আমরি (ঢাকুরিয়া)-তে অগ্নিকাণ্ড ও তার জেরে প্রাণহানির ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত রাধেশ্যাম অগ্রবালের জামিন শুক্রবার মঞ্জুুর করল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে মামলাটিতে অভিযুক্ত ওই হাসপাতালের আরও চার ডিরেক্টর রাধেশ্যাম গোয়েন্কা, প্রশান্ত গোয়েন্কা, রবি তোদি ও মণীশ গোয়েন্কার জামিনের আবেদন এ দিন খারিজ করে দিয়েছে বিচারপতি অসীম রায় ও বিচারপতি তরুণ গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ।
রাধেশ্যাম অগ্রবাল বর্তমানে এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন। তবে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, নিছক ‘অসুস্থতা’র কারণে নয়, হাসপাতালটির ডিরেক্টর হিসেবে তাঁর ভূমিকা ও অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখেই তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়েছে। বেঞ্চ এ-ও মনে করছে, আবেদনকারী অন্যান্য অভিযুক্তকে এখনই জামিনে মুক্তি দেওয়া ঠিক হবে না। এ দিকে রাধেশ্যাম অগ্রবালের জামিন খারিজের জন্য রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাবে বলে জানিয়েছে।
গত ৮ ডিসেম্বর রাতে ঢাকুরিয়া আমরি-তে আগুন লেগেছিল। দেরিতে খবর পেয়ে দমকলে পৌঁছয় ঘণ্টা দেড়েক বাদে। ততক্ষণে ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন ৮৮ জন। পরে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়। ৯ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালটির লাইসেন্স বাতিলের কথা ঘোষণা করেন। আর ওই দিনই শ্রবণ তোদি-সহ আমরি-র পাঁচ ডিরেক্টর আত্মসমর্পণ করেন লালবাজারে। পরে পুলিশ আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রাধেশ্যাম অগ্রবালকে গ্রেফতার করে। এঁরা ইতিমধ্যে ৭২ দিন পুলিশ ও জেল হেফাজতে কাটিয়েছেন। যদিও বাস্তবে রাধেশ্যাম অগ্রবালকে পুলিশ লক-আপে বা জেলে থাকতে হয়নি, পুরো সময়টা তাঁর ঠিকানা ছিল হাসপাতাল।
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, আমরির ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে, এবং তদন্তকারীরা ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দেবেন। কিন্তু অন্য চার অভিযুক্তের জামিন খারিজ হল কেন? ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ওঁদের জামিন দিলে তাঁরা তথ্য-প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করতে পারেন। এই আবেদনকারীরা সকলেই হাসপাতালটির পরিচালন বোর্ডের সদস্য ও নীতিনির্ধারক। তবে এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষের জামিন মঞ্জুরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আদালত এ-ও বলেছে, চার্জশিট হওয়ার পরেও সুশান্তবাবু জামিন পেয়েছেন। রাধেশ্যাম অগ্রবালের মুক্তির আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে তাঁর আইনজীবীরা এ দিনই হাইকোর্টের রায়ের প্রতিলিপি আলিপুর আদালতের সিজেএমের কাছে পোঁছে দেন।
রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, রাধেশ্যাম অগ্রবালের জামিন খারিজের আবেদন জানিয়ে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবে। অন্য দিকে জামিন না-পাওয়া আমরি-কর্র্তারা এ বার সুপ্রিম কোর্টে যাবেন, নাকি পনেরো দিন পরে কলকাতা হাইকোর্টেই ফের জামিনের আর্জি পেশ করবেন, তা এখনও ঠিক হয়নি। ওঁদের আইনজীবীরা মনে করছেন, প্রধান অভিযুক্ত জামিনে ছাড়া পেয়ে গেলে সহ-অভিযুক্তদের জামিন আটকে রাখা যায় না। এর দৃষ্টান্ত হিসেবে তাঁরা জানাচ্ছেন, কিছু দিন আগে গ্রেটার কোচবিহার আন্দোলনের প্রধান অভিযুক্ত বংশীবদন বর্মন জামিন পাওয়ার ক’দিন পরেই গ্রেটার কোচবিহার আন্দোলনে ধৃত ২৩ জন হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছিলেন। হাইকোর্ট তখন জানিয়ে দিয়েছিল, প্রধান অভিযুক্ত যে হেতু জামিন পেয়ে গিয়েছেন, তাই সহ-অভিযুক্তদের আটকে রাখা যায় না। |