নিজস্ব সংবাদদাতা • চন্দননগর |
শিক্ষাক্ষেত্রকে দলতন্ত্র মুক্ত করার ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ, তাঁর দলের বিধায়ককেই কলেজের পরিচালন সমিতিতে সরকারি প্রতিনিধি করে পাঠানো হয়েছে। সরকারি এই সিদ্ধান্তে ‘দলতন্ত্রের ছায়া’ দেখা যাচ্ছে অভিযোগে বুধবার দিনভর চন্দনগরের খলিসানি কলেজের গেটে বিক্ষোভ-অবরোধ করলেন পড়ুয়ারা। নেতৃত্বে তৃণমূলেরই ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)।
টিএমসিপি-র কলেজ শাখার সভাপতি পিঙ্কু শর্মার অভিযোগ, “এই কলেজে দলের ঘোষিত নীতির বিরুদ্ধেই কাজ করা হল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, কোনও ভাবেই তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে দলতন্ত্র বরদাস্ত করবেন না। কিন্তু আমাদের কলেজে সেই নীতি লঙ্ঘিত হয়েছে। সে জন্যই কোনও পতাকা ছাড়াই সব সংগঠনের পক্ষ থেকে এ দিন বিক্ষোভ করা হয়।” বস্তুত, টিএমসিপি-র নেতৃত্বে এ দিনের বিক্ষোভে এসএফআই এবং ছাত্র পরিষদও সামিল হয়। সকাল ১০টা থেকে কলেজের গেটে রীতিমতো বেঞ্চ পেতে বসে পড়েন ছাত্রছাত্রীরা। গেট থেকে শিক্ষকেরা ফিরে যান। পঠন-পাঠন লাটে ওঠে। |
চন্দননগর খলিসানি কলেজে ছাত্র বিক্ষোভ। ছবি: তাপস ঘোষ |
সম্প্রতি ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন চন্দননগরের তৃণমূূল বিধায়ক অশোক সাউ। এ কথা জানতে পেরেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ছাত্রছাত্রীরা। প্রসঙ্গত, ওই পদে চন্দননগরের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক জয়দেব কোলের নাম অর্ন্তভুক্তির জন্য শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয় সম্প্রতি। কিন্তু জয়দেববাবু মনোনীত হননি।
এ দিনের বিক্ষোভে সামিল হওয়া ওই কলেজের ছাত্র পীযূষ মুদি, বিশ্বজিৎ দে, জয়রাম দাসেরা বলেন, “কলেজে সরাসরি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি থাকলে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা থেকেই যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে আমরা সমর্থন করি।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনিন্দ্য ভট্টাচার্যও বলেন, “আমরা চাই, কলেজে গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিনিধি মনোনীত করা হোক। উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হোক চাই না।”
জয়দেববাবুর নাম প্রথমে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের তরফেই বিবেচনা করা হয়। চন্দননগর পুরসভার মেয়র তৃণমূলের রাম চক্রবর্তী বলেন, “দলীয় সাংসদ রত্না দে নাগ এক জন শিক্ষাবিদের নাম ওই কলেজের সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে ঠিক করার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। জয়দেববাবু সর্বজন শ্রদ্ধেয়। সেই কারণে আমি তাঁর নাম বিবেচনার জন্য পাঠাই। কিন্তু তাঁকে ওই কলেজের পরিচালন সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি।” তবে রামবাবু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “দল যাঁকে ঠিক করেছে, তাঁকে নিয়ে আমি দ্বিমত নই।” কলেজে ‘দলতন্ত্রের’ সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন অশোকবাবু। তিনি বলেন, “বিধায়ক হিসেবে কলেজে কোনও দলের প্রতিনিধিত্ব আমি করছি না। নিরপেক্ষ ভাবে সকলের জনই কাজ করব। দল আমাকে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দিলে আমার কী করার থাকতে পারে?” কলেজের অধ্যক্ষ নীপঙ্কর হাজরা বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের জেরে আমরা কলেজে ঢুকতে পারিনি। কোনও কাজ হয়নি। পড়ুয়াদের প্রতিবাদের কথা শিক্ষা দফতরে জানাব।” |