অনিশ্চয়তার অন্ধকারে বিদেশি লগ্নিতে তৈরি রাজ্যের প্রথম টেলিকম যন্ত্রপাতি তৈরির সংস্থা নোকিয়া-সিমেন্স নেটওয়ার্কস (এনএসএন)।
উৎপাদন বন্ধ সল্টলেকে সেক্টর ফাইভের এই কারখানায়। এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ নেই ৮০ জন কর্মীর। উল্টে সংস্থাকে নিজের জমিতেই কারখানার ভাড়া গুনতে হচ্ছে মাসে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। রয়েছে কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য খাতে মাসে ১ কোটির মতো খরচ। ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও পরিকল্পনাও নেই এই মুহূর্তে। কর্মীদের আশঙ্কা, এ ভাবে লোকসানের বোঝা নিয়ে কারখানা চালাবে না বহুজাতিক সংস্থা। কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। ই-মেল করলেও জবাব মেলেনি।
বস্তুত, কর্মীদের ভয় যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলেছে নোকিয়া ও সিমেন্সের যৌথ উদ্যোগে তৈরি সংস্থাটির সাম্প্রতিক ঘোষণা ও আর্থিক ফলাফল থেকেও। গত বছরের শেষেই কর্তৃপক্ষ জানান, সংস্থা ঢেলে সাজতে ভারত-সহ বিশ্ব জুড়ে ১৭ হাজার কর্মী ছাঁটাই হবে। ২০১০-’১১ সালে আয়ও কমে যায় ৫%। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই সংস্থায় নতুন করে টাকা ঢালবে না বলে আগেই জানিয়েছে নোকিয়া ও সিমেন্স।
তবে কর্মীদের দাবি, চাইলে সঙ্কট কাটানো যায়। কারণ ২০০৭-এ যৌথ উদ্যোগ তৈরির সময়ে প্রকল্পের ১১ একর জমির মালিকানা রয়ে যায় সিমেন্সেরই হাতে। রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি ছিল, জমিটি উৎপাদন শিল্পে কাজে লাগাতে হবে। পরে অবশ্য সিমেন্সকে সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো তৈরির অনুমতি দেয় রাজ্য। যেখানে ঠাঁই পাওয়ার কথা ছিল এনএসএন-এর। কিন্তু কথা রাখেনি সিমেন্স। উল্টে তারা ভাড়া নিচ্ছে সংস্থার কাছ থেকে। কর্মীদের দাবি, চুক্তি মাফিক জমি নিয়ে রাজ্য সিমেন্সকে চাপ দিলে অবস্থা বদলাতে পারে। যদিও সরকারি সূত্রের প্রশ্ন, বেসরকারি কর্তৃপক্ষ সংস্থা বন্ধ করতে চাইলে, রাজ্য কী করবে। তবে চালু থাকলে সুবিধা দেবে তারা।
কর্মীদের অভিযোগ, প্রথম থেকেই নোকিয়া ও সিমেন্স, দু’পক্ষের কাছেই ব্রাত্য ছিল এনএসএন-এর কলকাতা প্রকল্প। যৌথ উদ্যোগটি তৈরির পরেই প্রকল্প থেকে কার্যত হাত ধুয়ে ফেলে সিমেন্স। আর নোকিয়ার নজর ছিল কলকাতায় নয়, চেন্নাইয়ে বিপুল লগ্নিতে তৈরি এনএসএনের দ্বিতীয় কারখানায়। অথচ সিমেন্সেরই জমিতে কারখানা হওয়ায়, কলকাতায় সংস্থার উৎপাদন খরচ ছিল সব থেকে কম। কিন্তু কারখানা ঘিরে কোনও পরিকল্পনাই তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ।
১৯৮৭ সালে বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প গড়ার লক্ষ্যে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সরকার জার্মান বহুজাতিক সিমেন্স ইন্ডিয়াকে জলের দরে ১১ একর জমি দেয়। ওয়েবেলের সঙ্গে জোট বেঁধে সিমেন্স টেলিপ্রিন্টার, ইপিএবিএক্স-এর মতো যন্ত্র তৈরি শুরু করে। পরে ওয়েবেল সরে যায়। ২০০০-এ মালিকানা সিমেন্স ইন্ডিয়ার হাত থেকে মূল সংস্থা সিমেন্স-এর কাছে যায়। নাম হয় সিমেন্স পাবলিক কমিউনিকেশন্স। সাধারণ টেলিফোনের যন্ত্রপাতি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করত সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ২০০৬-’০৭ পর্যন্ত বার্ষিক ৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে তারা। কিন্তু সল্টলেকের এই কারখানার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে যায় এনএসএন তৈরির পরেই। |