তেহরানের বিরুদ্ধে সরাসরি রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের কাছে নালিশ করল ইজরায়েল। তাদের দাবি, হিজবুল্লাকে দিয়ে বিশ্ব জুড়ে ইজরায়েলিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালাচ্ছে ইরান। নয়াদিল্লি ও ব্যাঙ্ককে বিস্ফোরণ তারই উদাহরণ। পাশাপাশি, ইরানের মতোই বিস্ফোরণ-যোগ নিয়ে ভারতকে পাশে রাখতে এ দিন মুখ খুলেছেন ইজরায়েলের শক্তি ও জলসম্পদ মন্ত্রী উজি ল্যান্ডাও। তাঁর দাবি, “নয়াদিল্লির বিস্ফোরণ প্রমাণ করে ভারতে বিদেশি মদতপুষ্ট একাধিক জঙ্গি সংগঠনের ‘স্লিপার সেল’ সক্রিয় রয়েছে। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে আমরা তার শিকার হলেও, ভারতকে একাধিক বার তার ‘ফল’ ভুগতে হয়েছে।”
কালই বিস্ফোরণ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে নয়াদিল্লির ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন ভারতে ইরানের রাষ্ট্রদূত মেহদি নাবিজাদে। তিনি জানিয়েছিলেন, ভারত-ইরান সম্পর্কের মধ্যে কোনও তৃতীয় দেশ ঢুকতে পারবে না। আর তেল আভিভ এ দিন জানিয়েছে, সন্ত্রাস ভারত-ইজরায়েল দু’দেশের কাছেই বড় সমস্যা। নয়াদিল্লিতে বিস্ফোরণের পর সন্ত্রাস রোধে দু’দেশের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই আরও তীব্র হবে। দোষীরা ধরা পড়বেই।
আগামী সপ্তাহে ভারতে আসছেন উজি। ইরানের বিরুদ্ধে বিবৃতির ‘যুদ্ধে’ ভারতকে পাশে টানতে তিনি এ দিন বলেন, “সন্ত্রাস রোধে নয়াদিল্লি-তেল আভিভ দীর্ঘদিন ধরে একযোগে লড়াই করছে। নয়াদিল্লির বিস্ফোরণে এই সম্পর্কে চিড় তো ধরবেই না, বরং দু’দেশই এর ফলে নতুন উদ্যমে লড়ার রসদ খুঁজে পাবে।” এই ফাঁকে ইরানকে ঘুরিয়ে এক হাত নিয়ে উজির হুমকি, “নয়াদিল্লি ও ব্যাঙ্ককে বিস্ফোরণের পিছনে জড়িতরা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তেই থাকুক, যে দেশই তাদের মদত দিক না কেন, আমরা তাদের খুঁজে বের করবই।”
তেহরানের বিস্ফোরণ-যোগ নিয়ে বাগ্যুদ্ধের পাশাপাশি, পরমাণু ‘শক্তি’ প্রদর্শনে ইরান যে ক্ষমতা ‘বাড়িয়ে’ দেখানোর চেষ্টা করছে, সে বিষয়ে এ দিন একযোগে মুখ খুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েল। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র এ দিন জানিয়েছেন, ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের সামনে দিন দিন কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ইরান। চাপের মুখে দেশের নাগরিকদের শান্ত করতেই এই ‘চমককে’ হাতিয়ার করেছে আহমদিনেজাদ সরকার। একই দাবি করেছেন ইজরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাকও। যদিও গত কালের ‘সাফল্যে’ উদ্বুদ্ধ তেহরান ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান সৈয়দ জিল্লিকে এক চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে পরমাণু শক্তি আলোচনা ফের শুরু করতে রাজি ইরান।
দুই ‘বন্ধু’ দেশের এই চাপানউতোরের মধ্যে পড়ে এ দিনও সাবধানী প্রতিক্রিয়া দিয়েছে নয়াদিল্লি। এক দিকে, দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈল রফতানিকারী ইরানের উপর ভারতের তেল নির্ভরতা সর্বজনবিদিত। অতীতে একাধিক বার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ভারতকে তেল সরবরাহ বন্ধ করেনি তেহরান। ‘ঠাণ্ডা লড়াই’ পরবর্তী অধ্যায়ে যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। আবার, সাম্প্রতিক কালে সীমান্ত পারের সন্ত্রাস রোধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নয়াদিল্লিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, উপকরণ-সহ দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক সাহায্য করেছে ইজরায়েল। এ দিন ইজরায়েলের রাষ্ট্রসঙ্ঘে নালিশ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী বলেন, “ইরান সম্পর্কে ভারতের অবস্থান খুব স্পষ্ট। নয়াদিল্লির বিস্ফোরণের তদন্তের সঙ্গে ভারত-ইরান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে সব দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় নয়াদিল্লি।”
পুলিশের অবশ্য দাবি, ব্যাঙ্ককে বিস্ফোরণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নয়াদিল্লি, তিবিলিসি-র মতোই এখানেও ইজরায়েলি দূতাবাস কর্মীদেরই নিশানা করা হয়েছিল। আলাদা করে কোনও বিস্ফোরণের উদ্দেশ্য ছিল না। এবং তা করা হয়েছিল নয়াদিল্লির মতো ‘ম্যাগনেটিক স্টিকি বম্ব’ দিয়েই। একই দাবি কাল করেছিলেন তাইল্যান্ডে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইৎঝাক সোহম। যদিও, বিস্ফোরণে ইরানি মদতে পুষ্ট হিজবুল্লার ‘হাত’ থাকার বিষয়ে এখনও প্রমাণ মেলেনি বলে জানান তাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউসাক সসিপ্রফা। ব্যাঙ্কক বিস্ফোরণে তৃতীয় সন্দেহভাজন ইরানি কাল মালয়েশিয়ায় ধরা পড়ার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে তাই সরকার। তবে দিল্লি বিস্ফোরণের তদন্তে এখনও তেমন অগ্রগতি নেই বলে জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আপাতত নয়াদিল্লির খান মার্কেট অঞ্চলের পাবলিক বুথ থেকে বিস্ফোরণের ঠিক আগে ও পরে করা ১১৫টি আন্তর্জাতিক কলের খুঁটিনাটি পরীক্ষা করছে দিল্লি পুলিশ। যার বেশির ভাগই করা হয়েছিল ইরান, লেবানন-সহ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে। |