সাত দিন ধরে চলা উত্তরবঙ্গ উৎসবের ১৯টি মঞ্চে লাগাতার মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠান হলেও পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। একে তো নানা এলাকায় হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে গভীর রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান হয়েছে, তার উপর মাইক বাজানোর অনুমতিও নেওয়া হয়নি। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব দাবি করেছেন, “প্রতিটি জেলার জেলাশাসককে কমিটিতে রাখা হয়। তাঁদেরই অনুমতির ব্যবস্থা করার কথা। অনুমতি নিয়েই সর্বত্র মাইক বাজানো হয়েছে। যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তা করছেন।”
কিন্তু, একাধিক থানা, এসডিও অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, কোথাও মাইক বাজানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়নি। পুলিশ-প্রশাসনের একাধিক অফিসার জানান, বিষয়টি তাঁরা বারেবারে উদ্যোক্তাদের নজরে আনার চেষ্টা করলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
তাই প্রশাসনিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছেন বলেই কি উৎসবের উদ্যোক্তারা মাইক বাজানোর অনুমতি নেননি? গৌতমবাবুর বক্তব্য, “আমরা এত ভাল একটা উৎসব করলাম। মানুষ কত খুশি। মানুষের আবেগের জন্য নির্ধারিত সময়ের পরে রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান চালাতে দিতে হল। সেই আবেগকে মর্যাদা না-দিয়ে এ ধরনের প্রশ্ন তোলাটা দুর্ভাগ্যজনক।” |
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ১০ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গ উৎসব শুরু হয়। চলেছে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। শিলিগুড়ি-সহ অনেক এলাকায় প্রায় মাঝ রাত পর্যন্ত মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠানের ফলে বাসিন্দাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে কেউই নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না। পাশাপাশি, উৎসবে অংশগ্রহণকারী গানের দল যাতে মাঝ রাত পর্যন্ত গান চালিয়ে যান, সে জন্য শ্রোতা-দর্শকদের তরফ থেকেও বিস্তর অনুরোধ করতে দেখা গিয়েছে।
জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা নির্বিঘ্নে উৎসব শেষ হলেও ‘কিছু ব্যাপার’ নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন। কোচবিহার, মালদহ, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ-প্রশাসনের একাধিক পদস্থ অফিসার জানান, উৎসব কমিটির তরফে সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসকের অফিসে মাইক বাজানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়নি। কিন্তু, সরকারি ভাবে জেলা প্রশাসনের কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সকলেই বিষয়টি ‘পুলিশ ভাল বলতে পারবে’ বলে দায়িত্ব এড়িয়েছেন।
বিধি অনুযায়ী, কোথাও বিনা অনুমতিতে মাইক বাজলে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রীর রোষের মুখে পড়ার ভয়ে বেআইনি কাজ দেখেই পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থেকেছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি সঞ্জয় সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও প্রশ্ন করার আগেই তিনি বলেন, “আমি ছুটিতে কলকাতায় রয়েছি। ভারপ্রাপ্ত আইজি তথা স্পেশাল আইজি বিষয়টি নিয়ে যা বলার বলবেন।” উত্তরবঙ্গের স্পেশাল আইজি শশীকান্ত পূজারী বলেন, “আমি ভারপ্রাপ্ত আইজি নই। যতদূর জানি, আইজি সরকারি কাজে কলকাতায় রয়েছেন। উনিই দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমি কিছু বলতে পারব না।” |