অধ্যক্ষ-নিগ্রহের অভিযোগকে ঘিরে সম্প্রতি শিরোনামে এসেছিল মাজদিয়া সুধীরঞ্জন লাহিড়ী কলেজ। ঘটনায় অভিযুক্ত কলেজের ছাত্র তথা এসএফআই সদস্যদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করায় পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সিপিএম-তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও জড়ান কাজিয়ায়। সেই কলেজেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়ী হল এসএফআই। |
কলেজে তৃণমূলের বিধায়ক সুশীল বিশ্বাস। অভিযোগ, বিধায়কের
নেতৃত্বে তৃণমূল সমর্থকেরা কলেজ চত্বরে ঢুকে হামলা চালায়। |
শুক্রবার ওই জয়ের পরে এসএফআইয়ের নদিয়া জেলা সম্পাদক কৌশিক দত্তের প্রতিক্রিয়া, “রায়গঞ্জে বেল (জামিন) আর মাজদিয়ায় জেলসরকারের এই নীতি যে ছাত্রেরা ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন, এই ফল তারই প্রমাণ!” কলকাতায় সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন চলাকালীনই এ দিন মাজদিয়া কলেজে এসএফআইয়ের জয়ের খবর আসে। সম্মেলন থেকেই বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান সিপিএম নেতৃত্ব। পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “রায়গঞ্জ ও মাজদিয়ায় কী হয়েছিল, তা সবাই জানেন। শিক্ষার আঙিনায় যে আক্রমণ চলছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটা প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু এখনই উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। দীর্ঘ লড়াই বাকি।”
গত ৭ জানুয়ারি মাজদিয়া কলেজের অধ্যক্ষ সরোজেন্দ্রনাথ করকে নিগ্রহের অভিযোগে ওই কলেজেরই তিন এসএফআই সদস্য গ্রেফতার হন। রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে প্রায় একই ধরনের ঘটনার পরে তৃণমূল নেতা-কর্মী এবং টিএমসিপি সদস্যদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারা এবং মাজদিয়ার ক্ষেত্রে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে বিতর্কের মুখে পড়ে পুলিশ। ৩৩ দিন জেল হাজতে থাকার পরে হাইকোর্ট থেকে সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান মাজদিয়ার ওই তিন জন। |
আহত এসএফআই সমর্থক। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য |
দু’বছর পরে সুধীরঞ্জন লাহিড়ী কলেজে ক্ষমতায় ফিরল এসএফআই। তারা পেয়েছে ৩০টি আসন। টিএমসিপি ১৯টি। ভোটের ফল বেরনোর মুখে এ দিন সন্ধ্যায় কলেজের সামনে উত্তেজনা তৈরি হয়। কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সুশীল বিশ্বাসকে দেখা যায় কলেজের সামনে। কৌশিকবাবুর অভিযোগ, “সুশীলবাবুর নেতৃত্বে তৃণমূলের কিছু লোকজন কলেজ চত্বরে ঢুকে আমাদের সমর্থকদের মারধর করে। ৮ জন আহত হন।” সুশীলবাবুর দাবি, “আমি কলেজ থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়েছিলাম। এসএফআই সমর্থকেরাই আমাকে মারধর করে।” অভিযোগ অস্বীকার করেছে এসএফআই। তবে কোনও পক্ষই রাত পর্যন্ত থানায় অভিযোগ করেনি।
নদিয়ার জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রা বলেন, “সুশীলবাবু কলেজে ঢুকেছিলেন বলেই খবর পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।” পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “যদি কেউ আইন ভেঙে কলেজে ঢুকে থাকেন, তা হলে যে-ই হোন, তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অধ্যক্ষ নিগ্রহে অভিযুক্ত ওই কলেজেরই ছাত্র, এসএফআই সদস্য অভিজিৎ হালদার, পুষ্পেন সরকারদের মন্তব্য, “মর্যাদার লড়াইয়ে জয়। এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই।” |