অপেক্ষাকৃত কম দামে জ্বালানি। কলকাতার তুলনায় বিমান রাখার নগণ্য খরচ। সেই সঙ্গে, দুর্গাপুর ও তার সংলগ্ন এলাকার সম্ভাবনাময় ‘যাত্রী-বাজার’। বিমান পরিষেবা সংস্থাগুলিকে অন্ডালমুখী করতে মূলত এই তিন সুবিধাকেই তুরুপের তাস করতে চায় প্রকল্প নির্মাতা বেঙ্গল এরোট্রোপলিস প্রজেক্ট (বিএপিএল)। বিমান-বন্দরের ২,৮০০ মিটার লম্বা রানওয়েতে ওঠা-নামা করতে পারবে এ-৩২০ বা বোয়িং ৭৩৭-এর মতো বড় বিমান। বছরে যাতায়াত করতে পারবেন ১০ লক্ষ যাত্রী। বিএপিএলের সিইও সুব্রত পালের দাবি, এটি চালু হয়ে যাবে এ বছরের শেষেই।
সাধারণত মেট্রো শহরের তুলনায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের শহরের বিমানবন্দরে জ্বালানি ভরলে সারচার্জ কম দিতে হয় বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলিকে। সেই দৃষ্টান্ত তুলে ধরে নির্মীয়মাণ অন্ডাল বিমানবন্দরেও এই একই সুবিধা চায় বিএপিএল। বিমান জ্বালানি মজুত রাখতে পরিকাঠামোও গড়তে চায় বেসরকারি সংস্থাটি। যাতে বিদেশ থেকে সরাসরি জ্বালানি আমদানির পথ মসৃণ হলে, তা জমা করে রাখা যায় বিমানবন্দরে।
এ প্রসঙ্গে বিএপিএল-এর সিইও সুব্রত পালের দাবি, বিমানবন্দরে জ্বালানি ভাণ্ডার তৈরি হলে, এখানে কলকাতার তুলনায় কম দামে জ্বালানি মিলবে। সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট শুভাশিস ভট্টাচার্য জানান, এই ভাণ্ডার গড়তে সাহায্য নিতে হবে তেল সংস্থার। আর চাহিদা নিশ্চিত করতে চুক্তি করতে হবে বিমান পরিষেবা সংস্থাগুলির সঙ্গে। সে ক্ষেত্রে কলকাতা থেকে যাতায়াতের পথে অন্ডালেই তেল ভরতে পারবে তারা। সেই ফাঁকে চালু হয়ে যাবে নিয়মিত যাত্রী পরিষেবাও।
তুলে ধরা হচ্ছে কলকাতার তুলনায় কম খরচে বিমান রাখার সুবিধার কথাও। বিএপিএল-এর দাবি, অনেক সময়েই রাত্রে কলকাতায় আসা বিমান ফের ওড়ে পরের দিন ভোরে। কিন্তু বিমান রাখতে চড়া ভাড়া গুনতে হয়। তুলনায় অন্ডালে ওই খরচ হবে নগণ্য। তাই নতুন বিমানবন্দর চালু হলে, কলকাতায় যাত্রী নামিয়ে রাতে অন্ডাল যেতে পারবে ওই সব বিমান। যাওয়ার পথে পেয়ে যেতে পারে দুর্গাপুর ও তার সংলগ্ন অঞ্চলের যাত্রীও। পরের দিন ভোরে ‘সস্তা’য় জ্বালানি পুরে কলকাতায় যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যেতে পারবে তারা।
সুব্রতবাবুর দাবি, এতে সুবিধা হবে দুর্গাপুর ও সংলগ্ন এলাকার মানুষেরও। কারণ, কলকাতা থেকে ভোরের বিমান ধরতে মাঝ রাতে তাঁদের রওনা দিতে হয়, নয়তো পৌঁছতে হয় আগের রাতেই। তাই ভোরে অন্ডাল থেকে বিমান পেলে সমস্যা মেটার সম্ভাবনা।
তবে নির্মীয়মাণ বিমানবন্দর থেকে কলকাতার দূরত্ব ১৮৩ কিমি। আকাশপথে দূরত্ব আরও কম। তাই বিমান সংস্থাগুলির ধারণা, এই স্বল্প দূরত্বে যে জ্বালানি পুড়বে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ানো যাবে না টিকিটের দাম। তাই কলকাতা-অন্ডাল রুটে উড়ান লাভজনক হবে না। সেই কারণে এই বিমানবন্দরকে মাঝে রেখে বরং দূরপাল্লার উড়ান চালাতে চায় তারা। যেমন, দিল্লি ও গুয়াহাটির মধ্যে উড়ান সম্ভব বলে মনে করেন ইন্ডিগো-র ডিরেক্টর রজত কুমার। একই ভাবে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে জোড়া যাবে মুম্বইকেও।
বিএপিএল কর্তাদের মতে, শুধু দিল্লি বা মুম্বই নয়, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ বা চেন্নাইয়ে যাতায়াতের মতো যথেষ্ট যাত্রী রয়েছেন দুর্গাপুর ও সংলগ্ন এলাকায়। কাছেই বোকারো, ধানবাদ। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর শান্তনু চক্রবর্তীর কথায়, “এই এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে দ্রুত। তৈরি হচ্ছে ইস্পাত কারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিমেন্ট কারখানা, তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র।” এই সূত্রে সুব্রতবাবুর দাবি, এখানে শুধু বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাতেই কাজ করেন ১.২ লক্ষ মানুষ, যাঁদের গড় বেতন ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি। ফলে, নিয়মিত উড়ান চালু হলে লাভ হবে বিমান সংস্থাগুলিরই। |