কোনও রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে এলে প্রাথমিক কর্তব্য যেটা, অভিযোগ সেটাই করেননি চিকিৎসক। জীবিত যমজ শিশুকন্যাকে পরীক্ষা না করেই ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন কোচবিহার জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্ত্যবরত চিকিৎসক পম্পি ভট্টাচার্য। শোকস্তব্ধ বাড়ির লোকজন ফেরার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সেও উঠে বসেন। তখনই স্যালাইন খুলতে গেলে কেঁদে ওঠে শিশু দু’টি।
অতঃপর প্রবল হইচই। তখন ‘ভুল’ বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি মৃত ঘোষণা করে দেওয়া শিশু দু’টিকেই ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের কর্তারা ‘ভুল’ স্বীকার করে তদন্ত কমিটি গড়ার আশ্বাস দিলে বাড়ির লোকেরা শান্ত হন। পম্পিদেবী বলেন, “এ ব্যাপারে যা বলার সুপার বলবেন।” কোচবিহার হাসপাতালের সুপার কল্যাণ দে বলেন, “ভুলবশত এমন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পরে শিশু দু’টিকেই ভর্তি নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থাও হয়েছে। তারা এখন অনেকটা ভাল আছে।” |
বাড়ির লোকেদের অবশ্য প্রশ্ন, সুপার যেটাকে নিছক ‘ভুল’ বলছেন, তা তাঁদের মনে কতটা আঘাত দিয়েছিল, সেটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি বুঝতে পারবেন? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, এটা ওই চিকিৎসকের গাফিলতি। তাঁকে শো-কজ করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে হবে।” কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানিকলাল দাস বলেন, “তদন্ত রিপোর্টে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ারের প্রত্যন্ত চাপড়েরপাড় এলাকার বাসিন্দা, পেশায় কৃষিজীবী মনোরঞ্জন দাসের ছ’মাসের যমজ মেয়ে অঙ্কিতা ও অনিন্দিতার ক’দিন আগে ডায়েরিয়া হয়। তাদের আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। অ্যাম্বুল্যান্সে দুই মেয়েকে স্যালাইন দিয়ে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মনোরঞ্জনবাবু জেলা হাসপাতালে পৌঁছন।
তাঁর অভিযোগ, “জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পম্পি ভট্টাচার্য আমার মেয়েদের না ছুঁয়েই বলে দেন, ওদের মৃত্যু হয়েছে। ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ চাইলে তিনি জানান, সে ক্ষেত্রে ময়না-তদন্ত করাতে হবে। কিন্তু হাসপাতালেরই কিছু কর্মী আমাদের ওই ঝামেলায় না গিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতেই চালক স্যালাইন খুলে নিতে বলেন। আর তা খোলার সময় হঠাৎই বাচ্চারা কেঁদে ওঠে।” সঙ্গে সঙ্গে শিশু দু’টিকে নিয়ে তাঁরা ফের জরুরি বিভাগে যান।
হাসপাতাল সুপার জানান, যে কাউকে মৃত ঘোষণার আগে স্টেথোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। নাড়ি, হৃদপিণ্ড কাজ করছে কি না, তা-ও দেখতে হবে। প্রয়োজনে ইসিজি করে পর্যবেক্ষণের পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে হয়। সুপারের কথায়, “এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা নিয়ে পম্পিদেবীর সঙ্গে কথা বলেছি। গাফিলতির অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে।”
এই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের মন্তব্য, “চিকিৎসক শিশু দু’টির গায়ে হাত না দিয়েই মৃত ঘোষণা করে থাকলে তা অবশ্যই গুরুতর অপরাধ। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে রিপোর্ট চাইব। ওই পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে তা-ও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।” |