প্রতিবেশী কয়েকজন যুবকের কুপ্রস্তাবে রাজি হননি এক মহিলা। ওই যুবকেরা তখন সেই মহিলার মুখের ছবি তুলিয়ে তার সঙ্গে অন্য একটি বিবস্ত্র নারী শরীর যোগ করে তা মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে ওই মহিলাকে সেই ছবিটি দেখানো হয়। তারপরেই আত্মহত্যা করেছেন মুর্শিদাবাদের ডোমকলের বাগডাঙার বাসিন্দা জেসমিনা বিবি (২৫) নামে দুই সন্তানের মা ওই মহিলা। বাড়ির একটি ঘর থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে গ্রামবাসীরা। জেসমিনার স্বামী বাবলু শেখ এই দিন ওই যুবকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “কম্পিউটারে ওই মহিলার মুখের সঙ্গে অন্য একটি নগ্নশরীর জুড়ে তাঁকে ভয় দেখানো হয়েছিল বলে অভিযোগ হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, সেই লজ্জাতেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। অভিযুক্তেরা পলাতক। গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।” |
পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই যুবকেরা গ্রামেরই এক মহিলাকে দিয়ে মোবাইলে জেসমিনার মুখের ছবি তোলায়। সেই মহিলারও খোঁজ করছে পুলিশ। অভিযুক্ত ইন্দাদুল হক, মিলন মণ্ডল, মিল্টন মোল্লা, মহম্মদ শেখ ও বিল্লাল শেখ গ্রামেরই বাসিন্দা। তবে তাদের অনেকেই এখন কর্মসূত্রে অন্য রাজ্যে থাকে। কেউ কেউ সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। মহম্মদ শেখের বাবা হজরত শেখ বলেন, “আমার ছেলে এমন কাজ করবে বলে বিশ্বাস হয় না। তবে সঙ্গ দোষে যদি কিছু করে ফেলে তা হলে শাস্তি পাবে।” অন্য অভিযুক্তেরা ও তাদের পরিবারের লোকজন পলাতক। স্থানীয় বাগডাঙা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “গ্রামের অনেকে নানা কাজে অন্য রাজ্যে যায়। তাদের সকলেই খারাপ নন। কিন্তু কেউ কেউ গ্রামের পরিবেশ খারাপ করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে তারা যখন কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরে তখন তাদের হাতে অনেক টাকা থাকে। দামি মোবাইল, মোটরবাইক নিয়ে তারা দাপিয়ে বেড়ায়।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে বাবলু শেখের সঙ্গে বিয়ে হয় জলঙ্গি থানার বিলাসপুর গ্রামের জেসমিনার। তাঁদের সুখের সংসার। মেয়ে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। ছেলের বয়স বছর আড়াই। বছর তিনেক আগে বাবলু তাঁর বাড়িতেই একটি মুদির দোকান খোলেন। তার পর থেকেই পাড়ার কয়েক জন যুবক জেসমিনাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। বাবলু বলেন, “আমাদের দোকানে বসেই ইন্দাদুল হক ওরফে কালু আমার স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। তার কয়েক জন সঙ্গীও এই কাজে জড়িত। জেসমিনা সে কথা বলার পরে গ্রামের মোড়লদের বলি। তখন কিছু দিনের মতো ওই যুবকদের উৎপাত বন্ধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তা আবার বেড়ে যায়।” তাঁর কথায়, “আমার স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে ওদের কথা শুনতে বাধ্য করতেই ওই যুবকেরা এই কাজ করেছে।” গ্রামের বাসিন্দা সালেহিনা সারোয়ার বলেন, “জেসমিনা খুবই নরম মনের মেয়ে ছিলেন। তিনি নিজের ওই ছবি দেখে ভয় পেয়ে যান। ছবিটি গ্রামে ছড়িয়েও পড়েছিল। ওই যুবকেরা ভেবেছিল, ভয় দেখিয়েই তাঁকে ব্যবহার করবে। জেসমিনা আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে আত্মহত্যা করেছেন।” |