পাশবইয়ে সিলমোহর দিয়ে ‘তছরুপ’ ডাকঘরে
ডাকঘর টাকা জমা নিয়েছে। সিলমোহর মেরে দিয়েছে পাশবইয়ে। মাসে-মাসে সুদও আসছিল।
হঠাৎ গ্রাহকেরা শোনেন, কোনও টাকাই ডাকঘরে জমা পড়েনি। জানলার ও পার থেকে সব টাকা হাতিয়ে সরে পড়েছেন খোদ পোস্টমাস্টার! কম টাকা নয়, ছ’বছর ধরে অন্তত লাখ পঞ্চাশেক তো হবেই। পুলিশের অনুমান, জালিয়াতির অঙ্ক কোটিও ছাড়াতে পারে।
বর্ধমানের মঙ্গলকোটে নতুনহাট উপ-ডাকঘরের এই ঘটনা হয়তো আরও কিছু দিন চাপা থাকত, যদি না গত ৫ নভেম্বর সুন্দর বৈরাগ্য নামে এক এজেন্ট গলায় দড়ি দিতেন। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি কার্যত করণিকের কাজ সামলে এসেছেন এবং তাঁকে দলে টেনেই তৎকালীন পোস্টমাস্টার সুনীলকুমার মাঝি তছরুপের কারবার ফেঁদে বসেছিলেন বলে পুলিশের অনুমান। সন্দেহের তালিকায় আছে আরও কিছু নামও। ভাতার মুখ্য ডাকঘরের পরিদর্শক বুদ্ধদেব গোস্বামী বলেন, “২০০৬ থেকে নানা ভাবে গ্রাহকদের টাকা লুঠ করা হচ্ছে। দফতরের অন্য কর্মীরাও জড়িত বলে আমাদের সন্দেহ।”
সিলমোহর দেওয়া পাশবই। নিজস্ব চিত্র
সুন্দরবাবুর মৃত্যুর পরে বেশ কিছু গ্রাহক ডাকঘরে খোঁজ নিতে গিয়ে শোনেন, তাঁদের নামে কোনও টাকা জমা পড়েনি। ডাকঘরের খাতায় কিছু লেখাও হয়নি। সুনীলবাবুই তা লিখিত ভাবে গ্রাহকদের জানান। বর্ধমান আঞ্চলিক ডাকঘর, মঙ্গলকোট থানা ও বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানান গ্রাহকেরা। আঞ্চলিক ডাকঘর তদন্তে নামে। ইতিমধ্যে নতুনহাটের বাসিন্দা দেবব্রত কেশ ও তাঁর স্ত্রী অঞ্জনা কেশ কাটোয়া আদালতে মামলা রুজু করেন। ২৩ ডিসেম্বর সুনীলবাবুকে কাটোয়া মুখ্য ডাকঘরে বদলি করা হয়। ৩১ জানুয়ারি তিনি অবসর নেন। তবে তার আগেই, ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলকোট থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
দেবব্রতবাবুর অভিযোগ, “গত বছর ৭ ও ৯ জুলাই দু’টি ৫০ হাজার টাকার এক বছরের ‘টার্ম ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট’ খুলি। দু’দফায় এক লক্ষ টাকা সুনীলবাবুর হাতে দিয়েছিলাম। তিনিই আমাদের পাশবই দেন। কিন্তু নভেম্বরে মেয়ের বিয়ের জন্য ঋণের আবেদন করলে বলেন, আমাদের কোনও টাকা জমা নেই।” নতুনহাটের সনকা মণ্ডলের অভিযোগ, “২০১০ সালের ১৩ এপ্রিল থেকে গত বছর ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৬টি অ্যাকাউন্টে মোট তিন লক্ষ টাকা পোস্টামাস্টারের কাছে জমা দিই। পুরোটাই গায়েব।” নতুনহাটের মিষ্টি ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত দে ৪৯,৫০০ টাকা করে ১১টি অ্যাকাউন্টে এমআইএস করেছিলেন। প্রতি মাসে ৩৩০ টাকা করে সুদও পেয়েছেন। তিনি বলেন, “নভেম্বরে শুনি, কোনও টাকাই জমা নেই!”
এ ভাবে শ’খানেক গ্রাহকের টাকা খোয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার আঞ্চলিক দফতরে রিপোর্ট জমা দিয়ে বুদ্ধদেববাবু জানান, এখনও পর্যন্ত ২৬ জন গ্রাহক তাঁদের কাছে অভিযোগ করেছেন। টাকার পরিমাণ প্রায় ৫০ লক্ষ। মঙ্গলকোট থানার ওসি দীপঙ্কর সরকার বলেন, “অভিযুক্তের খোঁজ নেই।”
নিয়ম মেনে ‘ডাকঘরে’ জমা করা টাকা কি গ্রাহকেরা ফেরত পাবেন? বেঙ্গল সার্কেলের চিফ পোস্ট মাস্টার জেনারেল সরিৎকুমার চক্রবর্তী বলেন, “যদি গ্রাহকদের হাতে ডাকঘরের বৈধ পাশবই থাকে এবং টাকা জমা নিয়ে যথাযথ সিলমোহর দেওয়া হয়ে থাকে, তবে তাঁরা প্রাপ্য টাকা পাবেন। গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি।” পাশাপাশি, তাঁর অনুরোধ, “টাকা তোলার ফাঁকা ফর্মে সই করে এজেন্ট বা অন্য কাউকে দিয়ে রাখবেন না। তাতেই জালিয়াতি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.