|
|
|
|
আমরি-কর্তাদের জামিনের আর্জি |
|
এখনও কেন জেলে রাখা দরকার,
প্রশ্ন হাইকোর্টের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
আমরি-অগ্নিকাণ্ডের দু’মাস পরেও ওই হাসপাতালের কর্তাদের জেলে আটকে রাখার কী প্রয়োজন, রাজ্য সরকারের কাছে তা জানতে চাইল কলকাতা হাইকোর্ট।
সোমবার আমরি-কাণ্ডে ধৃত ওই হাসপাতালের ডিরেক্টরদের জামিনের আবেদনের শুনানি চলাকালীন এই প্রশ্ন তোলে বিচারপতি অসীম রায় এবং বিচারপতি তরুণ গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায় জানান, জামিনে মুক্তি পেলে অভিযুক্তেরা সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। তবে সরকারের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়নি ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতিরা বলেন, সাক্ষীদের পরিচয় কোথাও প্রকাশ্যে নথিভুক্ত নেই। অভিযুক্তেরা তাঁদের সন্ধান কী করে পাবেন?
হাইকোর্টে আমরি-কর্তাদের জামিনের আবেদনের শুনানি আজ, মঙ্গলবারও চলবে। ধৃতদের তরফে জামিনের আবেদন জানিয়ে আইনজীবী বলাই রায় বলেন, “লেভেল ক্রসিং-এ গেট বন্ধ করার দায়িত্বে এক কর্মী থাকেন। তিনি গেট বন্ধ না-করায় দুর্ঘটনা ঘটলে কি ইঞ্জিন চালককে দায়ী করা হবে?” বলাইবাবুর বক্তব্য, ডিরেক্টররা হাসপাতাল পরিচালনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে তাঁদের গাফিলতি থাকতে পারে। কিন্তু দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা কোথায়? তাঁর কথার বিরোধিতা করে সরকারি আইনজীবী বলেন, “অভিযুক্তদের নির্দেশেই আমরির কাজকর্ম চলত। হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে এত মানুষের মৃত্যুর জন্য তাঁরাই দায়ী। একে গাফিলতি বললে কম বলা হয়।”
আমরি-কর্তাদের আইনজীবীরা বারবার আদালতে বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের পর তদন্তের স্বার্থে তাঁরা আত্মসমর্পণ করেছিলেন। ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। আমরির ডিরেক্টরদের গ্রেফতার করার যৌক্তিকতা নিয়ে এক সময় প্রশ্ন তুলেছিল বণিকসভা ফিকি। তাদের তরফেও বলা হয়েছিল, ধৃতেরা হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজকর্মে যুক্ত ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বণিকসভার এই প্রশ্নের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে বলেছিলেন, আইন আইনের পথেই চলবে, আমরি-কাণ্ডের অভিযুক্তদের রেয়াত করার প্রশ্ন নেই।
পুলিশ পক্ষপাতদুষ্ট ভাবে আমরি কর্তাদের গ্রেফতার করেছে বলেও আদালতে অভিযোগ করেছিলেন তাঁদের আইনজীবীরা। তখনও আমরির দুই চিকিৎসক ডিরেক্টর মণি ছেত্রী এবং প্রণব দাশগুপ্তকে গ্রেফতার করা হয়নি। ক’দিন পরে মণি ছেত্রীকে জামিন দেওয়া নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে। প্রশ্ন রয়েছে আমরির পরিচালন বোর্ডের সরকারি প্রতিনিধিকে গ্রেফতার না-করা নিয়েও।
এ দিনই আলিপুর আদালতে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে আমরি-কর্তা রাধেশ্যাম অগ্রবালের জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টে রাধেশ্যামবাবুর জামিনের আবেদনের শুনানি চলায় আলিপুর আদালতে তাঁর আইনজীবীরা জামিনের আবেদন জানাননি। তাঁর আইনজীবীরা আদালতে জানান, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩টেয় হাইকোর্টে শুনানি হবে। সে জন্য এখানে জামিনের আর্জি জানানো হচ্ছে না। বিচারক চৌধুরী হেফাজত করিম অভিযুক্তকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তবে অসুস্থতার জন্য রাধেশ্যামবাবুকে রাখা হবে এসএসকেএম হাসপাতালেই। অসুস্থ থাকায় এ দিন তাঁকে আদালতে হাজিরও করা হয়নি।
রাধেশ্যামবাবুর জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হয়। তাতে জানানো হয়েছে, ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। ওই আমরি-কর্তা চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আদালতে গেলে তাঁকে কমপক্ষে ৪-৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এতে তাঁর অসুবিধা হয়। সে জন্যই এ দিন হাসপাতাল থেকে আদালতে যেতে চাননি রাধেশ্যামবাবু। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অভিযুক্তের আদালতে হাজিরা না-দেওয়ার বিষয় নিয়ে সরকারি আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য বিচারককে বলেন, “অভিযুক্তের এই আবেদন মেনে নেওয়া উচিত হবে না। তা হলে ভবিষ্যতে জেল হেফাজতে থাকা অন্য অভিযুক্তরা একই কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির না-হওয়ার সুযোগ খুঁজবেন।” |
|
|
|
|
|