খেলা
শুধুই সাফল্য
সাফল্য আসছে। উন্মাদনায়ও খামতি নেই। কিন্তু প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্যই। সম্প্রতি এর প্রমাণ মিলল হাওড়া জেলা যোগাসন ও বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায়। উঠে এল অভাব, অপ্রাপ্তির নানা কাহিনিও।
শিবপুর চ্যাটার্জিহাটের অগ্রদূত ময়দানে ৪২তম জেলা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আয়োজনে ছিল স্থানীয় পাত্র মেমোরিয়াল যোগ অ্যান্ড ব্যায়াম সেন্টার। হাওড়া শহর ছাড়াও বাউড়িয়া, বাগনান, সাঁকরাইল, উলুবেড়িয়া, বালি, আন্দুল থেকেও প্রতিযোগীরা এসেছিলেন। যোগাসনে ১২টি বয়সভিত্তিক বিভাগে ছয় ঊর্ধ্ব থেকে ৩৫ ঊর্ধ্বের প্রায় ৩০০ জন প্রতিযোগী অংশ নিলেন। দেহসৌষ্ঠবের পাঁচটি বিভাগে লড়াইয়ে নামলেন ৫৫ থেকে ৭০ ঊর্ধ্ব ওজনের প্রতিযোগীরা।
যোগাসনে চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়ন্সের লড়াইয়ে সেরা হল ১০ থেকে ১৫ বছর বিভাগের দুই চ্যাম্পিয়ন অদ্রিজা ঘোষ ও অর্ক পরামানিক। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অদ্রিজা যোগাসন শেখেন ইন্দু মেমোরিয়াল ফিজিক্যাল অ্যান্ড যোগা ট্রেনিং সেন্টারে। অন্য দিকে, বাগনানের গোপালপুর শান্তি সঙ্ঘ থেকে প্রতিযোগিতায় নেমে সেরা হলেন নবম শ্রেণির ছাত্র অর্ক। তাদের অভিযোগ, এই খেলার কৌলীন্য নেই। নেই বিশেষ সরকারি সুযোগ-সুবিধাও।
বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। বিশেষ সাহায্যও পাননি। প্রতি দিন সকাল আটটায় বাড়ি থেকে ঝালাইয়ের কাজে বেরিয়ে পড়েন। রাতে বাড়ি ফিরে দু’ তিন ঘণ্টা আন্দুলের বুধেন্দ্রনাথ স্মৃতি ব্যায়াম সমিতিতে অনুশীলন করে যখন ফেরেন তখন ঘড়ির কাঁটা ১১টা ছুঁয়েছে। এর মধ্যেও এ বারের জেলা বডি বিল্ডিংয়ে চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়ন্সের খেতাব জিতলেন মৌরিগ্রামের সমীরণ ভট্টাচার্য। ৭০ কিলোগ্রাম ঊর্ধ্ব বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে পাঁচ বিভাগের সেরাদের নিয়ে লড়াইয়েও জেতেন সমীরণ। সিনিয়র বেঙ্গলেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। জুনিয়র ন্যাশনালে হয়েছেন রানার্স। বললেন, “প্রতি দিন ছয়শো গ্রাম মাংস খেতে পারলে ভাল হয়। আড়াইশোর বেশি কিনতে পারি না।”
তিন বছর আগে শেষ বারের জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। এখন বসছেন বিচাকরকের আসনে। ৬০ কিলোগ্রাম বিভাগে রাজ্য ও জাতীয় সেরা। পড়াশোনায় স্নাতক বক্সি বাগানের সুরজিৎ মজুমদার তবু চাকরি জোটাতে পারেননি। রঙিন মাছের ব্যবসা করেন। সুরজিৎবাবুর কথায়: “ভাল খাওয়া-দাওয়া না করতে পারলে এ খেলায় টিকে থাকা মুশকিল। ন্যাশনালে নামতে গেলে প্রতি দিন খাওয়ার পিছনেই হাজার টাকা ব্যয় করতে পারলে ভাল হয়। সঙ্গে ফুড সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়। সেটা ক’জন পারেন?”
হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট বডিবিল্ডিং অ্যান্ড যোগা অ্যাসোসিয়েশনের সচিব দিব্যেন্দু সাহা বলেন, “সারা বাংলায় হাওড়ার ফল খুবই ভাল। কিন্তু চাকরি নেই। ছেলেরা সরকারি সহযোগিতা পান না। বাধ্য হয়ে দু’ তিন হাজার টাকার নিরাপত্তারক্ষীর কাজ নিচ্ছেন। নতুন নতুন সংগঠন গড়ে ওঠায়ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.