সম্পাদকীয় ১...
যুদ্ধের পদধ্বনি
পারস্য উপসাগরে কি আবার যুদ্ধের দামামা বাজিয়া উঠিল? এখনও গুলিগোলা বর্ষণ শুরু হয় নাই, কিন্তু ইরান পরমাণু প্রযুক্তি আয়ত্ত করার পথে সহসা কয়েক ধাপ অগ্রসর হইয়া যাওয়ায় ইজরায়েল যে-ভাবে নিয়মিত আক্রমণের হুমকি দিতেছে এবং দ্বিতীয় একটি মার্কিন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইরানের খিড়কি দরজা হরমুজ প্রণালীতে মোতায়েন হইয়াছে, তাহাতে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের পদধ্বনি শুনা যাইতেছে। ইজরায়েল অপেক্ষা করিতে নারাজ। ইরান পরমাণু বোমায় সজ্জিত হইলে তাহার অস্তিত্ব যে বিপন্ন হইবে, সে কথা ইরানের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ আহমদিনেজাদের উপর্যুপরি আস্ফালন হইতেই স্পষ্ট। তিনি ইহুদি রাষ্ট্রকে পৃথিবীর বুক হইতে নিশ্চিহ্ন করার সঙ্কল্পের কথা প্রায়শই উচ্চারণ করিয়া থাকেন। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দায়িত্বশীল বৃহৎশক্তি হিসাবে নূতন করিয়া কোনও যুদ্ধের জালে এখনই জড়াইয়া পড়িতে নারাজ। বিশেষত ইরাক হইতে সেনা-প্রত্যাহার এবং আফগানিস্তান হইতে হাত গুটাইয়া লওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষে নির্বাচনের বছরে উপসাগরীয় যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকি লওয়া কঠিন।
ওয়াশিংটন তাই তেল-আভিভকে সংযত করার চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু দীর্ঘ কাল ধরিয়া ইরানকে একঘরে ও কোণঠাসা করার মার্কিন নীতি যে এক দিন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করিবে, তাহা অপ্রত্যাশিত ছিল না। ভিয়েতনামের পর ইরানই সেই দেশ, যেখান হইতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মাথা নিচু করিয়া ফিরিতে হয়। মার্কিন তাঁবে শাহ রেজা পহ্লভির সহিত যাবতীয় মার্কিন স্বার্থের উচ্ছেদ এবং খোমেইনির ইসলামি বিপ্লবের পরবর্তী কালে মার্কিন দূতাবাস অবরোধের অপমান ও প্রত্যাখ্যানের পাল্টা দিতে গত কয়েক বছর ধরিয়াই ইরানের বিরুদ্ধে দফায় দফায় অর্থনৈতিক অবরোধ চলিয়াছে। পারস্য উপসাগরে মার্কিন নৌবাহিনী মোতায়েন রাখিয়া তেহরানকে প্ররোচিত করা হইয়াছে। সর্বশেষ সেই অবরোধের অঙ্গ হিসাবে ইরান হইতে তেল ক্রয় বন্ধে মিত্র ও তাঁবেদার দেশগুলিকে বাধ্য করিয়া তেহরানকে ‘ভাতে-পানিতে মারা’র আয়োজনও সম্পূর্ণ করা হয়। কোণঠাসা হইতে হইতে দুর্বলও আত্মরক্ষার্থে সবলকে প্রত্যাঘাতে উদ্যত হয়। ইরানও উত্তরোত্তর মার্কিন চাপ উপেক্ষা করিয়া পরমাণু জ্বালানি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি আয়ত্ত করিয়াছে এবং আমেরিকা ও পশ্চিমের নিষেধ ও হুমকি অগ্রাহ্য করিয়াছে। এখন অবরোধকারী দেশগুলিকে তেল বিক্রয় না-করার পাল্টা হুমকিও দিতেছে, যাহার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দর লাফাইয়া বাড়িতেছে। যুদ্ধ এবং সেই যুদ্ধে ইরানকে বিধ্বস্ত করাই একমাত্র সমাধান, আমেরিকা-ইজরায়েলসহ পশ্চিম এমনটাই ভাবিতেছে।
শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ অনিবার্য হইলে ইরান যে বিধ্বস্ত হইবে, সন্দেহ নাই। কিন্তু তাহাতে পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি দূরপরাহত হইবে। হেজবুল্লা, হামাস ও সম্ভবত মুসলিম ব্রাদারহুড-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন, ইজরায়েলি ও ইউরোপীয় স্বার্থে আঘাত হানিতে প্রস্তুত হইবে। উইংসের বাহিরে অপেক্ষমাণ আল-কায়দা। সিরিয়া, জর্ডন ও লেবাননের মতো দেশগুলিও তাহাদের পিছনে দাঁড়াইতে পারে। শক্তির বর্তমান ভারসাম্য বিনষ্ট হইলে সমগ্র অঞ্চলেই অরাজকতা দেখা দিবে। চিন ও রাশিয়ার মতো যে-সব বৃহৎশক্তি যুদ্ধের পরিপন্থী, তাহাদের অসহযোগিতারও মোকাবিলা করিতে হইবে। এখনও সময় আছে উত্তেজনা না বাড়াইয়া যুক্তি, শান্তি ও প্রগতির পথে চলার। ইরানের প্রেসিডেন্টকে তাঁহার বাক্যবাণ সংযত করিতে হইবে, যেমন করিতে হইবে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকেও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহিত পরমাণু প্রসার রোধ সংক্রান্ত যে আলোচনার প্রস্তাবে ইরান সম্মতি দিয়াছে, পত্রপাঠ তাহা শুরু হোক। ইরান সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছাইয়া (অর্থাৎ পরমাণু প্রযুক্তি আয়ত্ত করিয়া) তবে আলোচনা-প্রস্তাবে সম্মতি দিয়াছে ঠিকই। কিন্তু অন্য যে কোনও দেশও সে-ভাবেই কূটনীতির অনুশীলন করিয়া থাকে। হরমুজ প্রণালীতে মার্কিন প্ররোচনাও অচিরে বন্ধ করা দরকার। সর্বোপরি ইজরায়েলকে সংযত করার দায়ও আমেরিকাকেই পালন করিতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.