বহু পুরাতন একটি অসুখ নিরাময়ের উদ্যোগ লইল সরকার। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের নির্দেশ দেওয়া হইল, তাঁহারা যেন ঔষধের মূল নামটিই প্রেসক্রিপশনে লেখেন, বিবিধ ঔষধ নির্মাতা সংস্থা যে বাণিজ্যিক নামগুলি দিয়া ঔষধ বিক্রয় করিয়া থাকে, সেগুলি ডাক্তারদের লেখা নিষিদ্ধ। সাধু প্রস্তাব। নানা রাজ্যে ইতিমধ্যেই সরকারি ক্ষেত্রে মূল ঔষধ লিখিবার প্রথা প্রচলিত। ইহাতে চিকিৎসার খরচ অনেকখানি হ্রাস পাইবার সম্ভাবনা ঘটিল, কারণ মূল নামের ঔষধ অনেক সস্তা। অধিকন্তু, মূল নামটি লিখিলে নানা ‘ব্র্যান্ড’ হইতে সব চাইতে কম দামি ঔষধটি বাছিয়া কিনিবার সুযোগ পাইবেন ক্রেতা। তাঁহার কাছে স্পষ্ট হইয়া যাইবে যে, একই মৌলিক উপাদান প্রয়োগ করিয়া নির্মিত ঔষধ দোকানে নানা নামে এবং বিভিন্ন দামে বিক্রয় হইয়া থাকে। অধিক খরচ করিয়া বাড়তি উপকার হইবার সম্ভাবনা নাই। চিকিৎসকদের নানাবিধ ‘উৎসাহ’ দিয়া থাকে ঔষধ সংস্থাগুলি, তাহাদের ঔষধ লিখাইবার জন্য। এই প্রথা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে পৌঁছাইয়া গিয়াছে, ইহার প্রতিকার প্রয়োজন ছিল। অবশ্যই সরকারি এই নির্দেশ কেবল সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের জন্যই প্রযোজ্য। বেসরকারি ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হইবার সুযোগ নাই, যদি না এ বিষয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া নির্দেশ জারি করে। তবু যদি কেবল সরকারি হাসপাতালগুলিতেও মূল ঔষধ লিখিবার প্রথা বাস্তবিক বহাল করা হয়, তাহা সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করিবে, সন্দেহ নাই। কম দামি ঔষধের চাহিদা বাড়িবার জন্য প্রতিযোগিতার সূত্রপাত হইবে, বেসরকারি চিকিৎসকরাও ক্রমশ রোগীদের চাপে মূল ঔষধ লিখিতে বাধ্য হইবেন, চিকিৎসকদের উপর প্রভাব বিস্তার করিয়া লাভ হইবে না বুঝিয়া ঔষধ সংস্থাগুলি কৌশল বদলাইবে।
সেই কৌশল হইতে পারে, ঔষধ দোকানের বিক্রেতাদের প্রভাবিত করা, যাহাতে তাঁহারা কেবল দামি ঔষধগুলি বিক্রয় করেন। মূল নামের ঔষধগুলি যদি বস্তুত দোকানগুলিতে অমিল হয়, কিংবা কেবল দামি ব্র্যান্ডের ঔষধে যদি মূল উপাদানগুলি মেলে, তাহা হইলে ক্রেতা অসহায় হইয়া পড়িবেন। চিকিৎসকদের দুর্নীতি হইতে মুক্তি পাইয়া তাঁহারা ঔষধ বিক্রেতাদের দুর্নীতির শিকার হইবেন। দামি ঔষধ বিক্রয় করিলে যদি বিক্রেতা অধিক ‘কমিশন’ লাভ করেন, তাহা হইলে কম দামি ঔষধ বিক্রয় করিতে তাঁহার আগ্রহ হইবে না, ইহাই স্বাভাবিক। সুতরাং চিকিৎসকদের নিবৃত্ত করা যথেষ্ট নহে, ঔষধ নির্মাতারা যেন যথেষ্ট পরিমাণে মূল ঔষধ দোকানগুলিতে সরবরাহ করেন, তাহার ব্যবস্থাও করিতে হইবে। এবং তাহার জন্য প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারকে রসায়ন ও সার মন্ত্রক হইতে নির্দেশ জারি করিতে হইবে। সেই সঙ্গে, ‘প্রেসক্রিপশন অডিট’ করিবার যে সিদ্ধান্ত হইয়াছে, তাহাতে কেবল ব্র্যান্ড নামের ঔষধের জন্য নজরদারি করিলে চলিবে না, প্রয়োজনের অধিক ঔষধ দেওয়া হইতেছে কি না, তাহাও দেখিতে হইবে। অপ্রয়োজনীয় ঔষধ এবং অকারণে দামি ঔষধ, উভয়ই চিকিৎসার বিধি লঙ্ঘন করে। |