‘জীবন ফিরে পাবি’ (৩০-১) শিরোনামে রবীন্দ্র সরোবরে সচেতনতা দৌড়রত কলকাতার মেয়র, রাজ্যের পুরমন্ত্রী ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনের ছবি দেখলাম। ‘জীবন ফিরে পাবি’-র বিপরীত চিত্রটা যে ভাবে প্রতি দিন আমাদের সহ্য করতে হচ্ছে, তা আর না-লিখে পারলাম না। বস্তুটি হল কলকাতার রাস্তায় ছড়ানো কুকুরের বিষ্ঠা। রাস্তার কুকুরের নির্বীর্যকরণ কর্মসূচির কী অবস্থা কে জানে! |
আরোগ্য নিকেতন? এ রাজ্যের হাসপাতালগুলি যেন অভিভাবকহীন। |
কিন্তু, কলকাতার রাস্তায় এই জীবটির জন্মহারের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেই চলেছে। কোনও অজ্ঞাত কারণে পুরসভার ঝাড়ুদারেরা কুকুরের বিষ্ঠা সাফ করেন না। প্রতি সকালে এর মধ্য দিয়েই সন্তর্পণে গন্তব্যস্থলে যেতে হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলন্ত প্রাইভেট গাড়ি, ট্যাক্সির চাপে সেগুলির যে দশা হয় তা অবর্ণনীয়। এক বিদেশিনি প্রতিবেশী কলকাতার গলি ও বাইলেনকে ‘কেনেল টয়লেট’ বলে বর্ণনা করেন। যদি আগের মতো গঙ্গা জলে রাস্তা ধোয়ার ব্যবস্থা থাকত, তবে কলকাতা শহরের গলি ও রাস্তা এই ভাবে নর্দমায় পর্যবসিত হত না।
সমীর ঘোষ। কলকাতা-২৯
|
বিপ্লব দাস ‘দুটি ঘটনা একটি মন্তব্য’ (২-২) প্রসঙ্গে ওঁর চিঠিতে লিখেছেন, ‘...জারোয়াদের সংখ্যা...২৫০টি...’। পাঠকদের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখা যাক, জারোয়ারা এখন সংখ্যায় ৩৭৫ (সূত্র: ২০১০-এ লোকসভায় পেশ করা গৃহ রাজ্যমন্ত্রীর রিপোর্ট), যার সমর্থন আমরা পাই পোর্টব্লেয়ার থেকে প্রকাশিত সরকারি ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি টেলিগ্রামস’-এও।
রাজধানী শহর পোর্টব্লেয়ার (দক্ষিণ আন্দামান) থেকে শুরু করে প্রায় ‘সম্পূর্ণ বাঙালি অধ্যুষিত জনপদ ডিগলিপুর’ (উত্তর আন্দামান) পর্যন্ত যে প্রধান রাস্তাটি গেছে তার নাম ‘আন্দামান ট্রাঙ্ক রোড’ (এটিআর)। ‘গ্রেট’ শব্দটি এর সঙ্গে যুক্ত হবে না। ন্যূনধিক এই ৩০০ কিমি বিস্তৃত এ টি আর-এর মাত্র ৭৫ কিমি জায়গা জুড়ে আছে জারোয়া রিজার্ভ অঞ্চল। আর আছে চারটি মাত্র চেকপোস্ট। প্রথমে জিরকাটাং চেকপোস্ট (যার পরবর্তী ৫০ কিমি জুড়ে জারোয়া রিজার্ভ), দ্বিতীয়টি মিডল স্ট্রেট চেকপোস্ট, তৃতীয় কদমতলা ৩ নং চেকপোস্ট (যার পরবর্তী কমবেশি ২৫ কিমি জুড়ে জারোয়া রিজার্ভ। এবং ষেটি কদমতলা ১৫ নং চেকপোস্ট। এই চেকপোস্টগুলিতে জেলা প্রশাসন কর্তৃক জারি করা পারমিট ছাড়া অন্য কোনও গাড়ি যাচ্ছে কি না, এটুকু চেক হতে দেখেছি। তার বেশি কিছু নয়।
আর জারোয়ারা সভ্য না হোক, এটা তো আন্দামান প্রশাসন তথা ভারত সরকারের ঘোষিত নীতি। এতে জনসাধারণ বা পর্যটন সংস্থার কোনও হাত নেই। জঙ্গলে অসভ্য হয়ে বসবাস করতে জারোয়াদের জন্য রয়েছে আন্দামান প্রশাসনাধীন ‘আদিম জনজাতি বিকাশ সমিতি’। এই সংস্থার মাধ্যমে ২০০৯-’১০ সালে জারোয়াদের জনপ্রতি ভারত সরকার ব্যয় করেছে ১৪,৬৮০ টাকা ৭৬ পয়সা (সূত্র: লোকসভায় দেওয়া গৃহ রাজ্যমন্ত্রীর রিপোর্ট)।
আসলে, জারোয়া সম্পর্কিত গোটা ব্যপারটিই খুব স্পর্শকাতর এবং এ বিষয়ে বহু তথ্য দেওয়া যেতে পারে, যা সীমিত পরিসরে সম্ভব নয়। তবে, চাঞ্চল্যকর যে-তথ্যটি এখানে উল্লেখযোগ্য তা হল ‘বাফার জোন’। এই বাফার জোন-এর মোদ্দা মানে হল, এই ৩৭৫ জন মাত্র জারোয়ার জন্য তৎ-পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী ৩১টি গ্রামের প্রায় ৭,০০০ হেক্টর রেভিনিউ জমি ও ২২,০০০ জন সভ্য মানুষের ভবিষ্যৎ আজ অন্ধকারময়। আর সবচেয়ে বড় কথা হল এর প্রায় নব্বই শতাংশই দেশভাগোত্তর উদ্বাস্তু বাঙালির সমৃদ্ধিময় জীবনযাপন।
অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস। প্রেমনগর, পোর্টব্লেয়ার, দক্ষিণ আন্দামান |