জাহাজ সারানোর জন্য বুকে আস্ত এক কারখানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভেসে ছিল একটি ‘লাইটার ভেসেল’ বা ভাসমান জেটি। জোয়ারের ধাক্কায় উত্তর হাওড়ায় সেই জেটি উল্টে কয়েক হাজার লিটার তেল গঙ্গায় পড়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনা ঘটে। তার পরে যত সময় যত গড়িয়েছে, ততই তেল ছড়িয়ে পড়েছে গঙ্গার বিস্তীর্ণ অংশে। এর ফলে গঙ্গায় ভয়াবহ দূষণের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদেরা।
উত্তর হাওড়ায় হুগলি ডক পোর্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের জেটির নীচের ডুবে থাকা অংশ ভেঙে ক্রমাগত জল ঢুকতে থাকে। রবিবার সকালে ভাসমান জেটির অর্ধেক ডুবে যায়। ওই জেটিতে থাকা প্রায় ১০ হাজার লিটার তেল গিয়ে পড়ে গঙ্গায়। |
গঙ্গার জলে ভাসছে তেল। নিজস্ব চিত্র |
অত তেল এল কোথা থেকে?
হুগলি ডক সূত্রের খবর, জাহাজ মেরামতির ওই ভাসমান জেটি দীর্ঘদিন ধরেই ডকে রয়েছে। জাহাজের ছোটখাটো মেরামতির জন্য ওই জেটির উপরে রয়েছে একটা কারখানা। ওই কারখানায় রাখা ছিল ১৬টি ওয়েল্ডিং মেশিন। সেই মেশিনে ছিল আট হাজার লিটার ‘ট্রান্সফর্মার অয়েল’। এ ছাড়া অন্য দু’টি ড্রামে ছিল দু’হাজার লিটার তারপিন তেল। জেটিটি গঙ্গায় অর্ধেক ডুবে যাওয়ায় ওয়েল্ডিং মেশিলগুলিও ডুবে যায়। জলে পড়ে যায় তেলের ড্রামগুলিও। ছড়িয়ে পড়ে তেল।
সোমবার দুপুরে হুগলি ডকে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার অধিকাংশ কর্মী ডুবন্ত জেটির কাছে ভিড় করেছেন। ডকের কর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৮৪ সালে এই ডক অধিগ্রহণ করার পরে তার উন্নয়নে কোনও পরিকল্পনাই করা হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মরচে পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে জেটির নীচের অংশ। শনিবার গঙ্গায় বড় জোয়ার এসেছিল। তার ধাক্কা সহ্য করতে পারেনি ওই জেটি। কর্মীদের ধারণা, নীচের লোহার প্লেট ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করে সে-দিনই। সোমবার সকালে তাঁরা কাজে এসে দেখেন, ভাসমান জেটির অর্ধেক গঙ্গায় ডুবে গিয়েছে আর জলে ভাসছে কালো তেল।
হুগলি ডকের তৃণমূল সমর্থিত কর্মচারী সমিতির অশোককুমার মণ্ডল বলেন, “কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কেউ ব্যবস্থা নেননি।”
এ দিন বিকেল পর্যন্ত গঙ্গায় এই দূষণের কথা জানতই না রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। রাতে পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত বলেন, “পর্যবেক্ষকদল গিয়েছিল। তবে অন্ধকারে দূষণের মাত্রা ও চরিত্র বোঝা যায়নি। তেল বেশি পড়েনি। গঙ্গা থেকে তেল তুলে দিতে বলব হুগলি ডক কর্তৃপক্ষকে।” নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র জানান, ক্রমাগত জোয়ার-ভাটার ফলে তেল দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকবে এবং জলে মিশেও যাবে অনেকটা। কী ক্ষতি হতে পারে? কল্যাণবাবু জানান, তেলের বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য জলে মিশে মাছ এবং অন্যান্য জলজ জীবের ক্ষতি করবে। তেল যদি জলের উপরে আস্তরণ তৈরি করে ফেলে, তা হলে জলে অক্সিজেন মেশার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। সেটাও জলের জীববৈচিত্রের পক্ষে ক্ষতিকর।
হুগলি ডকের অধিকর্তা সহদেব সাহার দাবি, “গঙ্গায় বেশি তেল পড়েনি। কারণ ওই জেটিতে বেশি তেল ছিল না। আমরা ডিরেক্টর অফ মেরিন লাইফ, পুলিশ, বন্দর-কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য জায়গায় খবর দিয়েছি।” |