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করব না।
সুগত মারজিত |
|
(শনিবার রাতে স্টার আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকার)
—নিজস্ব চিত্র |
|
|
|
|
|