ছোটবেলা থেকে এক সঙ্গে বড় হয়ে ওঠা। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এক সঙ্গেই পড়া। সহপাঠী তো বটেই, দু’জনে ঘনিষ্ঠও বন্ধুও। সেই বন্ধুর হাতেই যে বাবা ‘খুন’ হয়ে যাবেন, এখনও ভাবতে পারছেন না সোনামণি অধিকারী। সেই বন্ধু প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের তাই ‘চরম শাস্তি’ চান মালদহ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সোনামণি।
সোনামণির বাবা, পেশায় কৃষিজীবী গোপাল অধিকারীর মৃত্যুর খবর গাজল থানার গারাধোল গ্রামে চাউর হতেই প্রসেনজিৎ-সহ চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ফুঁসছেন গ্রামের বাসিন্দারাও। প্রেমে ‘প্রত্যাখ্যাত’ হয়ে গোপালবাবুকে লাঠি, উইকেট দিয়ে পেটানো ও হাঁসুয়ার কোপে খুন করার অভিযোগ উঠেছে প্রসেনজিৎ, তাঁর ভাই চিরঞ্জিৎ, কাকা সুশান্ত বিশ্বাস ও খুড়তুতো ভাই রমেনের বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম গোপালবাবু রবিবার মারা যান কলকাতার নার্সিংহোমে।
সোনামণি অধিকারী |
গাজল থানা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ডাঙন নদীর ধারের গারাধোল গ্রাম। নদীর ধারে গোপালবাবুর বাড়িতে সোমবার গিয়ে দেখা গেল, পড়শিদের জটলা। গোপালবাবুর স্ত্রী সাবিত্রীদেবী ঘন ঘন জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। কাঁদতে কাঁদতে সোনামণি বললেন, “ছোটবেলা থেকে আমি আর প্রসেনজিৎ একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি। ওকে বন্ধু হিসাবেই দেখতাম। একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় ও আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি প্রত্যাখ্যান করি। কথা বলাও বন্ধ করে দিই।” তাঁর অভিযোগ, “এর পর থেকে আমি যখনই কলেজে যেতাম তখন ও আমার সাইকেল ধরে টানাটানি করত। নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত। সোমবার সকালে আমার মোবাইল কেড়ে নেয় প্রসেনজিৎ। বাবা ওদের বাড়িতে গিয়ে ওকে বকাবকি করেন। কিন্তু এত ছোট্ট কারণে প্রসেনজিৎ যে ওর ভাই, কাকাকে
নিয়ে আমার বাবাকে মেরে ফেলবে ভাবিনি! আমি ওদের সবার চরম শাস্তি চাই।”
কাছেই বাড়ি প্রসেনজিতের। তাঁর মা কল্পনা বিশ্বাসের দাবি, “প্রসেনজিতের সঙ্গে মেলামেশা সোনামনির বাড়ির লোক কোনও দিন মেনে নিতে পারেননি। সোমবার আমার বড় ছেলে প্রসেনজিৎ ওদের বাড়ির পাশ দিয়ে ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছিল। সেই সময়ে সোনামনির বাবা ওকে ডেকে মারধর করেন।” এর পরেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভাই চিরঞ্জিৎকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে সোনামনির বাবা-মায়ের উপরে প্রসেনজিৎ চড়াও হন করে বলে কল্পনাদেবীও শুনেছেন। তাঁর কথায়, “সোনামনির বাবা মারা যাবেন, ভাবতে পারিনি। বড় ছেলে পর দিনই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। ছোট ছেলে আর বাকিরা পালিয়ে গিয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, এখন গোটা গ্রাম তাঁদের একঘরে করে দিয়েছে। বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে গ্রামছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। গ্রামবাসীরা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমরা বলেছি, অভিযুক্তেরা কোনও ভাবেই গ্রামে ঢুকতে পারবে না।”
প্রসেনজিৎ আপাতত জেল হাজতে। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। গ্রামবাসীদেরও জানিয়েছি, দোষীরা সাজা পাবেই। তবে এলাকায় অশান্তি না ছড়ানোর ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।” |