|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা... |
|
চেনা শহর, অচেনা জগৎ |
মেঘনাদ ভট্টাচার্যের ‘পিঙ্কি বুলি’ সমাজের এক গভীর অসুখ। লিখছেন বিপ্লবকুমার ঘোষ। |
সমাজের সেই সব গভীর অসুখের কথা যা আমরা জানি না, বা জেনেও তা আড়াল করি, অথচ সেখানে লুকিয়ে থাকে কত অমানবিক সামাজিক নিষ্ঠুরতা। নির্মম পরিণতিও। সায়ক-এর নতুন নাটক ‘পিঙ্কি বুলি’ কোথায় যেন শুরু থেকেই দর্শকদের মনে কৌতূহল তৈরি করায়। নাটক শেষ হবার পরেও দর্শকদের ভাবায়, ‘সত্যিই তো, আমাদের অনেক কিছুই করার আছে। ভাবার আছে।’
সেখানেই মেঘনাদ সার্থক। বারবারই দর্শকদের হাততালি তাঁর সেই কাহিনির বিশ্বাসযোগ্যতাকে সম্মান জানায়। নাটকে তিনি বলতে চেয়েছেন, ‘দুই মেরুর দুই মেয়ে’র কথা। এক জন কনভেন্টে পড়া কলকাতার মেয়ে আর এক জন সুন্দরবনের।
সে এক অজ গা। ভান্ডারহাটি নদী, পানকৌড়ি, বোলতা, আমজাম, পাখির ডাক। সেই গাঁয়ের মেয়ে বুলি কলকাতায় পা রেখেছে পিঙ্কির ভাইকে দেখাশোনা করতে। কিন্তু প্রায় সমবয়সী পিঙ্কি দিনকে দিন তার খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠছিল। |
|
মনে আসত এক রাশ স্বপ্ন। লোরেটো, লা-মার্টস, আইপড, টিভি, ভিডিও গেমস। এত বড় পৃথিবীটাকে ছুঁতে চায় বুলি। এমনই চলছিল স্বপ্ন ও সখ্য। কিন্তু একদিন বটগাছের মতো, যার বয়সের কোনও গাছ-পাথর নেই, এক বৃদ্ধ ওই ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে। ম্যাজিক দেখায়। দুই মেরুর দুই মেয়েকে ‘ইভোলিউশন রেডিয়েশন’-এর ম্যাজিক। যা পিঙ্কি-বুলির জীবনে সত্যিই রূপকথা।
সনাতনের সঙ্গে আধুনিকের সংঘাত। রীতির সঙ্গে নীতির বিভেদ। সাম্য ও অসাম্যের চিরাচরিত দ্বন্দ্ব। তাই শুরু থেকে শেষ প্রতিটি মুহূর্তেই নাটকটিতে ছিল উত্তেজনা ও কৌতূহলের রসদ। মাঝে মাঝেই পিঙ্কির মায়ের ভুল ইংরেজি উচ্চারণের যে রসিকতা দেখানো হয়েছে তা দর্শকদের কাছে বাড়তি পাওনা। প্রাণখোলা হাসিও।
এই নাটকে মূল দুই চরিত্রে যাদের দেখা গেছে তাদের অভিনয় বহু কাল মনে থাকবে কলকাতার দর্শকদের। শুধু তাই নয়, চরিত্রের সঙ্গে মিশে গিয়ে অভিনয় করা কাকে বলে তা এই নাটকে দেখিয়ে দিয়েছে রিমি সাহা (পিঙ্কি) ও ভাস্বতী চক্রবর্তী (রিমি)। সাবাশ। ওল্ড ম্যান চরিত্রে মেঘনাদ ভট্টাচার্যের অভিনয় এতটাই সাবলীল যে পাশে বসা এক দর্শক বলেই ফেললেন, ‘যে চরিত্রেই করুক, মেঘনাদ যেন নিজেই সেই চরিত্র হয়ে দাঁড়ান।’ চুটিয়ে অভিনয় করেছেন সুখরঞ্জন ভট্টাচার্য, সুজাতা গুপ্ত, রুনা মুখোপাধ্যায়, ধূর্জটি দে, উত্তম দে, ইন্দ্রজিতা। অবশ্য মঞ্চের আলোর প্রয়োগে অনেক ত্রুটি ছিল। আবহে স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত নাটকের মর্যাদাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন নিঃসন্দেহে। |
|
|
|
|
|